সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্যসেবায় ধ্বস, ১৮কোটি টাকা লোপাটকারীদের বিচার দাবি
সাতক্ষীরায় চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক ধ্বস নেমেছে উল্লেখ করে নাগরিক সমাজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ডাক্তাররা সময় মতো হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। তারা নানা কৌশলে রোগীদের দালাল চক্রের মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে নিজের চেম্বারে চিকিৎসার নামে তাদের কাছ থেকে গলাকাটা ফিস আদায় করছেন। এসবের প্রতিকার দাবি করে সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ জেলা হাসপাতালের ১৮ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম লোপাটকারীদের চিহ্ণিত করে তাদের বিচার দাবি করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা তুলে ধরেন তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ আহবায়ক ফাহিমুল হক কিসলু। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুম, অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, নিত্যানন্দ সরকার, রওনক বাসার, আবেদার রহমান, সুধাংশু শেখর সরকার, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, পলাশ রহমানসহ কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন সদর হাসপাতালের এক্সরে মেশিন অকেজো, আলট্রাসোনো মেশিন অকেজো, ইসিজি মেশিন ভাল রেজাল্ট দেয় না। এমন নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তারা বলেন সরকার এই হাসপাতালের অনুকূলে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ তা ব্যবহারের অভাবে পড়ে থাকছে। এর জন্য যেসব ডাক্তার ও টেকনিসিয়ান দরকার তা এখানে নেই জানিয়ে তারা বলেন এর ফলে সাতক্ষীরার মানুষ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই হাসাপাতালের কিচেন ও টয়লেটে বিরাজ করছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এমন তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন অনেক সরকারি ডাক্তার ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক খুলে বসে আছেন। তারা সেখানে দরিদ্র রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন টেস্টের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দিনের পর দিন। এসব ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন এখানে প্রায়ই রোগীর মৃত্যু ঘটছে। অপরদিকে হাসপাতালে ব্যবহৃত সরঞ্জামের টেস্ট ভুল প্রমান করে তারা আরও বেশি ফায়দা লুটছেন। ডাক্তাররা তাদের প্রেসকিপশনে নির্দিষ্ট বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম লিখে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার এই হাল তুলে ধরে তারা আরও বলেন জেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে ২০১৭/২০১৮ অর্থ বছরে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সরকার তিনটি টেন্ডারে প্রায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এই টাকার বিনিময়ে ২৪ প্রকারের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন সাতক্ষীরার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান এইসব মালামাল ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্রয়ের নামে সমুদয় টাকা আগাম পরিশোধ করেছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। অথচ বাস্তবে এসব সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরা হাসপাতালে পৌছায়নি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বিষয়টি তদন্ত করতে এলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। মালামাল গ্রহনের জন্য নিযুক্ত সার্ভে কমিটি লিখিতভাবে যে রিপোর্ট দিয়েছেন বলে বলা হয়েছে তাতে তারা কোন স্বাক্ষর দেননি বলে তিন জন চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান, ডা. শরিফুল ইসলাম ও ডা. ফরহাদ জামিল তদন্ত কমিটির কাছে উল্লেখ করেছেন। এমনকি স্টোর কীপার জয়ন্ত সরকার এসব মালামাল বুঝে পাননি বলেও উল্লেখ করেছেন।
এতবড় ঘাপলার উল্লেখ করে বক্তারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন প্রকৃতপক্ষে মালামাল বুঝে নেওয়ার মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র লিখে তাতে সীল ছাপ্পর মেরে সরকারি কোষাগারের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। তারা এর সঙ্গে জড়িত সব রাঘর বোয়ালকে চিহ্ণিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা এবং সরকারি অর্থ লোপাটের প্রতিবাদ জানাতে ২৩ এপ্রিল তারা সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন। এই কর্মসূচিকে ভন্ডুল করে দুর্নীতিবাজদের রক্ষার লক্ষ্যে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকা লুন্ঠনকারীরা ভূমিহীন ঐক্য পরিষদ নামের একটি ভূয়া সংগঠন তৈরী করে একই স্থানে একই সময়ে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। তারা জানান সংঘাত সংঘর্ষ এড়াতে এই কর্মসূচি আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন- সাতক্ষীরার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ দুর্নীতিবাজদের কারনে এবং অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ফলে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এসব বিষয়ে তারা সাতক্ষীরা জেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরন করেছেন এবং দফায় দফায় কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার হালহকিকত তুলে ধরেছেন।
তারা অবিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসার সরঞ্জাম ব্যবহার, যথেষ্ট সংখ্যক ডাক্তার ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ এবং দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবি জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন