বদলে ফেলছেন রাত জাগা অভ্যাস, কারাগারে খালেদার এক মাস
রাত জাগার পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার কক্ষের বাতি রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই নিভে যায়। আর দশজন মানুষের মতোই ‘‘আরলি টু বেড আরলি টু রাইজ’’ (আগে ঘুমাও আগে আগে ওঠো) নিয়মে তিনি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন বলে নিশ্চিত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। নাজিম উদ্দিন রোডের ১৭ একর জমির ওপর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক মাস ধরে বন্দী বেগম খালেদা জিয়া। কীভাবে তিনি দিনাতিপাত করছেন এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের।
কারা সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি টিভি বরাদ্দ রাখা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি জানিয়েছেন ‘কারণ’ তিনি বিটিভি দেখবেন না।
খালেদা জিয়ার প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাজার-সদাইয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ডেপুটি জেলার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। মেন্যুতে থাকে তার পছন্দের পাবদা, শিং, রুই মাছ এবং খাসির মাংস। তিনি কখনো গরুর মাংস খান না। তার সকালের নাস্তা রুটি সবজি। মাঝে-মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করে আবার ঘুমিয়ে পড়লে সকালের নাস্তা আর খান না।
জিয়া অরফানেজ মামলার রায় ঘোষণার পরই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে ‘বিশেষ কারাগার’ ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের ৫৫৮ দিন পর নতুন করে বন্দী হিসেবে পায় বেগম খালেদা জিয়াকে।
গত মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট, চোখ ও হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বার বার কারা ফটকে গেলেও তাদেরকে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না। তার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না। তবে কারাগারের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসক এবং একজন ফার্মাসিস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তার শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট স্বাভাবিক। একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে সব সুবিধাই তিনি পাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশাল আয়তনের ওই কেন্দ্রীয় কারাগারে অধিকাংশ সময় চুপচাপই থাকেন বেগম জিয়া। সময় কাটে ইবাদত বন্দেগী করে আর পত্রিকা পড়ে। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ সেখানে দায়িত্বরত কারা মহিলা স্টাফদের সঙ্গেও আলাপচারিতায় বেশির ভাগ সময় কাটে বেগম জিয়ার।
প্রতিটি খাবার দু’বার করে পরীক্ষা করে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো হয়। এই দায়িত্বে রয়েছেন একজন কারা চিকিৎসক এবং একজন ডেপুটি জেলার। তারা নিজেরা প্রথমে ওই খাবারগুলো খান। খাবার রান্না করার দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন পাচক।
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগ মুহূর্তে কারা বিধি অনুসারে ভিআইপি বন্দী রাখার জন্য পুরনো কারাগারের ‘ডে-কেয়ার’ সেন্টারের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির ডান পাশের দুটি কক্ষ থাকার উপযোগী করে তোলা হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে লাগানো হয় নতুন টাইলস, সিলিং ফ্যান ও এসি। বসানো হয় খাট, চেয়ার ও টেবিল। বিটিভির লাইনও সংযোগ দেওয়া হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি ডিভিশন পাওয়ার পর সেখান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ডে-কেয়ার সেন্টারে নেওয়া হয়। তাকে পড়ার জন্য একটি দৈনিক পত্রিকা দেওয়া হয়।
কারা সূত্রে জানা যায়, কারাগারের সব নিয়মই মেনে চলছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে কোনো বিষয় নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অনুরোধও করতে হয় না। শুরুর দিকে পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী শেষ রাতে অর্থাৎ তিনটার দিকে ঘুমাতে গেলেও এখন আর রাত জাগছেন না। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই তাঁর কক্ষের বাতি নিভে যায়। শেষ রাতের দিকে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পর্যন্ত জেগে থাকেন। ফজরের নামাজ সেরে ঘুমান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। তাঁকে চাহিদা অনুযায়ী চা দেওয়া হয়। এরপর ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে গোসল সারেন তিনি। পরে দুপুরের খাবার খান। জোহরের নামাজের পর নিয়মিত অজিফা পড়েন বেগম খালেদা জিয়া। বিকালে কিছু সময় ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারি করেন। সেখানে থাকা একটি চেয়ারে বসেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটে তার।
আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গৃহকর্মী ফাতেমাকে কারাগারে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। রাতে খালেদা জিয়ার কক্ষেই ফাতেমা রাতযাপন করেন। ফাতেমা খালেদা জিয়াকে ওষুধ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন। তার সেবায় কারাগারের ভিতরে রুনা নামের একজন নারী ফার্মাসিস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে কারা চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান শুভকে সদাপ্রস্তুত রাখা হয়েছে। দিনে কমপক্ষে একবার অথবা বেগম জিয়া চাইলে তিনি তাকে চেকআপ করছেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয় তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচজনকে।
কারাগারে যাওয়ার পর একবার বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী।
এর বাইরে তিন দফায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার বড় বোন সেলিনা হোসেন বিউটি ও তার ছেলে, বড় ভাইয়ের স্ত্রী, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাদের ছেলে অভিক এস্কান্দার।
এ ছাড়াও একবার খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর শাশুড়ি দেখা করছেন।
খালেদার সঙ্গে দেখা করলেন বিএনপির নেতারা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে গেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির সিনিয়র ৮ নেতা।
বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে ঢোকেন তারা। ঘন্টাখানিক পর তারা বেরিয়ে আসেন।
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন- ‘খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের কোন উস্কানি ও ফাঁদে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে।’
ফখরুল ছাড়া বাকি ৭ নেতা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকেই সেখানে রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন