সরানো সহজ হবে না: জয়
কোনো শক্তিই আওয়ামী লীগকে ভোটে হারাতে পারবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আসা আওয়ামী লীগকে সরানো সহজ হবে না।
জিয়াউর রহমান যেভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছিলেন, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে কামাল হোসেনরা একইভাবে একুশে অগাস্ট হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন জয়।
বিএনপিকে নিয়ে ড কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের দিকে ইঙ্গিত করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “নির্বাচন নিয়ে তারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে চায়। আসুক, যারা ভোট পায় না তাদেরকে আমরা ভয় পাই না। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, শুধুমাত্র মানুষের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। বন্দুকের নল দিয়ে আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসেনি। এই সুশীলবাবুদের হুমকিতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। আমরা পরোয়া করি না।”
তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, বাস্তব কথা এটা- শুধু বিশ্বাস না, মানুষকে জরিপ করে আমি জানি। বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেই। বিএনপি, সুশীল, জামায়াত এক হয়েও, বাংলাদেশে কোনো শক্তি নাই আওয়ামী লীগকে ভোটে হারাতে পারবে। তাই আমাদের আর কোনো ভয় নাই। আওয়ামী লীগের কখনই কোনো ভয় থাকে না।
“এখন দেশ এগিয়ে এসেছে। দেশের মানুষ সুখে আছে, শান্তিতে আছে। আওয়ামী লীগ এখন কাউকেই ভয় পায় না। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা এখানে এসেছি। আওয়ামী লীগকে সরানো এতে সহজ নয়।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে ঘুরেফিরে আসে ২০০৪ সালের সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলার বিষয়; যে হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
ওই ঘটনার জন্য বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দায়ী করে জয় বলেন, “নির্বাচনের কয়েমাস আগে…তারা নিজেদের নাম দিয়েছে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। সেই কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, যাদের পরিচয় নেই রাজনীতিতে, তারা এখন বিএনপির সঙ্গে জোট করল, হাত মেলাল।
“তবে এটা ভেবে দেখেন, যখন এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলো তখনই কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি, তারেক রহমান, হাওয়া ভবন যে জড়িত সেইকথা কিন্তু প্রকাশ হয়।
“সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কারা জড়িত ছিলেন- এই কামাল হোসেন, এই মইনুল হোসেন। মইনুল হোসেন ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা। তখন ২১ অগাস্টের মূল যে পরিকল্পনা করল, যে হুকুমদাতা সেই তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। তবে সেই সময় কারা তাকে ছেড়ে দেয়, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়? এই আজকের সেই ঐক্য ফ্রন্টেরই লোকজন। এই মইনুল হোসেন তখন তারেক রহমানকে ছেড়ে দেয়, দেশ থেকে ভেগে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।”
ঐক্য ফ্রন্টের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তখন থেকেই তারা তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। এই ঐক্য ফ্রন্ট; এই কামাল হোসেন, মান্না, মইনুল হোসেন- সেই এক-এগারো থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত।”
জয় বলেন, “তারা এখন নালিশ করছে তাদের গ্রেপ্তার করছে, মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি বলব ওদের একটু শোকর করা উচিৎ যে, আওয়ামী লীগ বিএনপি না। বিএনপি মাত্র পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের কতজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে? বিএনপি যদি আমাদের মত এরকম ১০ বছর ক্ষমতায় থাকত তাহলে আওয়ামী লীগের কেউ বেঁচে থাকত?”
সজীব ওয়াজেদ বলেন, “হ্যাঁ, যারা মানুষ হত্যা করে, যারা জঙ্গিদের পালে, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে যে দল, সে দলের কর্মী- আমরা অবশ্যই তাদেরকে গ্রেপ্তার করব। এখানে কোনো ছাড় হবে না। যারা একুশে অগাস্টের হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলাবে, সেই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত, অবশ্যই আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করব।”
পঁচাত্তরের ১৫ ও ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
“এই যে সুশীলরা যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে, তারা কি মনে করে আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির মত হত তাহলে আমরা আদালতে যেতাম? আজকে যদি আমার চরিত্র তারেক রহমানের মত হতো তাহলে বেগম জিয়া কি শুধুমাত্র জেলে থাকতেন?
“আওয়ামী লীগ বিএনপি না। আমাদের চরিত্র তাদের মত না। আমরা খুনি না। আমরা সন্ত্রাসী দল না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার দল।”
সুশীল সমাজের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জয় বলেন, “আমাদের সুশীলরা, এই যে ঐক্য ফ্রন্ট নিরপেক্ষতার কথা বলে। সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড এই নিয়ে কি কোনো নিরপেক্ষতা হতে পারে? তাহলে তারা এই কথা কিভাবে বলে? যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলতে লজ্জা পায় তারা সন্ত্রাসকে আশ্রয় দিচ্ছে। যারা খুনিদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লজ্জা পায় তারা খুনিদের বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
“আজ আমাদের এই সুশীলবাবুরা বলে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। কিসের থেকে রক্ষা করতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। এরকম ২১ অগাস্টের মত হত্যাকাণ্ড আর ঘটছে না। এটা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে? বাংলাদেশ এখন উন্নয়শীল হয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। এটা থেকে রক্ষা করতে হবে? একটা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হচ্ছে, সেখান থেকে রক্ষা করতে হবে?
“না, বাংলাদেশকে আসলে যেটা থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, এই যে জঙ্গি দল বিএনপি, তাদের হাত থেকে রক্ষা করায় বাঁধা দিচ্ছে এই ঐক্য ফ্রন্ট। ঐক্য ফ্রন্টের চেষ্টা হচ্ছে বিএনপিকে বাঁচিয়ে দেওয়া, বিএনপিকে পুনর্বাসন করা। ঠিক জিয়াউর রহমান যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছিল, এই সুশীলরা এখন নেমেছে তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনতে। আমরা কি সেটা দেখতে চাই?”
ঐক্য ফ্রন্ট তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন জয়।
“বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে? ২১ অগাস্টের হত্যাকারী তারেক রহমান, তাকে কি আমরা ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই? এটাই কি চায়? আমাদের সুশীলরা তো মনে হচ্ছে সেটাই চায়। না, সেটা আমরা হতে দেব না।”
জয় বলেন, “২১ অগাস্টের বিচার হয়েছে এবং তাদের বিচার বাস্তবায়ন হবে। তারেক রহমানকেও আমরা দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা দেব। এটা আমাদের ওয়াদা।”
২১ অগাস্টের ঘটনার পর রাজনীতিতে নিজেকে জড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র।
“রাজনীতির সাথে আমি জড়িত ছিলাম না। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর যখন হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়, তখন আমার একটি জেদ উঠল। আর সেই ২১ অগাস্টের পরই কিন্তু আমি অনেকদিন পর বাংলাদেশে ফিরে আসি, রাজনীতিতে পা দেই। কারণ সেইদিন আমি ওয়াদা করেছিলাম এই বিএনপি সরকারকে আমি ক্ষমতা থেকে বের করবই করব।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা ও নারী অধিকারকর্মী রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরাফাত এ রহমান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন