সাতক্ষীরা শহরে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা : হুমকীর মুখে পরিবেশ
সাতক্ষীরা শহর ডাস্টবিনের কারণে পচা দূর্গন্ধ শহরে পরিনত হয়েছে । সাধারণ লোকজন বলছে, এর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে আর বাড়ছে রোগ জীবানু। আর পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের জনবলও সরঞ্জমাদির অভাব আছে। সে কারণে ইচ্ছা থাকলেও তারা শহর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছে না। আবার আইলা ও সিডরের পর শহরের লোক সংখ্যাও বেড়ে গেছে। সরেজমিনে ঘুরে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে।
শহরের পাকাপুলের পশ্চিম পাশে হোটেল কর্মচারী লিপু, মোটর মেকানিক মহিদুল,দোকানদার হান্নান জানান, ‘সকালে খাল ধারের রাস্তা দিয়ে মানুষ হাটতে বের হয়। দূর্গন্ধের জন্য হোটেলের উত্তর পাশে রাস্তা ধারের ডাস্টবিন বন্ধ করে
দিয়েছে পৌরসভা। কিন্তু এলাকার লোকজন পচাবাসি খাবারও ময়লা আবর্জনা ফেলছে ডাস্টবিনের পাশে। ফলে এই রাস্তা দিয়ে যেতে দারুন কষ্ট পাচ্ছে
পথচারিদের। এরপর প্রাণ সায়েরের খালের পশ্চিম পাশে দেখা যায়, এক থেকে দেড়শ গজ পরপর আছে ডাস্টবিন । এসব ডাস্টবিনের একই অবস্থা। কুকুর গুলো ডাস্টবিনের উচ্ছষ্ট খাচ্ছে আর টানা টানি করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে দূর্গন্ধ ।’
পলাশপোল বউ বাজারে আসা গৃহবধু নাজমা খাতুন ও নাছিমা খাতুন জানান, ‘এ এলাকায় ডাস্টবিনে প্রচন্ড দূর্গন্ধ। দূর্গন্ধের কারণে বউ বাজারে আসতে অনেক সমস্যা হয়। ডাস্টবিন সংলগ্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাংস ও মাছ । আর ওই মাছ মাংসের উপর মশা মাছি বসে জীবানু ছড়াচ্ছে।’
তারা আরো জানান,‘বাস টারমিন্যালে রাস্তার উপরে ফেলা হয়েছে পচা ময়লা আবর্জনা। মানুষ দূর্গন্ধ নীরবে সহ্য করে পথ চলছে।’
সাতক্ষীরা বাসমালিক সমিতির আহবায়ক অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ জানান, ‘তারা অনেক বার পৌরসভাকে বলেছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’
তিনি আরো জানান, ‘সদর হাসপাতালের ভিতরে পশ্চিম পাশে ও উত্তর পাশে রোগীর স্বজনরা হেটে যেতে পারছে না। দুই পাশেই আছে দুটি ডাস্টবিন । আর ওই ডাস্টবিনে প্রায় দেখা যায় গরু ময়লা খাচ্ছে।’
ভূমিহীন নেতা আব্দুস ছামাদ, কাপড় ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জানান, ‘শহরের রাজ্জাক পার্কের ভিতরে শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের কবরের পাশ দিয়ে এখন আর যাওয়া যায় না। কবরের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে ঘুটো করে রেখেছে ।’
জর্জ কোট এলাকার কম্পিউটার দোকানদার প্রিন্স ও হোটেল ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জানান, ‘কোর্টের সামনে রাস্তার ধারে রাত ১২টার পর মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখে যায়। এসব থেকেতো দুর্গন্ধ ছড়াবেই। কোটের সামনে রাস্তার ধারে আগে একটা ডাস্টবিন ছিল। সেটা কে বা কারা ভেঙ্গে দিয়েছে।’
তারা আরো জানান,‘শহরের সঙ্গীতা সিনেমা মোড়ে ব্যাংকের সমানে থেকে হাটের মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ময়লা ফেলে রেখেছে। অথচ হাটের মোড়ে রয়েছে ময়লা ফেলার বড় একটা ডাস্টবিন।’
স্থানীয়রা জানান,‘শহরের পাকা পোল থেকে শুরু করে বড় বাজার পর্যন্ত প্রাণ সায়েরের খালে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে খাল প্রায় ভরাট হয়ে গেছে ।
বেশ কিছু দিন আগে এই খাল কাটা হয়েছে । প্রতিনিয়ত খালের ভিতরে বাজারের ময়লা ফেলার কারনে, খাল এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে। আবার ময়লা পচে খালের পানি দূষিত হয়েছে। এলাকার লোকজন দু:খ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে জানালেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলে প্রাণ সায়েরের খাল আবার প্রাণ ফিরে পেত। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে খাল হয়েছে ডাস্টবিন।’
পলাশপোল এলাকার নিকিরি পাড়ার সেলিম, রায়হান, লুৎফর জানান, ‘তাদের এলাকায় ডাস্টবিন আছে। একদিন পরপর পৌরসভার লোকজন এসে ডাস্টবিন পরিস্কার করে নিয়ে যায় । সমস্যা হল শহরের মধ্যে অসংখ্যা হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের পানি সরানোর কোন পথ নেই । নেই কোন ডাস্টবিন।’
শহরের আমতলা এলাকার শাহিন ,রসূলপুর এলাকার মাসুম, কুকরালীর শহিদুল জানান, ‘পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের একই অবস্থা । পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় মানুষ যত্রতত্র পচা বাসি ময়লা আবর্জনা ফেলাচ্ছে ।’
পৌর সভায় পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, ‘পৌরসভা ডাস্টবিন আছে একশ ১০টি। তার মধ্যে সচল আছে ৫০/৬০ টি। এই ডাস্টবিন পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাদের লোকবল আছে ২৫ জন, ৩টি ট্রাক, ২টি আলম সাধু ,ট্যানেচফার স্টেশন আছে,২টি হাটের মোড়ে. ডামপিন স্টেশন ১াট বিনের পোতায় । আর ডাস্টবিন সংলগ্ন এলাকায় ল্যাম্পপোস্ট না থাকার কারণে রাতের বেলায় পরিস্কার করতে পারছে না, শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে তাদের আরও ৩টি ট্রাক লাগবে । পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।’
জেলা নাগারক কমিটির আহরায়ক প্রভাষক আনিসুর রহিম জানান, ‘পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে । কিন্তু নাগরিক সচেনতা সৃষ্টি ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।’
সদর হাসপাতালের সাবেক সিভিল সার্জন এবাদুল্লাহ জানান, ‘দুর্গন্ধের কারণে পানি বাহিত , বাতাস বাহিত , চর্ম, এলার্জি, স্বাস কষ্টসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে।’
পৌর সভায় যেয়ে প্যানেল মেয়র ফারহাদিবা খান সাথীর কাছে জানতে চাইলে- তিনি এব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।’
পৌর মেয়র তাজকিন আহম্মেদ চিসতি জানান- ‘রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে সংশ্লিষ্ট পরিছন্নতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি। তারা যেন ঠিক মত কাজ করে। তাছাড়া আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ কমিয়ে দ্রুত ময়লা পরিষ্কার করে শহরকে পরিছন্ন রাখতে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন