যশোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত, নতুন প্রশ্ন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ছয় বছরের সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে সাবিরা সুলতানার করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।
এই আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগত বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।
অথচ দুদিন আগে এক আদেশে হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বলেছে, দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে আপিল করেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির পাঁচ নেতার দণ্ড ও সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার ওই পর্যবেক্ষণ দেয়।
ফলে আবেদনকারী পাঁচ বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মসিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাবের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে মত দিয়েছিলেন দুদকের আইনজীবী।
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েও সাড়া পাননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন। তার সাজা ও দণ্ড স্থগিতের আবেদনে সর্বোচ্চ আদালত ‘নো অর্ডার’ দেয়।
বিচারকি আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে জাহিদ হোসেনের করা আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ বুধবার ‘নো অর্ডার’ দেয়।
এর ফলে হাই কোর্টের দেওয়া ওই আদেশই বহাল থাকছে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত কারও আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
এরপর বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ একই ধরনের মামলায় ভিন্ন আদেশ দেওয়ায় নতুন প্রশ্ন দেখা দিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, হাই কোর্টের এ অদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে যাবেন।
আদালতে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম ও এস কে গোলাম রসুল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ।
আইনজীবী আমিনুল পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবিরা সুলতানার দণ্ড এবং সাজা স্থগিত করেছে হাই কোর্ট। এই আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে এ আইনজীবী বলেন, “যারা দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত এবং হাই কোর্টে যাদের আপিল বিচারাধীন, তারা যদি দণ্ড এবং সাজা স্থগিতের আবেদন করেন এবং যদি হাই কোর্ট দণ্ড এবং সাজা স্থগিত করেন, তাহলে আজকের এই আদেশের মধ্য দিয়ে সাবিরা সুলতানার মত তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন “
সাবিরার কনভিকশন ও সেনটেনস (দণ্ড ও সাজা) স্থগিতের পক্ষে যুক্তিটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের কয়েকটি জাজমেন্ট আর ১৯৯৫ সালের ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি জাজমেন্ট দেখিয়ে আমরা বলেছি, কোনো দণ্ড চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নৈতিক স্খলনে কাউকে কনভিকটেড বা দোষী সাব্যস্ত বলা যাবে না।
“যেহেতু আপিলটা পেন্ডিং, কন্টিনিউয়েশন অব ট্রায়াল এবং যেহেতু এটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি সে কারণে কাউকে দণ্ডপ্রাপ্ত বা দণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে অবিহিত করা অবকাশ নাই।”
আমিনুল ইসলাম বলছেন, আপিল চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পরই একটি মানুষকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দোষী সাব্যস্ত বলা যায়। সে যুক্তিই তারা আদালতে উপস্থাপন করেছেন।
“এর প্ররিপ্রেক্ষিতে আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৬ ধারার ১ উপধারায় আজকে সাবিরা সুলতানার দণ্ড এবং সাজা স্থগিত করেছেন।”
দুদিন আগে হাই কোর্টেরই আরেকটি বেঞ্চ বলেছে দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে আপিল করেও কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোন আদেশটি অনুসরণ করবে- সেই প্রশ্ন আইনজীবী আমিনুলের কাছে রাখেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “কোর্টের আদেশের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে একটি হাই কোর্ট বেঞ্চের আদেশ আরেকটি হাই কোর্ট বেঞ্চের জন্য বাইন্ডিং না। আজকেরে আদেশটি হয়েছে একটি জ্যেষ্ঠ (রেসপেকটিভ) বেঞ্চ থেকে। যেহেতু আগের নজির আছে এবং সেগুলো আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি, তার প্রেক্ষিতেই আদালত আদেশ দিয়েছেন, ফলে নির্বাচন কমিশনসহ অধস্তন সকল আদালতের জন্য তা মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে।”
হাই কোর্টের আগের আদেশটি আপিল বিভাগ স্থগিত করেনি বা বাতিল করেনি, তাহলে নির্বাচন কমিশন কোন আদেশটি নেবে- এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমিনুল বলেন, “এটাতো জ্যেষ্ঠ বেঞ্চের আদেশ। সুতরাং জাজমেন্ট নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য।”
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দুদিন আগে যে আদেশটি হয়েছে, নির্বাচনের জন্য কেউ দণ্ড বা সাজা স্থগিতের জন্য কোনো দরখাস্ত করে নির্বাচন করতে পারবেন না। তার কারণ, এ ধরনের প্রার্থনা সংবিধান পরিপন্থি।
“আজকে যদি অন্যরকম আদেশ দিয়ে থাকেন যে, দণ্ড বা সাজা স্থগিত হলে নির্বাচন করতে পারবেন, তাহলে তো সেটি হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হল। এই আদেশের বিরুদ্ধে নিশ্চই আমরা আপিলে যাব।”
রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে না যাওয়া পর্যন্ত সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “এই আদেশ দিয়েও যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, আর আপিল বিভাগ যদি সেটা বাতিল করে, তখন তার সে অধিকার থাকবে না।”
নতুন এই আদেশের ফলে বিষয়টি নিয়ে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো কিনা- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “অবশ্যই। এ জন্যই তো আমরা আপিল বিভাগে যাব।… যে কোনো বিচারক তার ভিউ এক্সপ্রেস (মত প্রকাশ) করতে পারেন। কিন্তু সবার উপরে আমদের সংবিধান।”
সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কেউ অন্যুন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সংবিধান দেশর সর্বোচ্চ আইন। কাজেই এ আইনের পরিপন্থি যদি কোন আদেশ হয়, তবে অবশ্যই আমরা বিষয়টি আপিল বিভাগের দৃষ্টিতে আনব।”
জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় গত ১২ জুলাই ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে দুটি ধারায় তিন বছর করে মোট ৬ বছরের সাজা দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।
এরপর ১৭ জুলাই সাবিরা বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
পরে এ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন সাবিরা সুলতানা। একই সঙ্গে জামিন আদেন করেন। সে আপিল গত ৩০ জুলাই শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট। গত ৬ অগাস্ট হাই কোর্ট থেকে জামিন হয় সাবিরা সুলতানার। এরপর ১৪ অক্টোবর তিনি সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের একক বেঞ্চ ওই আবেদনের শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করে বিব্রতবোধ করে। তখন নিয়ম অনুযায়ী আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি আবেদনটি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের বেঞ্চে পাঠান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন