কলম থেকে কলাম...
ফিরেছেন উৎপল, ফিরুক নিখোঁজের দল
ফিরে এসেছেন সাংবাদিক বন্ধু উৎপল দাস। নতুনধারার রাজনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি হচ্ছি ছোট্ট ছোট্ট চেষ্টা নিয়ে। আর সেই চেষ্টার সূত্রতায় ৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি প্রতিকী সাগর-রুণী-উৎপল সমাবেশ করেছিলো। লক্ষ্য ছিলো একটাই- সাগর-রুণী হত্যার বিচার ও সাংবাদিক উৎপলের সন্ধান চাই। আজ যখনই মনে হচ্ছে উৎপল ফিরে এসেছেন, তখনই একটা বিজয়ের হাসি হেসে উঠছি।
এই বিজয়ের হাসি হাসতে চাই সকল গুম হওয়া মানুষের ফিরে আসার সংবাদে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালিত দেশে সবার আগে গড়ে তুলতে হবে বিনয়-আনন্দ-নিরাপত্তা আর ভালোবাসার মেলবন্ধন। যাতে করে মানুষ সবার আগে ভাবে মানবতার কথা-মানবাধিকারের কথা।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক, সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বজনের ছবি হাতে সমবেত গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হন। তারা কান্নার জলে ভিজতে ভিজতে বলেন, পরিবারের সামনে থেকে আমাদের ভাইদের, সন্তানদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চাক্ষুষ প্রশাসন তুলে নিয়ে গেলেও তারা বলছেন কিছু জানি না। আমরা যেন পরের বছরও একই দাবিতে সমবেত না হই এ জন্য সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এমন আকুতি জানিয়েছেন চার বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের বোন আফরোজা ইসলাম। গুমের শিকার ২৭টি পরিবারের সদস্যদের মত অবিরত তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে চেতনার বাতিঘর। তারা আজ উচ্চারণ করছে- ‘আজ আমাদের গুম পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে হচ্ছে। এই বিচার চাইতে গুম হওয়া মুন্নার বাবা, পারভেজের বাবা মারা গেছেন। পিন্টুর মা ও আমার মা অসুস্থ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমি আমার ছেলেটাকে ফেরত চাই। আমি আমার মৃত্যুর আগে ছেলেটিকে দেখতে চাই।’
এ সময় গুমের শিকার ব্যাক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রতিটি মুখে ছিল উৎকণ্ঠা আর কষ্টের ছাপ। গুম হওয়া সুমনের বোন ফেরদৌসী রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমি চার বছরে ২০ বারের মতো এখানে দাঁড়িয়েছি। কথা বলার মতো শক্তি আর থাকবে কি না, জানি না। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সুমনসহ বেশ কয়েকজনকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ওই সময়কালে অন্তত ১৯ জনকে তুলে নেয়া হয়েছিল যারা আর ফিরে আসেনি। ভাইয়ের খোঁজে সবার কাছে গেছি। কিন্তু ভাই তো আজও ফিরে আসেনি। এখন কার কাছে যাব? ফরমালি বক্তৃতা দিতে আর ইচ্ছে করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে অথচ থানায় গেলে বলে নিখোঁজের ডায়েরি করতে। এটা কী করে সম্ভব! নিখোঁজ এই ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে হলেও র্যাব কিংবা পুলিশের কর্মকর্তারা বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে তাদের খোঁজও দিতে পারেনি বাহিনীগুলো। দেশে-বিদেশি মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গত কয়েক বছরের গুমের ঘটনায় সরকারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারি কর্তাব্যক্তিরাও তা অস্বীকার করে আসছেন।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য হলো- ‘আতঙ্ক নিয়ে থাকি; আবারও যদি কোনো ফোন আসে যে এসব পরিবার থেকে আরও কেউ হারিয়ে গেছে। সুমনের সঙ্গেই তুলে নেয়া হয় ছাত্রদলের নেতা পারভেজ হোসেনকে। তখন তার এক বছর বয়সী মেয়ে রিদি হোসেন এখন পাঁচ বছরের; কথাও বলতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে এসে রিদি বলে, ‘পাপা আমি বড় হচ্ছি। আমার সাথে খেলবে না? ফিরে এস পাপা। পাপাকে ফিরিও দাও।’
রিদির পাপাকে ফেরত পাওয়া যাবে কি না জানি না। তবে এতটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, যদি সরকার-পুলিশ-প্রশাসন নীতি-আদর্শের সাথে তৈরি হলে; ভোভ- মোহের উর্ধ্বে থেকে কাজ করলে উৎপল দাসের মত করে সকল গুম হওয়া ব্যক্তিকে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ। বিশেষ করে বললে বলা যায়- স্বরাষ্টমন্ত্রী যেদিন বললেন- ‘ধীরে ধীরে সবাইকে পাওয়া যাবে।’ তার ঠিক ২৪ দিন পরই পাওয়া গেলো উৎপলকে। আমরা চাই উৎপল-এর মায়ের বুক থেকে কষ্টের পাহাড় নেমে গেছে; এমনি নেমে যাক কষ্ট পাহাড় সবার বুকের উপর থেকে। যারা ভাই-সন্তান-স্বামী হারিয়ে এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছেন।
আরেক ভাই হারানো বোন দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতে সেদিন বলেছিলেন, বাসা থেকে ভাইকে তুলে নেয়া হয়। জানি না, ভাই বেঁচে আছে কি না! বেঁচে থাকলে ফেরত চাই। সংবাদ সম্মেলনে আসা অন্যরাও অনিশ্চিত তাদের স্বজনের বিষয়ে। এই স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানান, প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর এই দিনটি পালন করা হলেও এবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের সঙ্গে মিল রেখে তারা পালন করছেন।
গুমের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে বলেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন। একই সাথে তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, অনেকগুলো গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের সাথে সাথে পাশের দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি। ফরহাদ মজহার ভাগ্যবান, তার স্ত্রী ভাগ্যবান, কারণ ফরহাদ ফিরে এসেছে। ফরহাদ জীবিত ফিরে আসার অন্যতম কারণ পুলিশ ও র্যাবের সক্রিয়তা। সেদিন যদি পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় না হতো, আজকে ফরহাদ মজহার ফিরে আসতে পারত না। র্যাব আর বিডিআর (বিজিবি) সক্রিয় না হতো তাহলে হয় তার মৃতদেহ পাওয়া যেত অথবা তার বডিটা পাওয়া যেত সালাউদ্দিনের মতো ভারতের মাটিতে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারে পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘আপনি কেন এই মায়ের, এই বোনের-ভাইয়ের কান্না শুনতে পান না। আপনি মানবতার নারী হিসেবে পরিচিত হতে চলেছেন, মানবতার মা হিসেবে আপনাকে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমি, আমরা সবাই বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি। অনুগ্রহ করে এই অমানবিক কাজটা বন্ধ করুন। তা না হলে এই মুক্তিযুদ্ধ, যেটা নিয়ে এত বড়াই করি। তা অর্থহীন হবে। একই আয়োজনে কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক আবার কখনো অরাজনৈতিক সংগঠনের দাবীদার নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহামুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, আমি নিজেও এক সময় গুমের প্রচেষ্টার শিকার হয়েছিলাম। সেই অনুভূতির কথা আমি গত বছর বলেছিলাম। এখানে যারা কথা বলেছেন। তারা বলেছেন যে অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগ নেয় না। অথবা চাপের মুখে অভিযোগ নিলেও কোনো তদন্ত হয় না বা তদন্তের অগ্রগতি হয় না। আমি নিজে আওয়ামী লীগ করেছি বহুদিন। বড় বড় দলগুলোর মধ্যে যে রকম প্রবণতা দেখি, যিনি মূল দায়িত্বে থাকেন… প্রধানমন্ত্রী তাকে যারা পরামর্শ দেন, এই লোকগুলো নিজেদের, প্রধানমন্ত্রীর কিংবা শীর্ষ কর্মকর্তার এবং দেশের ক্ষতি করছেন।
মান্না সাহেবের মত দুই নৌকার যাত্রী ব্যতিত অধিকাংশ মানুষই আজ যখন তখন উচ্চারণ করেন- বাঁচার মত বাঁচতে চাই; দ্রব্যমূল্য কমানো চাই-খুনগুম বন্ধ চাই। কেবলমাত্র মান্না সাহেবরাই থাকেন দুই নৌকায় পা দিয়ে। রাতের বেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-পুলিশ-প্রশাসন আর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মিটিং; দিনের বেলায় জনগনের পাশে থাকার অভিনয়। যদি কাই না হয়; দেড় বছর জেল খাটার পর কিভাবে আবার সেই আওয়ামী লীগের জন্য- শেখ হাসিনার জন্য নিবেদিত থাকেন কেন। কেন তিনি বলেন যে, জাতির জনক কন্যার হস্তক্ষেপ চাই! তার মানে কি এই দ্াঁড়ায় না যে, যেই থালে খান, সেই থালই ফুটো করেন; আবার তালি দিয়ে চালিয়ে যান।
আমার তো মনে হয় যে, যদি মান্না সাহেবের মত অবিরত তৈলমর্দনকারী রাজনীতিকদেরকে শেখ হাসিনা আজকে ডেকে বলেন যে, যা হওয়ার হয়েছে; তুমি চলে আসো; সামনে নির্বাচনে নমিনেশন দেয়া হবে। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের পক্ষে যেসব কথা তিনি এখন বলে বলে জনপ্রিয়তা তৈরি করেছেন, সেই সকল কথার গুড়ে বালি দিয়ে নির্বিঘেœ নাগরিক ঐক্য বিলুপ্ত করে রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আবারো ফিরে যাবেন। যেভাবে জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ আবার নাগিরিক ঐক্য করেছেন; ঠিক সেভাবে বদলে যাবেন নিজের প্রয়োজনে। এই প্রয়োজনের রাজনীতিকে না বলে লোভ মোহহীন নিরন্তর রাজনীতিক হিসেবে বলবো- আমরা গুম বা খুন নয়; আলোর পথযাত্রী হতে চাই। এগিয়ে যেতে চাই নির্বিঘেœ নিরাপদ দেশ আর মানুষের কল্যাণে। আর সেই এগিয়ে চলায় আমাদের পাশে তারাই থাকবেন, তারাই উৎসাহ যোগাবেন; নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকে যারা মন থেকে লালন করেন, ধারণ করেন। এই এগিয়ে চলার সূত্রতায় অন্তত সবাই সতর্ক থাকবে, পাশে ডাকবে; অন্যায়-অপরাধমুক্ত-খুন-গুমমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিরন্তর রাজপথে…
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন