যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের অনুপস্থিতিতে কলারোয়ায় শুরু হলো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম
যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের অনুপস্থিতিতে শুরু হলো সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম।
উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। দিনভর ওই কার্যক্রম চলে।
অনলাইনে আবেদনকৃত উপজেলার ১২৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের তালিকা যাচাই-বাছাই শুর হয়। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১২৬জন ব্যক্তি তালিকাভূক্ত হতে আবেদন করেন। কমিটির সভায় তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। সঠিক মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হতে সেখানে স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় বলে জানা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের তালিকা আনুষ্ঠানিক যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অনুপস্থিত ছিলেন কলারোয়া অঞ্চলে ১৯৭১’র রণাঙ্গনের যুদ্ধকালীন দুই কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দীন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফফার। এসময় রণাঙ্গনের পরিচিত আরো অনেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফফারের অনুপস্থিতি অনেকের চোখে পড়েছে।
অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে ১৯৭১সালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে একাধিক সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বদানকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফফার জানান, ‘কমিটির সভাপতি ১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি ৮নং সেক্টরের অধীন কলারোয়া অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নেননি। ফলে তিনি এ অঞ্চলের সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধার চিনবেন না- সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া গোলাম মোস্তফা ব্যতীত এই কমিটির অধিকাংশ সদস্য এ অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ নেননি, তারা নগরঘাটা অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন। ফলে তারাও কলারোয়া উপজেলার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করণে সঠিকতা নিরূপণে ব্যর্থ হতে পারেন। এর পাশাপাশি অদৃশ্য কারণে যুদ্ধকালীন কমান্ডার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মোসলেম উদ্দীনকেও যখন ওই কমিটির সদস্য করা হয়নি তখন আমার মতো যুদ্ধকালীন কমান্ডারকেও সেখানে যেতে মন সাড়া দেইনি।’
কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি, সাবেক সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহম্মেদের সভাপতিত্বে ওই কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায়।
কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিকী, কলারোয়া উপজেলা কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলিবদ্দি সরোয়ার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবুল হোসেন, সাংগঠনিক কমান্ডার সৈয়দ আলীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আখতারুজ্জামান, এসআই এমদাদ, তারেক হাসান, জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও ইউএনও উত্তম কুমার রায় বলেন, রাষ্ট্র আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাই আমরা যারা এ কাজে দায়িত্ব পেয়েছি, তাঁদের নিজ নিজ জায়গায় থেকে সঠিক, নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও স্বচ্ছতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি সরকারের পরিপত্রের আলোকে বিধি মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন করতে সকলের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছি।
কলারোয়া উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের কঠিন শপথ নিতে হবে, আমরা কোন অনিয়ম করবো না।
এদিকে, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই বর্তমান কমিটি স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৫ফেব্রুয়ারী ওই রিটটি দাখিল করেছেন কলারোয়া উপজেলার ইয়াকুব আলী সরদারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম। বিষয়টি অবগত করতে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি দরখাস্তও করা হয়েছে।
মহামাণ্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী এড.মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন ওই রিট পিটিশনটি দাখিল করেছেন, যার নং- ২১২৯। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যদের পিটিশনে বিবাদী করা হয়েছে।
ওই দরখাস্ত সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এর চলমান কার্যক্রম অনুযায়ী আগামি ১৮ ফেব্রুয়ারী কলারোয়া উপজেলায় দিন নির্ধারিত আছে। ওই যাচাই-বাছাই কমিটির ‘সম্মানিত সভাপতি সাহেব স্ব-উপজেলার নয় এবং কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত কয়েকজন ব্যক্তি অভিজ্ঞ না হওয়ায়’ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে যাচাই-বাছাই বাধাগ্রস্থ হতে পারে। সেই লক্ষ্যে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করত: পুণরায় নতুন কমিটি গঠন করার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল হয়েছে।
রিট পিটিশন দাখিলকারী মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, লাল মুক্তিবার্তা নং-০৪০৪০৩০০১০ ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল গফফার, লাল মুক্তিবার্তা নং-০৪০৪০৩০০২৯ স্বাক্ষরিত ওই অবগতকরণ দরখাস্তটি ১৬ ফেব্রুয়ারী কলারোয়া ইউএনও অফিসে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, কলারোয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই বর্তমান কমিটি স্থগিত অত:পর পুণরায় কমিটি গঠনপর সুষ্ঠু ও সঠিক যাচাই-বাছাই করণে মহামাণ্য হাইকোর্টের স্মরণাপন্ন/ রিট দায়ের হলেও সেটির রায় এখনো হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, রিট এখনো শুনানীর পর্যায়ে, সেটির রায় হলে মহামাণ্য হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন