সংসদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর
দেশে নতুন সরকার গঠনের জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বর এবং প্রত্যাহরের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর।
আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী ভোটগ্রহণের তারিখ থেকে তিন সপ্তাহ পূর্বে কোন ধরণের প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না বলে উল্লেখ আছে। ফলে ২রা ডিসেম্বরের পূর্বে কোন প্রার্থী বা তার সমর্থকরা নির্বাচন প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
এবার তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটগ্রহনের দিন পর্যন্ত নির্বাচন সময় হচ্ছে মাত্র ৪৫ দিন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করেছিল বিগত কমিশন। নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে সিইসি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ নিষ্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য বা মতবিরোধ থেকে থাকলে রাজনৈতিকভাবে মীমাংসারও অনুরোধ জানাই।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভিডিপি, আনসার, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সাথে সশস্ত্র বাহিনীকেও মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিইসি। নির্বাচনে ৬ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন রাখা হবে। নির্বাচনে মোট ৮দিন সেনাবাহিনী মোতায়ন থাকবে। নির্বাচনের আগের ৫দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে আরো দুইদিন। তবে কি পরিমাণ সেনা সদস্য মোতায়ন থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
# মনোনয়নপত্র দাখিল আজ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত
# মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বর
# মনোনয়নপত্র প্রত্যাহরের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর
# নির্বাচনে সেনা মোতায়ন থাকবে ৮দিন
বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমঝোতার আগে তফসিল না ঘোষনার জন্য ইসির কাছে দাবি জানিয়েছিল। ইসি অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট ও বিকল্প ধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও ইসির সঙ্গে বৈঠক করে তফসিল না পেছানোর দাবি জানান হয়। দুই পক্ষের এই বিবাদমান পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল তফসিল ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে বেশকিছুদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা ছিল। কমিশনেরও এ নিয়ে অনেক রকম ভাষ্য পাওয়া গিয়েছিল। এমন অবস্থায় গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সভায় ৮ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সেই মোতাবেক গতকাল সকাল ১১টায় ইসির তফসিল ঘোষণা সংক্রান্ত কমিশনের ৩৯তম গুরুত্বপূর্ণ সভায় বসে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। ঘন্টাব্যাপী এই বৈঠকে তফসিল ও সিইসির ভাষণ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচন শাখার যুগ্ম সচিব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরই বেলা ১২টার দিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালককে ডেকে পাঠানো হয়। সিইসির নিজকক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ১২ মিনিটের ভাষণ দুপুর ১টার পর রেকর্ডিং সম্পন্ন হয় বলে নিশ্চিত করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
অন্যবারের মতো এবারও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নিয়োগ করা হয়েছে। আর সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন বাদ দিয়ে মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। গতকালই প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব বরাবর নির্বাচনে মনোনয়নে প্রদানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম/স্বাক্ষর চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন এলাকায় নিছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। পোশাকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমিশন কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। তফসিল ঘোষনাকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নির্বাচনে বাজেট ও ভোটার :
জাতীয় নির্বাচনের বাজেট ধরা হয়েছে ৭০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আর আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এদিকে ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ভোটকেন্দ্র ৪১ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। এতে সাত লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ :
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর আজ রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। জন চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন সড়কে জনসভা এমনকি পথ সভাও করা যাবে না। মাইকের ব্যবহারও সীমিত করা হবে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে নির্বাচন বিরোধী যে কোন ধরণের তৎপরতা। ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া কোন ধরণের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ করা যাবে।
নির্বাচনী মালামাল পাঠানোর নির্দেশ :
বৃহষ্পতিবারের মধ্যে মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার প্রায় ৩৩ হাজার মনোনয়ন ফরম ছাপানো হয়েছে। তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে দেশের সব জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগননা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন