‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরাও মন্ত্রী হয়েছিলেন’ : সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসপি মোস্তাফিজুর রহমান
স্বাধীনতার মহানায়ককে অপমানিত করে কেউ টিকে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সাতক্ষীরায় সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।
পৃথিবীর কোনো দেশে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, পাকিস্তানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলি জিন্নাহকে অস্বীকার ও অপমানিত করে সেসব দেশে কেউ টিকে থাকতে পারে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন- ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না তারাও এক সময় বাংলাদেশের মন্ত্রীও হয়েছিলেন।’
পুলিশ সুপার বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ সম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
পুলিশ সুপার বলেন- ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী এবং ২০১৩ সালে যারা দেশকে ভয়াবহ সন্ত্রাসের মধ্যে ঠেলে দিতে চেয়েছিল তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।’
প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন- ‘আমরা গর্বিত ১৯৭১ এ পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে সবার আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বুকের রক্ত দিয়েছিল পুলিশ। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় পুলিশ প্রাণান্ত চেষ্টা করে জীবন দিয়েছিল। আর ২০১৩ এর ভয়াবহ সহিংসতার দিনে শান্তি ফেরাতে বাংলাদেশ পুলিশের ৪০ সদস্য প্রাণ দিয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন করে আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। পদ্মা সেতু, ফোর লেন, হাইওয়ে নির্মান এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রণে থাকার কারনে।’
অতীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন- ‘পুলিশের সব কাজে প্রতিপক্ষ থাকে। ফলে সুনাম ধরে রেখে কাজ করা খুবই কঠিন। সাতক্ষীরা পুলিশ শান্তির পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করবে। মানুষকে ভালবাসলে পরিবর্তন আনা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন পুলিশ ও মিডিয়াকে একটি টীম হিসাবে কাজ করতে হবে। পলিটিক্যাল পার্টি পচে যেতে পারে, ব্যক্তি পচে যেতে পারে কিন্তু মিডিয়া কোনোভাবে পচে গেলে সমাজ দিগভ্রষ্ট হয়ে যায়।’
আমরা ব্যক্তিগত রাগ দ্বেষ হিংসা থেকে কিছু করতে চাইনা, সামাজিক কল্যাণে সবার স্বার্থে কাজ করতে চাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন- ‘আমি বা আমার পুলিশ সদস্যদের কেউ ব্যক্তি স্বার্থে কিছু করলে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোনো কিছু যেনো বাস্তবতাবিহর্ভূত না হয়। পুলিশ সুপার বলেন সাংবাদিকের দায়িত্ব সঠিক তথ্য তুলে ধরা। কিন্তু সাংবাদিকতার নামে যদি কেউ সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় তাহলে বুঝতে হবে মিডিয়া তার অবস্থানচ্যুত হয়েছে।’
জেলা পুলিশের শীর্ষ এ কর্ণধর আরো বলেন- ‘আমরা বৃটিশ পুলিশ নই, আমরা পাকিস্তানি পুলিশ নই, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ। তাই সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, মানবাধিকার সুরক্ষা, জঙ্গিবাদ নির্মুল করা, মাদক নিশ্চিহ্ন করা আমাদের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন পুলিশ সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চায়। কোনা ক্ষুদ্র ও ব্যক্তি স্বার্থ নয় আসুন দেশকে ভালবাসি। সব ধরনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ একটি আদর্শ পুলিশ বাহিনী হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। ৯০ এ গণতন্ত্র উদ্ধারেও পুলিশ প্রাণ দিয়েছে। পুলিশ সব সময় জীবন বাজি রেখে কাজ করে।’
মিডিয়া সমাজের দর্পণ উল্লেখ করে তিনি বলেন- ‘পুলিশ ও মিডিয়ার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। এই লক্ষ্যে কোনো মানুষের কিঞ্চিৎ উপকার করতে পারাটাই সফলতা। জনগনের সেবা দিতে পুলিশ অঙ্গিকারাবদ্ধ। কিছু কিছু অনলাইনে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে রিপোর্ট ছাপা হচ্ছে।’
তিনি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন- ‘প্রয়োজনে আইসিটি অ্যাক্টে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এসব অনলাইন সাংবাদিকতার আড়ালে থেকে অনেকে চাঁদাবাজি ও মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়ছে। এমন কয়েকজনকে সাতক্ষীরায় গ্রেফতারও করা হয়েছে।’
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের সভাপতিত্বে ও প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীর সঞ্চালনায় মত বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, দৈনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, আরটিভির রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বণিক বার্তার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য গোলাম সরোয়ার, প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও দৈনিক করতোয়, দৈনিক যশোরের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সেলিম রেজা মুকুল, দেশ টিভির শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, ৭১ টিভির বরুণ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাবের সাহিত্য,সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল জলিল, ভোরের কাগজের ড. দিলীপ কুমার দেব, প্রেসক্লাব যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সামাদ, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী, প্রেসক্লাব নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল প্রমূখ।
তারা সাতক্ষীরার আইনশৃংখলা, মাদক পাচার, জঙ্গিবাদ, চোরাচালান,সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন সমস্যা এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
মত বিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.ইলতুৎমিশ, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাহউদ্দিন, সাতক্ষীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান প্রমূখ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন