রাজনৈতিক দলের সুপারিশ পর্যালোচনা শুরু
ভোটে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে চায় ইসি
আগামি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার থেকে একেবারে সরে আসছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বরং স্থানীয় সরকারের মতো জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য নির্বাচনে শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহার করা যায় কি না-তা আলোচনার জন্য বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ কম বলে অভিমত কমিশনের সংশ্লিষ্টদের।
বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হবে না
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সাংবাদিকদের বলেন- বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি আমলে নেয়ার চিন্তা এখনো করছে না কমিটি। তবে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ম্যানুয়ালে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আছে। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আরপিওতে যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিষয়ক প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি। গত বুধবার কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হয়। আরপিও ৯ (১), ৯০ বি (বি)(খ), ২২ (১), ৩১ ও ৯৪ অনুচ্ছেদ নিয়ে সুপারিশ ছিল ক্ষমতাসীন দলটির। নির্বাচন পরিচালনায় কেবল প্রজাতন্তের দায়িত্বশীল কর্মচারিদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ করা; তৃণমূলের নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করে দলের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা; প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের তালিকা, ছবি ও এনআইডিসহ ভোটের তিন আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দিতে হবে এবং ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরপিও বাংলা অনুবাদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটদান প্রবর্তন করার প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, আরপিও ৫, ৭(৭), ২ (১২), ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৬, ২১, ৩৬, ৩৯, ৪৪ ই, ৮৯ এ অনুচ্ছেদে সংস্কার চেয়েছে বিএনপি। ভোটের ৯০ দিন আগে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র, জন প্রশাসন, অর্থ, তথ্য, প্রতিরক্ষা, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পররাষ্ট্র, কৃষি, স্বাস্থ্য) ইসির চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে থাকবে এবং নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে; বিতর্কিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া যাবে না, বদলি ও প্রত্যাহার সম্পূর্ণ ইসির এখতিয়ারভূক্ত থাকবে; একই জায়গায় গত ৫ বছরে ধরে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একই এলাকায় পদায়ন করা যাবে না; দলের আনুগত্য পেলে প্রত্যাহার ও শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; প্রতিরক্ষাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলার সংজ্ঞায় নিতে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে; ইসির নিজস্ব প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে; প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিজ ইউপি-পৌরসভা-সিটিতে দায়িত্ব দেয়া যাবে না; প্রতিজেলায় অভিযোগ কেন্দ্র চালু, অনলাইনে মনোনয়ন, ইভিএম ভোট না নেয়াসহ অসংখ্যক প্রস্তাব করে দলটি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের কোন কোন প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা যায়, প্রাথমিকভাবে তা পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ কম বলে মত আসে। তবে প্রতিটি উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি করে অভিযোগ কেন্দ্র চালু করা, প্রস্তাব গুরুত্ব দিচ্ছে ইসি। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের দেয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া, বাংলায় আরপিও প্রকাশ করা, প্রায় ব্যয় পর্যবেক্ষণ, প্রার্থীর আয় ব্যয়ের বিবরণ উš§ুক্ত রাখা-এগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সংলাপে আরপিও সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলোও পর্যালোচনা করার পর একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে। এরপর আবার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নেয়া হবে। এরপর নির্বাচন কমিশনের সভায় তা চূড়ান্ত করা হবে।
গত ২৪ আগষ্ট থেকে গত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে ইভিএম চালুর পক্ষে প্রস্তাব রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৬টি দল। এর বিপক্ষে ১৩টি দল। বাকি ১৯ দলের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন মতামত পাওয়া যায় নি। ২৫টি দল নির্বাচনে সরাসরি সেনা মোতায়নের পক্ষে। ১১টি দল বিচারিক ক্ষমতা সহ সেনা মোতায়নের জন্য কমিশনে সুপারিশ করে। বর্তমান সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও সেনা মোতায়েনের পক্ষে। বিদ্যমান আইনের বাইরে সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগসহ ৯টি দল। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন মতামত নেই বা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছে ৬টি দল।
আরপিওতে যুক্ত হচ্ছে ইভিএম
ইসির সংশ্লিষ্টদের মতে- জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২৬ ধারায় সংশোধনী আনতে হবে। কেননা বর্তমানে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহনের সুযোগ আছে। এর আগে বিগত দশম সংসদের সময় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএমে ভোট করার জন্য আরপিওতে সংশোধনী এনেছিল। কিন্তু পরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা না থাকলেও ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হলো। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। আসন্ন রংপুর সিটির একটি কেন্দ্রেও ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে বর্তমান কমিশন। ২০১০ সালের জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বুয়েটের সহায়তায় ইভিএম ব্যবহার করে বিগত নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে কমিশনের কাছে ১২৩০টি ইভিএম রয়েছে।
বিচারিক ক্ষমতা ছাড়াই সেনা মোতায়ন
বিচারিক ক্ষমতা ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’কে অর্ন্তভুক্ত না করার সম্ভাবনা বেশি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) খসড়া প্রস্তুত করার অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন