‘নির্বাচনে মনোনয়ন জনমতের ভিত্তিতে’
সাতক্ষীরায় নেতাদের ভাল হতে বললেন ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন- ‘রান্না ঘরে বসে মহিলারা আজ সাউথ আফ্রিকায় কথা বলে। ভিডিও কলও করেন। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এসব একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব। তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। তিনি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন রাজনীতি করেন।’
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি সমাবেশে জাতীয় সংগীত গেয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে সাতক্ষীরার সৈয়দ কামাল বখত সাকী, মমতাজ আহমেদ, এড. এন্তাজ আলী, স.ম আলাউদ্দিন, আবু নাসিম ময়নাসহ প্রয়াত নেতাদের স্মরণ করে আ.লীগের সেকেন্ড ইন কমান্ড ওবায়দুল কাদের সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্যে করে বলেন- ‘জনগণের কোন দোষ নেই, কোন সমস্যা নেই। সমস্যা আপনাদের। জনগণ যখন বিপদে পড়বে তখন আপনারা ঢাকায় থাকবেন এটি হবে না। প্রার্থী হতে চান ভালো কথা। কিন্তু আপনাদের চেহারা দেখে মনোনয়ন দেয়া হবে না। মনোনয়ন দেয়া হবে জনগনের রিপোর্টের উপরে। জনগন যাকে চায়বে আমরা তাকে মনোনয়ন দেবো।’
তিনি ঢাকামুখী নেতাদের হুশিয়ারী প্রদান করে বলেন- ‘৭/৮ ’শ মটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে, ব্যানার ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় কাজ করতে হবে। ঢাকায় গিয়ে চেহারা না দেখিয়ে এলাকার উন্নয়নে অংশ নেন। জনগনের হৃদয়ে অবস্থান নেন। জনগনই আপনাকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করবে। এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান। জনগনকে সাথে নিয়ে কাজ করেন। শুধু নির্বাচনের সময় কর্মীদের বাড়ি যাবেন। নির্বাচনের সময় মৃত নেতাকর্মীদের কবর জিয়ারত করবেন। এভাবে নেতৃত্ব চলে না।’
ছাত্রলীগের এক সময়ের বলিষ্ঠ এ নেতা আরো বলেন- ‘এমন অনেক কর্মী রয়েছে যাদের ঘরে বাজার করার মত টাকা নেই। অসুস্থ্য হয়ে ঘরে পড়ে আছে ঔষধ কেনার টাকা নেই। তাদের খোজ খবরও নেন না। এটা হবে না। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হতে পারে না। এমন নেতা সাতক্ষীরার জনগণের দরকার নেই। মনোনয়ন কাকে দেয়া হবে এটি একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাই বলতে পারেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন- ‘আওয়ামী লীগে কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান হবে না।’
নেতাকর্মীদের সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ‘ক্ষমতায় যখন না থাকবেন তখন ৫ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খোঁজ পাওয়া যাবে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন- ‘নির্বাচনে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে, কোন অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। জনগনের ভোটেই নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট দেখিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।’
প্রতিনিধি সভায় তিনি প্রশ্ন তোলেন- যখন হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হল তখন আওয়ামী লীগ নেতারা কোথায় ছিলেন? তাদেরকে জনগনের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন- ‘দলের নিবেদিত প্রয়াত নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা করুন এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ নেতাকর্মীদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন।’
মন্ত্রী আরও বলেন- ‘বিএনপি বিভিন্ন দেশে ৫০০ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত বলে খোদ আমেরিকা জানিয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে এই টাকা পাচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন- ‘আমরা দৃশ্যমান পদ্মা সেতুকে তুলে ধরতে পারবো। কিন্তু বিএনপি কি তুলতে পারবে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাদের গায়ে রয়েছে দূর্নীতির দুর্গন্ধ।’
তিনি বলেন- ‘আপনারা ব্যক্তির পক্ষে নয়, আওয়ামী লীগ ও নৌকার পক্ষে প্রচার অভিযান শুরু করুন। এ প্রচারাভিযানের পর নেত্রী কাকে মনোনয়ন দেবেন সেটা তিনি বুঝে নেবেন।’ যিনি জনমত তৈরীতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ‘এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন হবে জনমতের ভিত্তিতে’- যোগ করেন তিনি।
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন- ‘মরহুম জিয়াউর রহমান মৃত্যুকালে ভাঙা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি রেখে গিয়েছিলেন বলে তারা প্রচার করে। প্রকৃতপক্ষে এয়ারপোর্টের মাধ্যমে ৩০০ স্যুটকেসভর্তি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে।’
বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেতাকর্মীদের নামিয়ে দিয়ে বলেন- ‘যত সমস্যা এই মঞ্চে, জনগনের মধ্যে কোন সমস্যা নেই।’ তাদেরকে ভাল হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন- ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকালে আমি বহু নিরীহ নেতাকর্মীর কাছ থেকে টেলিফোন পেয়েছি। আপনারা সেসব চেহারা চেনেন।’ তিনি ঢাকায় যেয়ে চেহারা দেখানোর চেয়ে জনগনের কাছে যেয়ে চেহারা দেখাবার পরামর্শ দেন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন- ‘অসৎ নেতৃত্ব দিয়ে দল চলবে না। এসব অসৎ নেতৃত্ব দলের শত্রু মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা ঘরে থাকলে বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হবে না।’
তিনি সৎ নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠনের কাজ চালাবার আহ্বান জানান।
নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের পক্ষেই কাজ করতে হবে এমন পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন- ‘আওয়ামী লীগে অনেক আগাছা পরগাছা রয়েছে। দলে এইসব আগাছা পরগাছার দরকার নেই। তিনি বলেন, দল ভারী ও পকেট ভারী করার জন্য অসাধু নেতাকর্মীকে দলে টানবেন না। তোরন, গেট, ব্যানার, বিলবোর্ডে নাম ও ছবি ঝুলিয়ে এমনকি ৫ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিল করেও মনোনয়ন পাওয়া যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কাগজে লেখা নাম মুছে যাবে, পাথরে লেখা নাম মুখে যাবে, হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যাবে।’
তিনি জনগনের হৃদয় জয় করার আহবান জানান।
সকল ভেদাভেদ ভুলে কর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের এমপি।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সদস্য এসএম কামাল হোসেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক এমপি, সদর-২ আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রমুখ।
সমাবেশে দলটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম।
পরে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে হাতে হাত দিয়ে বিবাদমান দ্বন্দ্বের সমাপ্তি করিয়ে নতুন উদ্যামে কাজ করার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের এমপি।
বক্তব্যের শেষ সময়ে তিনি আরোও বলেন- ‘মুনছুর ভাই কই, নজরুল ভাই কই, আপনারা এদিকে আসেন। এই দেখুন তারা দু’জনে হাতে হাত রেখে এক হয়ে মিলে গেছে। সামান্য ভূল বোঝাবুঝি ছিল আজ এখন থেকে তারা এক হয়ে গেছে।’
সেতুমন্ত্রী নেতাদের উদ্দ্যেশে বলেন- ‘দলের মধ্যে কোনো সমস্য থাকলে আমাকে বলবেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন, তাদের বলবেন। যদি কাজ না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলবেন। তাই বলে ঘরের কথা নিয়ে চায়ের দোকানে বসে আলোচনা করা যাবে না। চায়ের দোকানে যদি বসে নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করেন, তাহলে বাহিরের শত্রুর প্রয়োজন নেই।’
এসময় ওবায়দুল কাদের সবার উদ্দেশে বলেন- ‘এখানে মুনসুর-নজরুল কেউই আলাদা নয়। দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। এরপরও যদি অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে নেত্রী ও দল কাউকেই ছাড় দেবে না। তাদেরকে দল থেকে সরাসরি বহিস্কার করা হবে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন