চিকিৎসা নিতে নারাজ অসুস্থ শিক্ষকরা
নীতিমালার ভিত্তিতে সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে : শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন- বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সারা দেশে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ইতিমধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) জাতীয় সংসদে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তকরণ প্রসঙ্গে একাধিক সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী জানান- মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য দেশে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গাজীপুরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ নামে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষে আইন মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বর্তমানে শতকরা ১০০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। বেসরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকদের ন্যায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও মর্যাদা সমতাকরণ করা হয়েছে।
সরকারী দলের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে গৃহীত ২০টি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১০ হাজার ৬৯৪ কোটি ব্যয়ে প্রকল্পভুক্ত ৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ হতে প্রশাসনিক অনুমোদন জারি করা হয়েছে।
একই দলের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান- শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীদের আবাসিক সঙ্কট নিরসনে বর্তমান সরকার বিবিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন- দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় আছে। তবে ইতোমধ্যেই সরকার এ লক্ষ্যে আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে।
আমরণ অনশন: চিকিৎসা নিতে নারাজ অসুস্থ শিক্ষকরা
সরকারি অনুমোদনে কার্যক্রম চালিয়ে আসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার উত্তর পাশে আমরণ অনশনে করে আসছেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) অনশনের ১১তম দিনে এসে অসুস্থ শিক্ষকরা আর চিকিৎসা নিতে চাইছেন না। একটি বেসরকারি মেডিক্যাল টিম চিকিৎসা সেবা দিতে আসলে তাদের ফিরিয়ে দেন তারা।
ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনশনের ১১ দিনে দুইশোর বেশি শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থ শিক্ষকরা হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন না। আজ থেকে তারা স্যালাইন ও চিকিৎসা নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একটি বেসরকারি মেডিক্যাল টিম আজ চিকিৎসা দিতে এসেছিল। কিন্তু শিক্ষকরা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, সেটা যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দেখেন, তাহলে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে তাঁরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। এমপিওভুক্তির বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি এভাবেই চলবে বলে জানান তিনি।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, গত ১২ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীর অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সারাদেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি হলে সকলেই সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে যাবে।
এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ২৫ জুন থেকে তাঁরা আমরণ অনশন করছেন।
২০১০ খ্রিস্টাব্দের পর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে এসব শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা পাঁচদিন আমরণ অনশনের পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট বক্তৃতা দেন, সেখানে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ১০ জুন থেকে ফের রাজপথে নেমেছেন।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন