শীতের শুরুতেই কুমড়া বড়ি তৈরী শুরু ‘মা’-‘চাচি’দের
শীতের মৌসুমে অন্যরকম আমেজে দেশের প্রতিটা গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন্য কর্মব্যস্ততার মাঝে সময় পার করে থাকে।
গ্রামাঞ্চলের নারীরা (মা, বোন, চাচী, গৃহীনি, দাদিরা) বিভিন্ন মৌসুম খাদ্য তৈরিতে বেশ আনন্দদায়ক ব্যস্ত সময় পার করে। তেমনই দৃশ্যপট চিত্র দেখা গেছে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার গ্রামের নারীদের মাঝে।
গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাজ বেড়েছে কুমড়া বড়ি দেওয়ার জন্য। ভোর সকালে ঘাষের ডগায়, ধানের শিষে শিশির ভেজা মুক্তকনা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
পৌষ-মাঘ শীতকাল। তবে এর আগে থেকে শীত শুরু হয় এবং শেষ হয় কিছুটা পরে। যদিও এখনো পুরোদমে শীত শুরু হয়নি। তবে শীতের আগমনী বার্তায় কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরীর ধুম পড়েছে।
কুমড়া বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য উপাদন। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় আরেক নতুন মাত্রা।
জানা যায়- কলারোয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার শতশত নারীরা কুমড়া বড়ি তৈরীর কাজে মনোযোগী হয়েছে। শীত আগমনের সাথে সাথে কুমড়া বড়ি তৈরীর ব্যস্ততা বেড়েছে প্রায় গ্রাম অঞ্চলের নারীদের মাঝে। বর্ষাকাল ব্যতিত বাকী মাস গুলোতে কমবেশী কুমড়া বড়ি তৈরী করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়া বড়ি তৈরীর ধুম পড়ে থাকে। অবশ্য শীতকাল কুমড়া বড়ি তৈরীর ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়ীতে কমবেশি কুমড়া বড়ি তৈরী করা হয়। অনেকেই পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রিও করে থাকে। শীতের সময় কুমড়া বড়ির চাহিদা থাকে বেশী, সেই সুযোগে গ্রাম অঞ্চলের নিম্নবিত্ত্ব্য নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরী করে বাড়তি উপার্জন করে থাকে। ওই কুমড়া বড়ি তৈরীর প্রধান উপকরণ মাসকলাই আর চালকুমড়া, সাথে সামন্য মসলা।
চলতি মৌসুমে বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ৭০-৮০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫-থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। সাইজ হিসাবে চালকুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। ৪-৫ কেজি চালকুমড়ার সাথে ২কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল হয় বলে মনে করেন গ্রামের অধিকাংশ নারীরা।
প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করে কিংবা না ভেঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয় বলে জানান কুমড়া বড়ি তৈরীতে অভিজ্ঞ নারীরা।তারপর ঢেকি বা শিল-পাটা বেটি নিয়ে কুমড়া বড়ির মিশ্রণ তৈরী করা হয়। তবে এলাকার বেশ কিছু অঞ্চলে কুমড়া বড়ি তৈরীর মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করার জন্য। যদিও প্রত্নতত্ত্ব অঞ্চলে মেশিন না থাকায় নারীদের হাতে তৈরি করতে হয় কুমড়া বড়ি। দুইটি উপকরনের সংমিশ্রণে তৈরীকৃত কুমড়া বড়ি মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে রোদে বড়ি বসিয়ে সন্ধ্যার দিকে উঠানো হয়।বিভিন্ন রংয়ের পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানোর দৃশ্য দেখতেও দারুণ লাগে। ওই কুমড়া বড়ি বসানোর পর কয়েক দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৫–৭ দিন পর্যন্ত লেগে যাওয়া শুকানো বড়ি কাপড় থেকে উঠিয়ে অন্য পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
কথা হয় পরিবারের চাহিদা মেটাতে কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত উপজেলা দেয়াড়ার গৃহীনি সিমা বেগমের সাথে। তিনি জানালেন- ৪-৫ কেজি কুমড়ার সাথে দুই কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল তৈরী হয়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিস্কার করা, আর ঢেকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরী করতে প্রচুর পরিশ্রম হয় এমনকি অনেক সময়ও লাগে।তবুও আমাদের এই শীতের সময় বেশ ভালো লাগে এই কাজ গুলো করতে বলে জানান তিনি।
তাছাড়া, অনেকেই বাড়তি উপার্জনের আশায় বাজারে বিক্রিতে-মৌসুমের প্রথম থেকেই কুমড়া বড়ি তৈরী করা শুরু করে দেয়। স্বাদ ও মানের দিক থেকে বাজারে বিক্রি হওয়া কুমড়া বড়ি তুলনায় নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটাতে কষ্ট হলেও মাত্রানুযায়ী উপাদান ব্যবহারে কুমড়া বড়ি তৈরী করলে স্বাদটাও বেশি ভাল হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কষ্ট হলেও অনেকেই তৈরি করছে যেটার সুযোগ শহরঞ্চলের মানুষদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে মনে করেন গ্রামাঞ্চলের ওই গৃহীনিসহ অনেকেই।
এদিকে, এখন খোসা ছাড়ানো মাসকলাই বাজারে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ের সংমিশ্রনে বড়ি তৈরী খুব সহজ হয়। যেসকল এলাকায় মেশিনের দ্বারা তৈরি করা হয় তাদের একটু পরিশ্রম কম এমনটাই মনে করছেন গ্রামাঞ্চলের অনেক নারীরা। মেশিনের সাহায্যে কম কষ্টে অল্প সময় প্রচুর পরিমাণ কুমড়া বড়ি তৈরী করা সম্ভব হয়ে থাকে। এক কেজি কুমড়া বড়ি তৈরী করতে প্রায় ১১০- ১২০টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। আর বাজারে ২শ থেকে আড়াই’শ টাকা দরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়ে থাকে।
এতে নিম্নবিত্ত মানুষদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হয় বলেও জানান কলারোয়া ও পার্শ্ববর্তী বন্ধু উপজেলা মনিরামপুরের মশ্বিমনগরবর্তী এলাকার শিক্ষিকা সাবিনা ইয়াসমিনসহ কুমড়া বড়িতে ব্যস্ত একাধিক নারীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন