নির্বাচনের আগে এমপিওভুক্তি অনিশ্চিত!! অনেকের বিষ্ময় প্রকাশ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে করছেন শিক্ষক নেতারা। প্রায় সাড়ে নয় হাজার স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও করিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে বলে শিক্ষক নেতাদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। নির্বাচনের আগে কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাকর্তারা।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতারা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আবার সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন তাতেও নির্বাচনের আগে এমপিও না পাওয়ার ইঙ্গিত মেলে।
সচিবালয়ে বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রিসভা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেমাবার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যারা এমপিওভুক্ত না এবং সব প্রতিষ্ঠানের কাছে অনলাইনে আবেদন চেয়েছি। ইতোমধ্যে নয় হাজার ৪৮৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো আমরা যাচাই বাছাই করতেছি, কেবিনেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়েও ফিজিক্যালি যাচাই করবো। যাচাই বাছাই শেষ হলে এটা নিশ্চিত যে এবার এমপিও দেওয়া হবে, এটা আমি নিশ্চিত করতেছি। যাচাই বাছাইয়ের পরে উপযুক্ত সময়ে দেওয়া হবে। এটার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা।’
এমপিওর সংখ্যা কত হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অর্থপ্রাপ্তি সব কিছু মিলে সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দেব। কী পদ্ধতিতে দেব সেটাও সেখানে সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচনের আগে এমপিও দেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যাচাই বাছাই করে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক নেতা বলেন, আড়াই ঘন্টার মতবিনিময় ও মন্ত্রীর বক্তব্য এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব –এইসব মিলে আমার কাছে মনে হয়েছে নির্বাচনের আগে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না।
বেসরকারি শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং ৫ শতাংশ বৈশাখী ভাতার দাবি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারকে অবগত করেছি। ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। আমরা শিক্ষকের পক্ষে।
এদিকে, এমপিওভূক্তের অনিশ্চয়তার আশংকায় ক্ষোভ ও বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন অনেক ননএমপিও শিক্ষকরা। তারা বলছেন, নীতিমালায় সরেজমিন বিষয়টি উল্লেখ থাকা উচিৎ ছিলো। তাছাড়া একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা শাখা ও বিভাগ খুলতে হলে মন্ত্রণালয়, বোর্ড কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্টরা যাচাইবাছাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। এখানে আবার সময়ক্ষেপনের মাধ্যমে নতুন করে যাচাইবাচাই সাংঘর্ষিক কিনা তা অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত করণের দাবির পর সরকার যখন এমপিও করার সিদ্ধান্ত ও প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তখন শেষ বেলায় এসে আবার যাচাইবাচাই’র বিষয়টি নিয়ে অনেকে বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। তারা মনে করছেন, তাহলে এতোদিন কী হলো? কেনই বা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিলো ‘এমপিওভূক্ত করা হবে’। তাহলে সরেজমিন যাচাইবাচাই এতোদিন কোথায় ছিলো কিংবা এতদিন শুধুই কী মুখের কথা ছিলো?
৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে
৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতার ফাইল বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের এ সুখবর জানিয়েছেন।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী। সভায় উপস্থিত শিক্ষক নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় দুপুর ১টায়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ মতবিনিময় সভায় শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি দাওয়ার বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করেন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণের জন্য থোক বরাদ্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিও এবং সরকারিকরণ বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতারা আলোচনা করেন। একে একে শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য শোনেন শিক্ষামন্ত্রী।
সভাশেষে মন্ত্রী বলেন, এবার নতুন প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ- মাদরাসা-কারিগরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ হাজার ৪ ৯৮টি আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যাচাই-বাছাই চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে যাচাই-বাছাই চলবে। যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্ত করা হবে।’ এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভা শেষে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অবসর ও কল্যাণ তহবিলের ৭৫৭ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি।
সভায় মন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে নবগঠিত স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন, সদস্য-সচিব সৈয়দ জাফর আলী ও ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক বিপু চন্দ্র সরকার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আসাদুল হক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সহসভাপতি ও অবসর সুবিধাবোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আজিজুল ইসলাম, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলম সাজু, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার, স্বাধীনতা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহজাহান খান, বাংলাদেশ মাদারাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ হারুন-অর-রশিদ এবং বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু তার আধঘন্টার সূচনা বক্তব্যে শিক্ষকদের যাবতীয় দাবি-দাওয়ার বিষয় তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে শাহজাহান সাজু বলেন, অনেকদিন পর শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পেরেছেন। আমার সংগঠন মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা দেয়ার ঘোষণা দেবেন।
সভা শেষে বাংলাদেশ মাদারাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ হারুন-অর-রশিদ বলেন, নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় কামিল/ফাজিল/আলিম/দাখিল মাদরাসা প্রশাসনিক (অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, সহসুপার) পদে আরবি বিষয়সমূহে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা চেয়ে জেনারেল (নন অ্যারাবিক) শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদ বঞ্চিত করা হয়েছে। নীতিমালার এ বিষয়গুলো সংশোধনের দাবি জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী তাৎক্ষণিক কিছু জানাননি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন