সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয় উঠেছে ঔষধি গুন সম্পন্ন বাসক গাছ
সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে ঘেরা বেড়া দেওয়ার কাজে বেশ জনপ্রিয় ঔষধি গুন সম্পন্ন বাসক গাছ। গ্রাম জুড়ে এর ছড়াছড়ি। এক ধরনের দুর্গন্ধের জন্য এর পাতায় গবাদি পশু মুখ দেয় না। ফলে সহজেই জমি ও বাড়ি ঘেরার কাজ চলে এই গাছ দিয়ে। অথচ দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে ঔষধি গুন সম্পন্ন এই বাসক উদ্ভিদের পাতা। গ্রামাঞ্চলে বাসক পাতার বেশ কদর রয়েছে। সর্দি কাশি সারাতে সবুজ বাসক পাতা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায় এ বিশ্বাস রয়েছে সবারই । কি এই পাতা যা মানুষের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে তা ছিলো ধারনার বাইরে।
সাতক্ষীরা সদর উপজলার ফিংড়ি গ্রামর গৃহবধূ বিউটি বেগম জানান, বাসক পাতা এখন তাদের কাছ থেকে ওষুধ কোস্পানি গুলি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এর ঔষধিগুন এতো বেশি যে এই পাতা দিয় তৈরি হচ্ছে কাশির সিরাপ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শষ্মা তরল করে নির্গম সুবিধা করে বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহ নিরাময় বেশ উপকারী।
তিনি আরা জানান, সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাসক উদ্ভিদ জন্মায় প্রচুর পরিমানে। ঘেরা বেড়ায় ব্যবহার করা এই পাতা ছিড়লে গাছ মরে যায় না। আবারও নতুন নতুন পাতা গজায়। সারা বছর চলে নতুন পাতা গজানো। ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলে হয়ে ওঠে নতুন গাছ। আর্দ্র ও সমতল ভূমিতে এই উদ্ভিদ জন্মায়। বিকট গন্ধের কারণে এতে ছত্রাক জন্মায়না। এমনকি পোকা মাকড়ও ধরে না।
ফিংড়ি ইউনিয়নের কাঁচাপাকা রাস্তার দুই ধারে ছয় কিলোমিটার এলাকা বরাবর রয়েছে বিপুল পরিমান বাসক উদ্ভিদ। এখানকার কমপক্ষে দশ হাজার বাসক গাছ ব্যবহৃত হচ্ছে জমির চারধারে কিংবা বাড়ির ঘেরা বেড়ায়। প্রতি বছর একশ’ টন সবুজ পাতা সংগ্রহ হচ্ছে এখান। এ থেকে পাওয়া যাছ প্রায় ২৬ টন শুকনা পাতা।
পানি উনয়ন বোর্ড প্রতিনিধি মো. শামীম আলম জানান, পানি উনয়ন বোর্ডের প্রকল্প গাল্ডর আওতায় ২৮৫ জন নারী এখান বাসক পাতা সংগ্রহ করছন। আর এই পাতা কিনে নিচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলি । বাসক পাতা যেমন আনতে পারে অর্থনৈতিক বিপ্লব, তেমনি বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়ার মাধ্যম এই পাতা দেশের ওষুধ শিল্প গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারছে। তিনি আরা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলর বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিকভাব বাসক উদ্ভিদের চাষ শুরু হয়েছে। ভারতেও রয়েছে এর ব্যাপক চাষ।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আমরা শুকনো বাসক পাতা কিনে নিচ্ছি। জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে বাসক পাতা কাশির সিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার গ্রামে এরই মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে গেছে বাসক পাতা নিয়ে। গ্রামবাসী নিজ নিজ বাড়ির চারপাশে বাসক গাছ লাগাচ্ছেন। গ্রামের দরিদ্র নারীরা প্রতিদিনই সংগ্রহ করছেন বাসক পাতা। পরিচ্ছন্নভাবে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করছেন ওষুধ কোম্পানির কাছে। এতে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার জানান, বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা। এটি ঔষধিগুন সম্পন্ন। ভারতীয় উপমহাদেশের একটি উদ্ভিদ। গুনের কারণে বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও।
তিনি আরো জানান, বাসক উদ্ভিদের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরার মাটি অনুকুল। বেশি বেশি করে বাসক গাছ লাগালে এর পাতা দেশের ওষুধ শিল্পে অবদান রাখা ছাড়াও গ্রামীন অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন