ফুল বাগান: ফিরে গেছে ভাগ্যের চাকা
স্কুল জীবনে বাড়ির আঙ্গিনায় শখের বসে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা প্রজাতির ফুলের চারা এনে লাগাতো মোমিনুর। শখ করেই বাড়ির আঙ্গিনা ফুল গাছে ভরে তোলে। এক সময় তার কাছ থেকেই অন্যরা ফুল গাছের চারা কিনে নিয়ে যেতে শুরু করে। এতেই তার অনুপ্রেরনা ও সাহস যোগায় নার্সারী করার স্বপ্ন। মোমিনুর রহমানের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের ফয়জুল্যাপুর গ্রামে। সে মোঃ আফছার আলী সরদারের পুত্র। তার পিতা পেশায় একজন কৃষক। অন্যের জমি বর্গা (ভাগে) নিয়ে কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। জমি-জায়গার সম্বল বলতে ১বিঘা ১৫ কাঠার ভিটে-বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। ২০০৫ সালে এস,এস,সি পাশ করে মোমিনুর। স্কুলে পড়া-শুনা চলাকালীন ২টি খাসি ছাগলের বাচ্ছা নিজের টাকায় কিনে লালন-পালন শেষে এস,এস,সি পরীক্ষার পর ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে। অভাবের সংসার হওয়ায় লেখা-পড়ার দিকে আর না ঝুকে বাড়ির পাশের একজনের নিকট থেকে ১০ কাঠা জমি লীজ নিয়ে স্বল্প পরিসরে ওই ৯ হাজার টাকায় ফুলের নার্সারী বাগান শুরু করে। সেই থেকে তার অবিচল পথচলা শুরু। তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এখন সে একটি বড় নার্সারী বাগানের মালিক। মোমিনুর তার চারা উৎপাদনকারী বাগানের নাম দিয়েছে বিসমিল্লাহ নার্সারী। বর্তমানে ৭ বিঘা জমি জুড়ে বিশাল নার্সারী বাগান গড়ে উঠেছে। অন্যের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ১৪ হাজার টাকায় জমি লীজ নিয়ে এই নার্সারী বাগান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন মোমিনুরের নার্সারী বাগানে ৫/৬ জন শ্রমিক কাজ করে। বাড়ির পাশেই এই নার্সারীতে মোমিনুর নিজেও দেখা-শুনা ও পরিচর্যার কাজ করে থাকে। কঠোর পরিশ্রমী মোমিনুর সৎ, সদালাপী ও একজন ভাল মনের মানুষ। সকলের সাথে সে হেসে-খেলেই চলাফেরা করে। ব্যক্তি জীবনে মোমিনুর বিবাহিত। সে এক পুত্র সন্তানের জনক। সুখী পরিবার হিসাবে রয়েছে ছোট্র সংসার। স্ত্রী আসমা খাতুন স্বামীকে নার্সারী ব্যবসায় ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরনা যোগাচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় স্বামীর পাশে থেকে নার্সারী বাগানের কাজে সহায়তা করছে। সব সময় এই নার্সারী বাগানকে ঘিরেই মোমিনুরের চিন্তা-চেতনা। মনযোগী ও পরিশ্রমের ফসল হিসাবে মোমিনুর এখন একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত নার্সারী ব্যবসায়ীর খেতাব অর্জন করেছে। তার নার্সারী বাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের চারা। ফলজ চারার মধ্যে আম, জাম, কাঠাল, কমলা, মাল্টা, থাই জাম্বুরা, বেদনা লিচু, ডালিম, থাই পেয়ারা, হাইব্রীড আতা, গ্রীন ড্রপ, রেড জামরুল প্রভৃতি। ঔষধি গাছের মধ্যে ঘৃত কুমারী (এলোভেরা), জাতী ফুল, ভুঁই কুমড়া, ডায়াবেটিস, চন্দন ইত্যাদি। বনজ গাছের মধ্যে লম্বু, মেহগনি, উইপিন, দেবদারু, চটকা, শিশু, ফাই বট, বনছায়া বট, ইউক্যালেকটার উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ফুল ও সৌন্দর্য বর্ধন গাছের মধ্যে দেশীয় নানান প্রজাতির ফুল, বিদেশী অ্যারোমেটিক জুঁই, রঙ্গন, নয়নতারা, বেলি, ক্যাকটাস, গোলাপ, এ্যাজিলিয়ান, কিসম্যাস, গ্যালাজেলাক্স সহ ইত্যাদি ফুলগাছ । সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জাতের চারা মোমিনুরের নার্সারীতে পাওয়া যায়। নার্সারী ব্যবসা জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভাল চলে। কারন বর্ষা মৌসুমে চারার চাহিদা বেশি থাকে। তবে সারা বছরই কম বেশি অনেক প্রজাতির গাছ বিক্রি হয়ে থাকে।
মোমিনুর জানায়, প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ টাকার চারা এই নার্সারী থেকে বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকে প্রায় ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে তার নার্সারীতে প্রায় ১০ লাখ টাকার চারা রয়েছে। সে আরও জানায়, নার্সারী ব্যবসা একটি অতি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় অতি অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে লাভের দেখা পাওয়া যায়। তবে সহজ শর্তে নার্সারী ব্যবসার বিপরীতে ঋন পেলে এটিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে অত্যন্ত সহজতর হয়।
স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, মোমিনুর এ এলাকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কঠোর পরিশ্রমে এখন সে লাখপতি। ক্ষুদ্র নার্সারী থেকে ধীরে ধীরে বড় নার্সারীর মালিক বনে গেছে। তার দেখাদেখি এলাকায় এখন অনেকেই নার্সারী গড়ে তুলেছে আবার কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছে।
মোমিনুরের বিসমিল্লাহ নার্সারীতে প্রতিদিন বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সবুজের সমারোহে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন এলাকার যুবক-যুবতীরা ছবি বা সেলফি তুলতে উপস্থিত হয়। নার্সারী বাগান ঘুরে দেখলে মন-প্রান জুড়িয়ে যায়। অত্যন্ত সু-সজ্জিত করে সাজানো গাছের চারা সত্যিই দৃষ্টিনন্দন দেখা যায়। নার্সারী বাগানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সিনথিয়া, রুবেল, আশিক ও রাইসা জানায়, গ্রামের মধ্যে এত সুন্দর একটি নার্সারী অকল্পনীয় ব্যাপার। বন্ধুদের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিজ চোখে দেখতে এসেছি। নাম না জানা অনেক অপরিচিত সুন্দর সুন্দর গাছ দেখে খুব ভাল লেগেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন