বেনাপোলে টাকা দিতে দিতে হাফিয়ে উঠছে পাসপোর্ট যাত্রীরা
বেনাপোল স্থল বন্দরে টাকা দিতে দিতে হাফিয়ে উটছে পাসপোর্ট যাত্রীরা। পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মের বাইরে টাকা নেয়া হচ্ছে।দেশ বিদিশী পাসপোর্ট যাত্রীদের অভিযোগ অকারনে টাকা গুনতে হয় তাদের।
খাদে খাদে টাকা গুনতে হয় পাসপোর্ট যাত্রীদের। বেনাপোল স্থল বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল এর চার্জ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে পাসপোর্ট প্রতি ৪৫ টাকা। অথচ নেয়ার কথা ৪১.৭৫ পয়সা। শুধু এই খাদে প্রতিদিন ৩.২৫ পয়সা বাড়তি আদায় করে কামাই করছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যেটা সম্পুর্ন বে-আইনী।
এছাড়াও উৎকোচ দাবি করছে সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। এখানে নিরাপত্তার কাজে সরকারি বেসরকারি অনেক বাহিনী রয়েছে। দুর্নিতী প্রতিরোধে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যাদের দুদিন যেতে না যেতেই তারা পাসপোর্টযাত্রী ও দালালদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। এ নিয়ে বাক বিতন্ডা হাতাহাতি প্রায়ই ঘটছে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে।
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে নিয়ম রয়েছে পাসপোর্টযাত্রীদের দেখভালের দায়িত্বে শুধুমাত্র কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন পুলিশের। কিন্তু এ নিয়ম দেশের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোলে মানা হচ্ছে না।
এখানে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এর পাশাপাশি রয়েছে আনসার, আর্মস পুলিশ, ও পিমা নামে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা। শুধুমাত্র ইমিগ্রেশন পার হয়ে নোম্যান্সল্যান্ডে যেতে একজন পাসপোর্টযাত্রীকে ৭ জায়গায় পাসপোর্ট দেখাতে ও পয়সা দিতে হয়। প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভারতে যায় এখান দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্টে এসে পাসপোর্টযাত্রীরা পড়ে বিড়ম্বনায়। যাওয়ার সময় যাত্রীদের ল্যাগেজ স্কানিং মেশিনে দেওয়ার সময় সেখানে আনসার সদস্যরা ও কাস্টমসের সিপাইরা দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নিকট থেকে পাসপোর্ট দেখার নাম করে অর্থ দাবি করে। কেউ কেউ না বুঝে টাকা দিয়ে চলে যায়।
প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের শেষ প্রান্তে আর্মস পুলিশ ও পিমার লোকজন পাসপোর্ট ও টার্মিনাল ফির কাগজ চেক করে। এরপর ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বহির্গমনে দাঁড়িয়ে থাকা আনসার ও আর্মস পুলিশের সদস্যরা পাসপোর্টে ভ্রমণকর দেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখার নাম করে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন অহেতুক প্রশ্ন করে তাদের কাছে অর্থ দাবি করে।
নোম্যান্সল্যান্ডের পাশেই ২/৩ জন ইমিগ্রেশনের পুলিশ একই কাজ করেন পাসপোর্টে সিল হয়েছে কিনা, কি মাল নিয়ে যাচ্ছেন। এসব যাবে না একথা সেকথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তবে ছাড়ে।
পাসপোর্টযাত্রীরা ভারত থেকে ফিরে আসার সময় চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইমিগ্রেশন পুলিশ থেকে শুরু হয় বিড়ম্বনা। তারাতো পারলেই পাসপোর্টে ওখান থেকেই সিল মেরে দেয়। সিল মেরে দেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট প্রতি একশ করে টাকা চায়। এরপর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মস পুলিশ তাদের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করে। এসব আর্মস পুলিশ পাসপোর্টযাত্রীদের সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে বলে আবার কখনো বলে আপনাদের মালামাল বিজিবি রেখে দিবে আমাদের কাছে পাসপোর্ট দেন আমরা পার করে দেব।
এসব আর্মস পুলিশ সারাদিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে তাদের নিজ দায়িত্ব পালন না করে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করেন। এরা বন্দরের দেওয়া চেয়ারে বসে বসে অবসর সময় পার করে আর ধান্ধাবাজি করে থাকে।
ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী আলমগীর হোসেন বলেন- আমাদের ২০ হাত রাস্তা হেটে বেনাপোল স্থল বন্দরকে ৪৫ টাকা টার্মিনাল চার্জ দিতে হয়। আমরা দুর দুরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীরা কেন বেনাপোল বন্দরকে সরকারি ৫০০ টাকা ভ্রমণ ট্যাক্স বাদে ৪৫ টাকা দিব। এর কোনো কারণ খুঁজে পাই না।
মুন্সীগঞ্জের পাসপোর্টযাত্রী আমিনুর রহমান বলেন- আমরা বিদেশগামী পাসপোর্টযাত্রী। যেখানে দেখভালের কাজ করবে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন। কিন্তু সেখানে আনসার, আর্মস পুলিশ, বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরী ও বিজিবি কেন? একই পাসপোর্টযাত্রীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকদের কাছে কেন জবাবদিহি করবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।
স্থানীয় ও সাধারণ পাসপোর্টযাত্রী বলেন- যদি নিজেদের ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসি তার মধ্যে অবৈধ কোনো কিছু থাকলে কাস্টমস তা আটক করবে। বৈধ পণ্য ও একজন পাসপোর্টযাত্রী কি পরিমাণ ব্যাগেজ রুলের আওতায় মাল পাবেন কাস্টমস তা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর ১০ হাত দূরে সেই পণ্য আবার বিজিবি সদস্যরা খোলা জায়গায় টেবিল চেয়ার দিয়ে তল্লাশি চালায় এটা কি দেশের জন্য সম্মান জনক।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের নিয়ম থাকে তাহলে কেন বিজিবি, কাস্টমস এবং অন্যান্য সংস্থার লোক এক জায়গায় তল্লাশি করে না। বার বার ল্যাগেজ খুলতে খুলতে হয়রানি হতে হয় পাসপোর্টযাত্রীদের। বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত একজন পাসপোর্টযাত্রীকে কত জায়গায় যে ব্যাগ খুলতে হয় এ সভ্য সমাজে কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- আমরা পাসপোর্টযাত্রীদের তল্লাশি বা হয়রানিমূলক কোনো কাজ করি না। পাসপোর্টযাত্রীরা বন্দরের এ ভবন ব্যবহার করে তার বিনিময় আমরা ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা বন্দর চার্জ নিয়ে থাকি। আমরা তাদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, বাথরুমের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি দিয়ে থাকি। অতি দ্রুত এখানে যাত্রীদের জন্য ট্রলিরও ব্যবস্থা করা হবে।
কিন্তু বেনাপোল বন্দর যে সুযোগ-সুবিধার কথা বলছে এটা যাত্রীদের প্রয়োজন নেই বলে একাধিক পাসপোর্টযাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন- এখানেতো বসার জন্য আসেনি। আমরা যত দ্রুত ইমিগ্রেশন করে ভারতে যেতে পারবো তত দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। এখানে নেই ট্রলির ব্যবস্থা, নেই কোনো হোটেল রেস্তোরাঁ। শুধুমাত্র এই ভবনের মধ্য দিয়ে ২০ হাত জায়গা পার হতেই দিতে হচ্ছে এই টার্মিনাল চার্জের ৪৫ টাকা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন