নিন্মবিত্তদের কষ্টের কথা...
ফুটপাথ আমাদের ঈদ আনন্দের পোশাক কেনাকাটার ভরসা
আমি একজন দিনমজুর! প্রতিদিনই অন্যের জমিতে কামলা দেওয়াই আমার পেশা। অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়। তার পরেও সংসার সদস্য মা বাবা স্ত্রী সন্তানসহ আটজন। প্রত্যেকই আমার আয়ের উপর নির্ভর করে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছে।
তারই মধ্যে চলে আসলো রমজান মাস। রমজান মাসে যদিও কাজ কাম কম তার পরেও খরচটাও একটু বেশি মনে হয়। রমজান হতে না হতেই এসে গেলো ঈদল ফেতরের ঈদ। চিন্তা যদিও মনে মনে করে মাথায় রাখছিলাম ঈদের দিন বাবা মা স্ত্রী সন্তানদের কিছু নতুন পোশাক কিনে দিবো। তাই প্রতিদিন কাজ করতাম আর সেই মজুরির টাকা সংসার খরচ করে কিছু রেখে দিতাম।
তাই ঈদকে সামনে রেখে মনে মনে সন্তানদের ঈদ পোশাক কেনার জন্য প্রায় সময় বিভিন্ন দোকানে ঘুরা ঘুরি করি। কিন্তু বড় বড় দোকানে অনেক সুন্দর সুন্দর পোশাক দেখে মনে হচ্ছে এটাই আমার সন্তানদের জন্য মানাবে! কিনে দিলে খুশি হবে। কিন্তু যখন দাম শুনি তখনই হিসাব করে দেখি যে দাম/মুল্য আমার সাধ্যের মধ্যে নেই, অনেক কম। ফিরে আসি সেই সব মার্কেট থেকে। শেষ পর্যন্ত চলে আসলাম গরিব দু:খি নিন্মবিত্তদের আশা পূরণের ফুটপথে। রেডিমেড ছোট্ট ছোট্ট দোকানগুলিতে। সেখান থেকে আমার সাধ্যানুযায়ী ছেলে মেয়েদের ঈদের পোশাক কিনলাম।
-এমনই কষ্টের কথাগুলো বললেন কলারোয়ার দেয়াড়া ইউনিয়নের নিন্মবিত্ত অনেকে।
তাদের বক্তব্য- ভাগ্যিস ফুটপাথ এবং রেডিমেড দোকানপাট ছিলো! তা না হলে আমাদের মত গরীব মানুষ দিনমজুর লোকজন কি করে তাদের সন্তানদের মুখে ঈদের আনন্দের হাসি ফুটাতো। কষ্ট করে হলেও মা বাবার জন্য অল্প দামে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি টুপি কিনেছি এই ফুটপাথ থেকেভ।
এমন সব কষ্টের কথা বলছিলো গরিব অসহায় দিনমজুর রহিম। তার সাথে কথা বলার পর জিজ্ঞেস করলাম আপনার জন্য এবং স্ত্রীর জন্য কি কেনাকাটা করলেন?
তিনি কিছুক্ষণ মুখ নিচু করে রাখলেন এবং পরক্ষণেই চোখে টলমলে জল নিয়ে ছলছলমুখটা উঠিয়ে কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলেন আমাদের আছে না ভাই। গত বছর কিনছিলাম!
মা বাবা সন্তানদের নতুন পোশাক দিয়েছি তাতেই আমাদের অনেক আনন্দ অনেক শান্তি।
ভাই ভাগ্যিস ফুটপাথ এবং রেডিমেড দোকানগুলো ছিলো! তা না হলে এগুলোও আমাদের মত গরীব দিনমজুর মানুষের জন্যও সম্ভব হোতো না বলে কষ্ট ক্ষোভের কথা গুলো বলেন কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ানের সাধারন খেটে খাওয়া দিনমজুর আব্দুর রহিম চাষি।
তিনি আরো বলেন- অনেক টাকা খরচ করে ঈদের পোশাক কেনার সামর্থ নেই ভ্যান চালক, কৃষক, শ্রমিক দিনমজুরসহ বিভিন্ন্য ছোট খাটো কর্ম করে খাওয়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেক মানুষের। কিন্তু সন্তানের আবদার রাখতে হবে তার।
বিলাসবহুল মার্কেটগুলোর সামনে যেতেই যেনো ভয় হয়। দূর থেকে তাকিয়ে পুতুলের গায়ে পরানো পোশাক দেখেন। একটি একটি করে টাকা জোড়েন, আর মনে মনে আঁকেন মেয়ের জামার ছবি- কোনটা তার গায়ে মানাবে।
কিন্তু তিনি এও জানেন, এসব মার্কেট বা শো-রুম তার জন্য নয়। এমন অসংখ্য দিনমজুরের জন্য কলারোয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন্য ইউনিয়ানের বিভিন্ন্য হাট বাজারে গড়ে উঠেছে রেডিমেট পোশাকের দোকান।
এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে সকল প্রকার মানুষের ঈদ পোশাক কেনাকাটা করতে তৈরি হয়েছে সারা দেশে ঈদ কেনাকাটার নানান ধরনের পসরা।
নিম্নবিত্তদের ঈদ পোশাকের আয়োজনে উপজেলাসহ দেয়াড়া ইউনিয়ানের খোরদো বাজার, দেয়াড়া বাজার, পাটুলিয়া বাজার, ছলিমপুর বাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা খোরদো চাকলা বর্ডার গার্ড ব্রিজ সংলগ্ন চাকলা বাজারের, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ছোট্ট খাটো অনেক দোকান, এমনকি সাপ্তাহিক হাট ও এসব এলাকায় ছোট-মাঝারি দোকান গড়ে উঠে।
দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ও মোটামুটি। দেখা যায় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ানের বিভিন্ন হাটবাজার সমুহে নানান ধরনের ঈদের আনন্দের কেনাকাটার পসরা।
দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো বাজারের এমনই একটি পোশাক দোকানের মালিক রয়েল হাসান জানান- রোজার শুরু থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে। একই দোকানে কথা হয় এক ক্রেতার সাথে।
তিনি জানান- শহরের দোকান ছাড়া এমন এলাকাভিত্তিক বাজারে পোশাকের দাম তুলনামুলক কম। পোশাকের মানও খারাপ না। যে কারণে এখান থেকে পোশাক কিনছেন তিনি।
অন্য আরেক মাসুম বস্ত্রালয়ে গেলে সে দোকানেও ভিড়। ঐ দোকানের মালিক আব্দুর রহমান মিন্টু জানান- ঈদের দিন যত কাছাকাছি আসছে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে। যদিও রোজার প্রথম দিকে একটু কম ছিল তবুও সামনের দিনগুলি আরও ভালো হবে বলে মনে করছেন।
সেখানে ইজিবাইক চালক হোসেন কেনাকাটা করছিলেন। তিনি জানান- অল্প টাকায় ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। তার জন্য পরিবারে সবার জন্য কেনা-কাটা করছেন।
ভাই ভাই বস্ত্রালয়ের জাহিদ হাসানের দোকানেও বেশ ভালো কেনাকাটা চলছিল। এ দোকানে কথা হয় এক স্কুল ছাত্রীর সাথে। তিনি জানান- রোজা থেকে শহরে কেনাকাটা করতে যাওয়া ঝামেলা। আর বাড়ি পাশের দোকানে কম দামে ভালো মানের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
রেজওয়ান বস্ত্রালয়, ঈমা গার্মেন্টস, এবং আব্দুস সবুর, আছানুর রহমান, ছাইদ হোসেন, এছাড়াও পার্শ্ববর্তী চাকলা বাজারের জিয়াউর রহমান লিটন হোসেন, রফিকুল ইসলাম ইমিটেশন (দোকানী) নামক এক বস্ত্র দোকানসহ সকল দোকানে দেখা যায় ক্রেতাদের আনাগোনা।
এদিকে বাজারের ফুটপাথে দোকান গড়ে উঠায় মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা কম দামে এবং ভালো পোশাক কিনতে পারছেন। হাতের কাছে মানসম্মত পোশাক পাওয়া এসব দোকানে ভিড় করছে ক্রেতারা।
বাজারের প্রায় জায়গায় গড়ে উঠা ফ্যাশান হাউসের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত লোকজনের আনাগোনা বেশি।
বিক্রেতারা জানান- এসব দোকানে বড়দের জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, গ্যাবাডিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, টি-শার্ট ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা ও বড়দের পাঞ্জবি ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ছোটদের পাঞ্জবি ১৫০ থেকে ৫শ’ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।
আর মেয়েদের থ্রি-পিস ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দামে মিলছে।
ছোট ছেলেদের হাফ-প্যান্ট ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা , থ্রিকোয়াটার ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা, জিন্স প্যান্ট ১৮০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে যাচ্ছে টুটিসহ অন্যান্য জিনিস পত্র।
ছোট মেয়েদের ফ্রক ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় মিলছে সাথে নানান ডিজাইনের সাড়ি লুঙ্গি।
এছাড়াও ভিড় জমেছে চামড়াজাত জুতা ও নানান ধরনের বাচ্চাদের কেচ-সু দোকান ও কসমেটিক্স সামগ্রীর দোকানগুলোতে।
ঈদের আগমুহুর্ত পর্যন্ত কেনাকাটা ভালো হবে বলে মনে করছেন সকল দোকানিরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন