মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদ সেনাদের সম্মাননা জানাল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সেনাদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ৪৭ তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রবিবার কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১২ জন ভারতীয় সেনা শহীদদের পরিবারের সদস্যদের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজ্জাম্মেল হক। সম্মাননা হিসাবে প্রদান করা হয় একটি সিলভার ক্রেষ্ট, একটি সনদ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত বাণী এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা দুইটি বই (কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।
সম্মাননা পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গত বছরের এপ্রিলে শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাগতিক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ৭ (সাত) ভারতীয় সেনা সদস্যের পরিবারকে প্রথমবারের জন্য এই সম্মাননা প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী। তারই ধারাবাহিকতা হিসাবে দ্বিতীয় এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান হল কলকাতায়।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজ্জামেল হক বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস।বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বিজয় দিবস জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই দিন আমাদের অপরিসীম আনন্দের দিন। আমাদের অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘নয় মাসব্যাপী যুদ্ধে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এতে ৩০ লাখ শহীদ হন, ২ লক্ষ মা বোন সম্ভ্রম হারান। ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযোদ্ধা ও যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয় এ বিজয় দিবস।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা স্বীকৃতি দেয় ভারত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের জনগণ সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। এক কোটি শরণার্থীকে ভারত দীর্ঘদিন আশ্রয় দিয়েছিল এবং অস্ত্রের যোগান দিয়েছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অনেক বীর সদস্য জীবন দান করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সাথে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী একত্রিত হয়ে মিত্র বাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। মাত্র ৯ দিনের মধ্যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ও বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে শত্রু মুক্ত হয়।’
ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। সময়ের বিচারে দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগাযোগের পাশাপাশি নৌপথ চালুর প্রক্রিয়া চলছে। ব্যবস্থা রয়েছে জটিল সমস্যা বিশেষ করে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হয়েছে এবং এর আগে গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত তেলের পাইপ লাইন তৈরি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বিষয়টিও রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করায় বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনরেল এম. এম. নারবনে।
এর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতেই এদিন সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধার এক প্রতিনিধি দল।
ভারতের পক্ষে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতের তিন বাহিনীর (স্থল, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রধানরা।
এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতি বিজরিত দৃশ্য দেখে দলের অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন