ফজর নামাজের ফজিলত (পর্ব-১)
আল্লাহতায়ালা ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো নামাজ। নামাজ চিন্তা ও মননের শুদ্ধতায় প্রাণ সঞ্চার করে। দুঃখ কষ্টে মানবের বন্ধু ও সাহায্যকারী হয়।
নামাজ হলো ওই মহান ইবাদত যা মানুষকে চাল চলন ও চরিত্রকে নির্মাণ করে। ভেতরে ও বাহির পরিশুদ্ধতায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। নামাজ ওই ইবাদত যা মৃত হৃদয়কে সজীব ও উজ্জীবিত করে। ঈমান ইয়াকিনের উঁচু শিখরে পৌঁছে দিয়ে গড়ে তুলে প্রকৃত মানবরূপে। নামাজ হলো মানুষের দুঃখের প্রলেপ ও বিপদ থেকে পরিত্রানের একমহা সোপান।
ফজর নামাজের গুরুত্ব: কোরআন হাদিসে পাঁচবার নামাজ পড়ার ফজিলতের কথা এসেছে। জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার গুরুত্ব প্রদানকরীদের জন্য রয়েছে বড়ই সুসংবাদ। ওয়াদাও রয়েছে তাদের জন্য। মহা পুরস্কারের। বিশেষত ফজর নামাজের ফজিলত ও এর জন্য মুসলিমদের বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) এর হাদিস- যে ব্যক্তি দুই রাকাত নামাজ তথা ফজর ও আসর নিয়ম মাফিক পড়ে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারি)। অন্য হাদিসে রয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তি কখনো জাহান্নামে যাবে না যে ব্যক্তি সূর্যদয়ের পূর্বে তথা ফজর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে তথা আসর নামাজ নিয়মিত পড়ে (মুসলিম)।
এক বর্ণনায় রয়েছে দিন রাতে ফেরেশতারা তোমাদের নিকট দলে দলে এসে ফজর ও আসরের সময়ে মিলিত হয়। অতঃপর ওই সকল ফেরেশতা যারা তোমাদের কাছে ছিলো তারা আসমানে চলে যায়। আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে জানতে চান অথচ তিনি সর্বজ্ঞ, তোমরা আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এসেছো? ফেরেশতা জানান, তাদের আমরা নামাজে রেখে এসেছি আর নামাজরত অবস্থায়ই তাদের কাছে গিয়েছিলাম (বুখারি)।
এক বর্ণনায় রয়েছে- রাসূল (সা.) চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখে বললেন, তোমরা তোমাদের রবকে এভাবেই দেখবে যেমনি চাঁদ দেখছো। তোমাদের বিন্দু পরিমাণও সংশয় লাগবে না। এজন্য যদি তোমরা সূর্যোদয় অস্তের পূর্বের নামাজগুলোকে গুরুত্ব দিতে পার তাহলে অবশ্যই দেবে। তারপর এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ‘সূর্যোদয় ও অস্তের পূর্বে নিজ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (বুখারি)।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতে পড়ল সে যেন অর্ধরাত ইবাদত করল আর যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাতে পড়ল সে যেন পুরো রাত ইবাদত করল (মুসলিম)।
এক হাদিসে আছে- লোকজন যদি জানত এশার ও ফজর নামাজে কী সওয়াব তাহলে সাওয়াবের আশায় মসজিদে চলে যেতো। চাই তা হেঁচড়িয় হেঁচড়িয়েই হোক না কেন (বুখারি)। অপর এক হাদিসে রয়েছে, রাসূল (সা.) এর সামনে এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করা হলো যে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে (ফজর নামাজ পড়ে না) তখন রাসূল (সা.) বললেন, এমন ব্যক্তির কানে শয়তান পেশাব করে (বুখারি)।
আমাদের সমাজের বাস্তবতা: কিন্তু আমাদের সমাজের করুন চিত্র হলো, মুসলিম জাতির বড় সংখ্যক লোক নামাজের মতো মহান ইবাদত থেকে গাফেল। জুমা ও ঈদ ছাড়া তাদের মসজিদে আসার সুযোগ হয় না। জনসাধারণের বিপুল অর্থে শহর গ্রাম ও জনপদে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। যেগুলো দর্শনীয় ও খুবই জৌলুসপূর্ণ। কিন্তু নামাজির সংখ্যা এক কাতার বা দু’কাতার। বাকি মসজিদ বিরান।মুসলিম জাতির অবজ্ঞার প্রতি করুনা হয়। যে সকল লোক পাঁচওয়াক্ত নামাজে মসজিদে হাজিরা দেয় তাদের অধিকাংশই বুড়ো বয়স্ক। যাদের জীবন প্রদীপ নিভু নিভু। জীবনতরী তাদের তরিতে। যুবকদের সংখ্যা হাতে গোনা অল্পই। এ চিত্র হলো সব নামাজের। ফজর নামাজের সার্বিক চিত্র খুবই দুঃখজনক। চার ওয়াক্ত নামাজে যারা জামাতের গুরুত্ব দেয় কিন্তু ফজর নামাজে তাদের অধিকাংশই উদাসীনতার ঘুমে বিভোর থাকে। জামাত ছুটে যায় তাদের। এ বাস্তবতা খুবই মারাত্নক দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়। ভাবনারও বটে। ফজর নামাজে উদাসীনতা আলস্যের কী কারণ? ঘুম না ভাংগার হেতু কী? নিম্নে এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনাই উদ্দেশ্য।
ঈমান ও ইয়াকিনের অভাব: একটি বিষয় যার কারণে সঠিকভাবে আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এর প্রভাবে প্রভাবিত, তা হলো ঈমান ও ইয়াকিনের সম্পদ হাতছাড়া হওয়া। এটা অনস্বীকার্য যে, ভালো ও পূণ্য কাজে যে সুসংবাদ ও পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, অনুরূপ পাপ ও অন্যায়ে যে ধমকি ও গুরুতর শাস্তির কথা কোরআন ও হাদিসে বিবৃত হয়েছে তার প্রতি আমাদের শরীয়তের দাবি অনুযায়ী আমাদের যে ঈমান থাকার কথা তার বড়ই অভাব। মুমিনের কাছে শরীয়তের যে দাবি যথার্ত। দীন ইসলাম কোরআন আমাদের জীবনে কী ভূমিকা রাখে? যা পেয়েছি ওয়ারিশ সূত্রে। নচেৎ অনুভব অনূভূতির বিচারে দীনের ওপর আমল করা যে আবেগ ভালোবাসা ও তার প্রতি পূর্ণ মূল্যায়ন ধীরে ধীরে আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে।
ঈমান ও ইয়াকিনের দুর্বলতার দরুন মুমিনের স্বভাব ভালোর দিকে অগ্রসর নয়। সৎ কাজের অভাবনীয় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি শুনেও তাড়িত হয় না মন। জেগে উঠে না আবেগ। শত ধমকি সতর্কবার্তায় মন হয় না নরম। কেঁপে উঠে না অন্তর। ফলশ্রুতিতের মুমিন আজ বন্দি প্রবৃত্তির হাতে। শান্তি ও আরাম প্রিয়তায় মত্ত। পরকালের প্রতি নির্ভীক।
ঈমান ও ইয়াকিনের দুর্বলতায় দরুন ফজরের সময় স্বভাবতই মানুষ যখন ঘুমে বিভোর, শান্ত পরিবেশ, কোমল বায়ু যা ঘুমকে করে আরো গভীর মুমিন বান্দা তখনো জাগ্রত হয় না। ফজর নামাজের প্রতিশ্রুত মহাপুরস্কার থেকে হয় বিরত। বুঝার জন্য রাষ্ট্রপ্রতি কাল প্রভাতে আমাকে ডেকেছেন। সকালেই আমাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত করা হবে। সে কী ওই রাতে সুখ নিদ্রা যাবে? যদি ঘুমতে যায় তাহলে এটা কী চিন্তা করা যায় সে সকালে উঠবে না? দ্রুত রাজদরবারে উপস্থিত হবে না? না না এ ব্যক্তি কখনো এমনটি করবে না।
দুনিয়ার বাদশাহর খাতিরে মানুষের যখন এ অবস্থা পার্থিব লাভের আশায় সুখ নিদ্রাকে বিসর্জন দিতে পারে তাহলে ফজর নামাজে অলসতার করার কী অর্থ? বাহ্যত এটাই হলো ঈমান ও ইয়াকিনের দুর্বলতা। আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা সংকট। এজন্য আবশ্যকীয় হলো আমাদের ঈমান ও ইয়াকিনের প্রদীপকে প্রোজ্জ্বলিত করা। বুযুর্গ মনীষীদের সংশ্রবে ধন্য হওয়া। কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াতে মনোযোগী, সীরাতে নববি (সা.) পাঠ করা হলে আমাদের হৃদয়ের মৃত নদে জোয়ার বইবে। পাঁচবার নামাজ পড়া সহজ হবে। চলবে…
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন