মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ের আশঙ্কায় লাখো শ্রমিক
মালয়েশিয়া সরকারের রিহায়ারিং প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে দেশটির ইনিগ্রেশন বিভাগ।
আশঙ্কা করা হচ্ছে নতুন বছরের শুরু থেকেই অবৈধভাবে আসা বিদেশি শ্রমিকদের ধরপাকড়ে দেশটিতে চালানো হবে সাঁড়াশি অভিযান।
২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রিহায়ারিং প্রকল্প চালু রয়েছে। প্রকল্পটি মাই ইজি ভিসা নামে পরিচিত। বিভিন্ন ক্যাটাগরির অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হতে ‘মাই ইজি’ নামক স্থানীয় একটি কম্পানিকে দায়িত্ব দেয় সরকার। এ সুযোগে বহু শ্রমিক মাই ইজির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট লাভ করে বৈধ হয়। তবে ‘মাই ইজি’ রেজিস্ট্রেশন ও ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট করে লেভি পরিশোধ করার পর বছর ঘুরে গেলেও তাদের পারমিটের খবর নেই। মালিকরা বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও পারমিটের এই প্রকল্প চলছে কচ্ছপগতিতে। বিভিন্ন টালবাহানায় শ্রমিকদের মনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আসলেই তারা পারমিট পাবে কিনা- তা নিয়ে।
এ ছাড়া রিহায়ারিং প্রকল্প বিষয়ে শ্রমিকদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না প্রকল্পের আওতায় না আসা শ্রমিকরা।
হাইকমিশনও প্রথম থেকে এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ প্রবাসীদের। দোদুল্যমান এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে অনেক অবৈধ শ্রমিক দেশে ফিরে গেছেন। আবার অনেক শ্রমিক দালালের মাধ্যমে রিহায়ারিং প্রকল্পে অংশ নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে জেলে আটক রয়েছেন। ‘মাই ইজি’ পারমিট করে দেওয়ার নামে দালালরা জনপ্রতি ৭-৮ হাজার রিঙ্গিত করে আদায় করেছে বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় এবং পারমিটের পেছনে এত খরচ বহন করতে না পারায় বহু শ্রমিকই ডেটলাইন পার হয়ে যাওয়ার পরও অবৈধ হয়ে থাকবে- তা প্রায় নিশ্চিত। আবার বৈধ হলেও প্রতিমাসে তার অন্তত খরচ হবে পাঁচ-ছয় শ রিঙ্গিত। পারমিট, খাওয়া-দাওয়া ও ব্যক্তিগত খরচসহ প্রতি শ্রমিকের আয় থেকে এক হাজার রিঙ্গিত বা ২০ হাজার টাকা শেষ হয়ে যাবে।
কুয়ালালামপুরের নির্মাণ শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বেতন পাই দেড় হাজার রিঙ্গিত। বৈধ থাকলে বড় জোড় ১০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারবো। আর অবৈধ থাকলে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারবো। তাহলে বৈধ হয়েই বা লাভ কি? মালয়েশিয়ায় অধিকাংশ শ্রমিকের মুখেই শোনা যায় এই আক্ষেপ। তবে ভিন্নমত পোষণ করেন রেস্টুরেন্ট শ্রমিক জালাল। তিনি বলেন, ‘পারমিটটা খুব দরকার। প্রায় ১০ বছর ধরে মাকে দেখি না। পারমিটটা পেলে দেশে বেড়াতে যাবো। ‘
এদিকে, মালয়েশিয়ায় কী পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক অবৈধ উপায়ে রয়েছে সে তথ্য নেই কারো কাছেই। এ দেশে অনেক শ্রমিক স্টুডেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা ও জলপথে ট্রলারে এসে অবৈধ হয়েছেন। আবার পুরনো শ্রমিকদের ভিসার মেয়াদ শেষে নবায়ন না করায় ও কর্মস্থল থেকে পালিয়ে এসেও অবৈধদের কাতারে যোগ দিয়েছেন তারা। তবে অনেকের ধারণা এখনো প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিকের হাতে কোনো পারমিট নেই।
এদিকে, বার বার অশনি সংকেত দিচ্ছে ইমিগ্রেশন। আগামী মাস থেকে বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে দেশটিতে। ফলে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দুই চোখে শরষে ফুল দেখছেন অবৈধ শ্রমিকরা। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কীভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। আবার ছোট ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও অবৈধ শ্রমিকের পারমিট ঝামেলায় জড়াতে চায় না।
সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে যারা টাকা পয়সা খরচ করেও পারমিট পাচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে লাখো শ্রমিক তাকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দিকে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সহজ শর্তে বৈধতার সুযোগ পাওয়া গেলে কোনো শ্রমিকই অবৈধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন