মুক্তমনি আর ঢাকায় যেতে চায় না,অপারেশন করা ডান হাত ফুলে গেছে
ঢাকা থেকে যেমন ফোলা ডান হাত নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল, এখন হাত তার চেয়েও বেশি ফুলে উঠেছে। হাত নাড়াচাড়া করতেও প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। একটু আঘাত লাগলে যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠছে। অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আসতে গেলে ধাক্কায় ধাক্কায় প্রচণ্ড কষ্ট পাওয়ার ভয়ে আর ঢাকা আসতে চাইছে না সাতক্ষীরার মুক্তামণি (১২)। এতে হতাশ তার বাবা। এখন বাড়ির আঙিনায় তৈরি করা মাচায় শুয়ে শুয়েই দিন কাটে মুক্তামণির। দেহের চেয়ে মোটা হাত নিয়ে আর হাঁটতে পারে না সে। প্রতিদিন সকালে তার বাবা-মা তাকে ঘর থেকে রেব করে মাচায় রাখেন। দিনের বেলা সেখানেই তার যত্ন করা হয়। মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, একটু বেলা হওয়ার পর সকাল ১০-১১টার দিকে তাকে ঘরের বাইরে আনা হয়। আসরের নামাজের পর আবার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শমতো হাতের ব্যান্ডেজ দুই ঘণ্টা খুলে রাখা হয়। এ সময় সেখানে মলম লাগানো হয়। ইব্রাহিম হোসেন বলেন, মলম লাগানোর পর ব্যান্ডেজ দেই। ব্যান্ডেজটা আমরাই দিতে পারি। চিকিৎসকরা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সারা দিন শুয়ে শুয়েই তার দিন কাটে। দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার পর কিছু সময়ের জন্য হেলান দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সে বেশি সময় বসে থাকতে পারে না। ছয় মাস ১০ দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ফোলা হাত নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় মুক্তামণিকে। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে মাসখানেক পরে হাসপাতালে আসার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকদের সাথে যোগযোগ রাখছেন মুক্তার বাবা মো. ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ডাক্তারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সমস্যার কথা তাদের জানাচ্ছি। একটু গরম পড়লে তারা নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু মেয়ে তো আর যেতে চাইছে না। তাকে আর বাইরে বের করার মতো অবস্থা নেই। হাত অনেক মোটা হয়ে গেছে।অ্যাম্বেুলেন্সে করে যে নিয়ে যাব, তেমন অবস্থা নেই। হালকা একটু ধাক্কা লাগলে তার মনে হয় যেন জান বের হয়ে যাচ্ছে। একটু নাড়াচাড়া হলেই সে প্রচণ্ড ব্যথা পায়। ধাক্কা লাগলে সহ্য করতে পারে না।হতাশা প্রকাশ করে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ছয়টা মাস ওখানে গিয়ে থেকে আসলাম। যদি সামান্য উন্নতিও হতো, তাহলে সেই ভরসায় যাওয়া যেত যে, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কোনো ইমপ্রুভই হয়নি। কোন ভারসায় যাব? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এতদিন চিকিৎসা করানোর পরও কোনো প্রকার পরিবর্তন লক্ষ করতেছি না। বরং হাতটা ফুলে আরো একটু মোটা হয়েছে।চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তারা (চিকিৎসক) তো যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা করেছেন। হলো না। আর কী করা যাবে? আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ যদি ভালো করে, তাহলে ভালো হবে। মুক্তামণি কবে নাগাদ আবার আসবে, জানতে চাইলে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শীত একটু কমেছে। এখন আমি যোগাযোগ করব। মুক্তামণি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারপাশা গ্রামের মো. ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুনের সন্তান। হীরামণি নামে মুক্তামনির আধা ঘণ্টার বড় জমজ বোনটি মুক্তামণির মতো রোগে আক্রান্ত নয়। সে সুস্থ। ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মুক্তামণিকে রোগ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মুক্তামণির গোসল-খাওয়া সম্পর্কে তার বাবা বলেন, যে অবস্থা, তাতে প্রতিদিন গোসল করানো যায় না। তিন-চার দিন পরপর গোসল করাই। সে স্বাভাবিক খাবাব খায়। যখন যা খেতে চায় তা-ই এনে খাওয়াই। তবে কারো তুলে খাওয়ানো লাগে না। নিজেই বাম হাতে তুলে খেতে পছন্দ করে। তিনি বলেন, মুক্তার জন্য সকলে দোয়া করবেন। আপনার সবাই ওর জন্য দোয়া করেন, তা আমি জানি। দুই বছর বয়সে মুক্তামণির হাতে এ রোগের সূত্রপাত। সাড়ে নয় বছর বয়সে দেহের চেয়ে হাত মোটা হয়ে যায়। মুক্তামণিকে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় এটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। ২৫ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লালকে খবর দিয়ে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তামণির সার্বিক পরিস্থিতি জানেতে চান।
সব শুনে প্রধানমন্ত্রী মুক্তামণিকে প্রয়োজনে বিদেশ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ওই দিনই ঢামেকের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ই-মেইল করে মুক্তার বিষয়টি জানানো হয়। ২৭ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা মুক্তামণিকে দেখেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলোও দেখানো হয়। সবকিছু দেখে তারা পরে আলোচনা করে জানানোর কথা বলেন। এরপর তারা ই-মেইল করে জানিয়েছেন, মুক্তামণির রোগ আরোগ্যযোগ্য বা দেহে অস্ত্রোপচার করার মতো নয়। ৩ আগস্ট ঢামেক পরিচালকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ঝুঁকি হলেও সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে মুক্তামণিকে সুস্থ করার জন্য ঢামেকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।৫ আগস্ট মুক্তামণির বায়োপসি করা হয়। ৮ আগস্ট বায়োপসির রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট পেয়ে চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামণির শরীরে ক্যান্সার ছড়ায়নি। সে বিরল রোগেও আক্রান্ত নয়। মুক্তামণি রক্তনালী টিউমারে আক্রান্ত। এরপর ১২ আগস্ট তার দেহে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢামেকে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তার দেহে সাত-আট দফা অস্ত্রোপচার করা হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন