কলম থেকে কলাম..
‘পুলিশের উবার ডাকতে নেই…’
ঘটনাটি আজ (৩০জুলাই) বিকেলের। আমি ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ছিলাম। নিরাপত্তার জন্য আমি ঘটনাস্থলের নাম উল্লেখ করছি না।
আমি উবার বাইকের ভাড়া দিচ্ছিলাম, ভাড়া মোট ১০৭ টাকা। ১০০০ টাকার নোট বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিতেই বলল, “স্যার ভাংতি দিলে ভালো হয় ৯০০ টাকা ফেরত দিলে আমি খুব অসুবিধায় পরে যাবো।”
আমি আবার তার হাত থেকে টাকা টা মানিব্যাগে নিলাম এবং খুচরা টাকা মিলাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। হঠাৎ করেই উবারের লোকটি আমাকে ডেকে বলল, “স্যার ওই দেখুন আপনাকে মনে হয় ছেলেটি ভিডিও করছে”।
আমি মাথা উঠিয়ে দেখি হ্যা সত্যি এক স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলে খাম্বার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের লেনদেনটি মোবাইলে ধারন করছে।
ছেলেটা লিকলিকে কালো, চুল গুলো মোরগ কাট করা খুব Yo Yo boy টাইপ। শার্ট ইন করা নেই, পরিহিত জুতাও স্কুল সু নয়। আমাদের ভাষায় চরম বখাটে লুক তার।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না ঘটনাটা কি ঘটতে চলেছে। আমি দ্রুত তার কাছে যাই এবং বাইকের কাছে এনে জিজ্ঞেস করি ভাইয়া কি করছিলে তুমি আড়ালে দাঁড়িয়ে?
সে আমাকে প্রতি উত্তর দিলো “বাইক থামিয়ে আপনার টাকা নেয়ার দৃশ্য ধারন করছিলাম এবং এটা ফেসবুকে ইউটিউবে আপলোড করে জনতাকে দেখাব পুলিশ কিভাবে ঘুষ খাচ্ছে।”
কথা শুনে উবারের ভাইজান জিব্বায় কামোর কাটলেন আর আমার মনে হল আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি প্রচন্ড মাত্রার বদরাগী।
সাথে সাথে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে খুব করুন সুরে বললাম, ভাইয়া আমি তো উবারের ভাড়া দিচ্ছি আমার সাথে ওই ভাইজানও বলল কিন্তু তাতেও ওই ছেলেটির বিশ্বাস হল না।
মূহুর্তের ভিতরে সে আবার ফোন বের করে ভিভিও করছে এবং গলা ফাটিয়ে ফাটিয়ে বলতে লাগল- “দেখুন পুলিশের কুকর্ম প্রকাশ্যে টাকা নিচ্ছে মটর সাইকেল চালকদের কাছ থেকে……… (নানান কথা)।”
সাথে সাথে শত শত লোক জমা হয়ে গেল, ভীড় জমে গেলো, এ যেনো এক সাপ বেজির খেলা।
আমরা দুই জন লোক কিছুতেই বুঝাতেই পারছিলাম না যে আসল ঘটনাটা কি। ছেলেটির অকাট্য বিশ্বাস বাইক চালক আমার ভয়ে এখন আর স্বীকার করছে না যে আমি তার থেকে টাকা নিচ্ছিলাম।
বাধ্য হয়েই ছেলেটির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলাম।
উবারের ভাইজানও নিজের গা বাচাতে চলে যাবার পাইতারা করছে। আমি তার বাইকের চাবি ও ফোন নিয়ে এক চায়ের দোকানে বসালাম। লোকের ভীড় পিছুই ছাড়ছে না। এর ভিতরে দেখি সেই ছেলেটির আরো কিছু বখাটে বন্ধু এসে হাজির। তাদেরও ওই একই অবস্থা পোশাক পরিচ্ছেদের। ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে হয়েই যাচ্ছে। আমি উপায় অন্তর না পেয়ে থানায় কল দিই কারন পরিবেশ কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না।
কিছুক্ষন বাদে থানার পুলিশ এলো আমি আমার ফোন বের করে দেখাই আমার উবার এ্যাপের প্রুফ। এবং সব খুলে বলি উবারের ভাইজানও বুঝিয়ে বললেন। ওই ছেলেটারও ফোনের ভিডিও দেখলেন স্যার।
স্যারও বুঝতে পারলেন ঘটনাটা। তিনি শুধু জানতে চাইলেন কি চাই আমি।
“আমি এক কথায় উত্তর দিই মামলা করতে চাই।”
যাই হোক পরে ছেলের বাবা আসে থানায় আমি আর মামলা দেই নি। কারন জেল কি ভয়ানক তা পুলিশের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ১৪দিন জেলে থাকলে এ ছেলের জীবন শেষ এটা নিশ্চিত। কিন্তু আজ যদি আমার এই ভিডিও ভাইরাল হত আমার চাকরীও যে শেষ হত এটাও নিশ্চিত।
আসলে ঘটনা কি ছিল আর বানালো কি ছেলেটা।
সব শেষে সবার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব- না জেনে, না বুঝে, নিশ্চিত না হয়ে কখনই পুলিশ বা আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স বা এমন কোনো সংস্থার নামে ফেসবুকে খারাপ কিছু বলতে যাবেন না। এটা আপনার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে।আপনি নিশ্চিত হন, প্রমানসহ অভিযোগ দিন।
কিন্তু লাইক, কমেন্টের, আশায় বা একটু ফেমাস হবার আশায় এমন ভুল করবেন না। এমন অনেক দেখেছি মিথ্যা পোষ্ট পুলিশের নামে। পরে যারা এই কাজ করেছে তাদের ঠিকানা জেলেই হয়েছে।
কারন পুলিশের নামে যেকোনো পোষ্ট খুব দ্রুত ভাইরাল হয় আর পুলিশকে গালাগালি করে অন্যরকম পৈচাশিক মজা পায় জনগন।
আজ নিজেই এই মিথ্যা পোষ্টের শিকার হতে যাচ্ছিলাম আমি। আমার চাকরী যেতো, আমার পরিবার মুখ দেখাতে পারতো না সমাজে। বেঁচে থেকেও আমি লাশ হয়ে যেতাম শুধুমাত্র লাইক, কমেন্টের নেশায়, ভাইরাল হবার নেশায়। আর আমি যদি আজ সত্যিই মামলা দিতাম তাহলে কি হত ছেলেটার?!?!
সবার প্রতি অনুরোধ- লাইক, কমেন্ট, শেয়ার আপলোড এসবে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
লেখক:
বিপ্লব দেব নাথ
ইন্সপেক্টর অব পুলিশ (পুলিশ পরিদর্শক)।
প্রাক্তন অফিসার ইনচার্জ (ওসি),
কলারোয়া থানা, সাতক্ষীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন