রাখাইনে ‘সেফ জোন’ তৈরির প্রস্তাব বাংলাদেশের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত ঠেকাতে সেখানে সহায়তাকারী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় একটি ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) মাধ্যমে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারকে এ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেন কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য এ ধরনের এলাকা নির্মাণের যুক্তি দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের এ প্রস্তাব মিয়ানমারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রেডক্রস। তবে এটা দুই দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারের এক মুখপাত্রকে অনুরোধ করা হলেও তিনি এতে সাড়া দেননি।
এদিকে, রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা রুখতে রাখাইনে সেফ জোন তৈরির পাশাপাশি সীমান্তে ‘বাফার জোন’ করার কথাও বলছে বাংলাদেশ। এতে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো ঘাঁটি তৈরি করে শরণার্থীদের সাহায্য করতে পারবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে আসতে দেব। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দিতে আগ্রহী নই। এরইমধ্যে তাদের বোঝায় আমরা ভারাক্রান্ত।’
গত ২৪ আগস্ট রাতে একযোগে কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহী রোহিঙ্গারা হামলা করে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্যসহ বেশকিছু রোহিঙ্গা নিহত হয়।
ওই ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন, নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা এবং গুলি করে রোহিঙ্গাদের হত্যাসহ ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করে সেনাবাহিনী। প্রাণে বাঁচতে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। মাত্র দুই সপ্তাহে এ সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
রোহিঙ্গাদের ওপর কয়েক দশক ধরে জাতিগত নিপীড়ন চালিয়ে আসছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার। ২০১৫ সালে অং সান সু চির দল ক্ষমতায় এলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। উল্টো সু চির রোহিঙ্গাবিরোধী অবস্থানের কারণে দমন-পীড়ন আগের চেয়ে বেড়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিহীন রোহিঙ্গা প্রাণে পাঁচতে তাই বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানানো হলেও তাতে মিয়ানমারের সাড়া মেলেনি। রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে দাবি তাদের।
এদিকে, সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক শরণার্থী শিবির নির্মাণের জন্য ১৫০০ একর ভূমি দিয়েছে সরকার। কক্সবাজার সীমান্তে ওই ভূমিতে শিবির গড়ছেন রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজারের সহকারী ডেপুটি কমিশনার কাজী আবদুর রহমান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তবে এজন্য তাদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে এবং তারা ক্যাম্প এলাকার ভেতরে চলাচল করবেন। যাতে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যেতে না পারেন।
এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন ও সাহায্যের জন্য বলা হচ্ছে। এরইমধ্যে তুরস্ক এ সমস্যা নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এমনকি, রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে এসে শরণার্থী শিবির ঘুরে গেছেনত তুরস্কের ফার্স্টলেডি।
নৌপথে মালয়েশিয়া আশ্রয় নিতে গেলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এছাড়া থাইল্যান্ডও কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে বলে জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে তাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে চাপ নয়, মিয়ানমারকে এই বর্বরতা ও সহিংসতা বন্ধের জন্য চাপ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা। আমরাও সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’
দীর্ঘদিন ধরে চলা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারের হাতেই বলে মনে করেন ইউএনএইচসিআরের প্রধান শিনজি কুবোও।
আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ঢুকতে দিয়ে বাংলাদেশ তার সর্বোচ্চ করেছে বলে মন্তব্য তার।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন