নব্য জেএমবির নতুন কৌশল: কালোজিরা ও মধু বিক্রি
নব্য জেএমবির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সাংগঠনিক যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে নানা রকম পণ্য বিক্রির কৌশল নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কালোজিরা ও মধু হোম ডেলিভারি দেওয়া। আর এই হোম ডেলিভারি দেওয়ার ছলে তারা সংগঠনের বিভিন্ন নির্দেশনা, প্রচারণা পরস্পরকে পৌঁছে দেওয়াসহ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। সম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেফতার নব্য জেএমবি’র এক সদস্য আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছে।
র্যাব-৪-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার উনু মং বলেন, ‘উত্তরা লাইফ স্কুল ও কলাবাগান থেকে গ্রেফতার নব্য জেএমবির দশ সদস্যের মধ্যে দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে মেরাজ আলী (৩০) নামে জেএমবির এক সদস্য সংগঠনের মধ্যে নিজেদের যোগাযোগের মাধ্যম ও প্রচারণার বিষয়টি জানিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘‘মেরাজ আলী ২০১২ সাল পর্যন্ত সোনালী এক্সিম লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। এরপর সে চাকরি ছেড়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে একটি বাসায় একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। সেখানে বসে সে, ‘আস সাকিনা’ নামে একটি হোম ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করে।’’
র্যাব জানায়, ‘২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জঙ্গি তানভীর কাদেরীর সঙ্গে মেরাজের পরিচয় হয়। তারা দু’জন উত্তরার গাউছুল আযম এভিনিউ জামে মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়তো। তানভীরের বাসায় মেরাজ নিয়মিত পণ্য সরবরাহ করতো। ২০১৫ সালের শেষের দিকে মেরাজকে ব্যবসার কাজে ৫০ হাজার টাকা দেয় তানভীর। ওই টাকায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি একটি রুম ভাড়া নেয় সে। তখন তানভীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসায় থাকতো। গত বছরের অক্টোবরে আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে তানভীর নিহত হলে বাড়িওয়ালা বিষয়টি বুঝতে পেরে মেরাজকে বাসা ছাড়তে বলেন। এরপর মেরাজ সেখান থেকে চলে যায়।’
গত ৮ জানুয়ারি র্যাব-৪-এর একটি দল রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগান এলাকা থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সন্দেহভাজন ১০ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো, আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজী ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), মো. জিয়াউর রহমান (৩১), মো. কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মো. মিজানুর রহমান (৪৩), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আব্দুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), মো. শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬) ও শরিফুল ইসলাম (৪৬)।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার একটি বাড়িতে র্যাবের অভিযানকালে পাঁচতলা থেকে পড়ে নব্য জেএমবির অর্থদাতা সারোয়ার জাহান নিহত হয়। ওই সময় আশুলিয়া থানায় র্যাবের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে দুই দফায় রিমান্ড নেওয়া হয়। এর মধ্যে আল রাজী ওরফে লিটন ও মেরাজ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উনু মং বলেন, ‘দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা বলেছে, জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগের সূত্র হলো কালোজিরা ও মধু বিক্রি। এসব তারা নিজেদের মধ্যেই সরবরাহ করতো। এই হোম ডেলিভারির মাধ্যমেই তারা তথ্য আদান-প্রদান করতো।’
উনু মং আরও বলেন, ‘এই মামলার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মোট ২৩ জন আসামি। তাদের মধ্যে ৯ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ইতোমধ্যে আরও দু’জন মেজরের নাম আমরা জানতে পেরেছি। তবে তারা সাবেক না, বর্তমান তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’ আল রাজীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আল রাজীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। মেজর (অব.) জাহিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।’
তার স্বীকারোক্তির বিষয়ে র্যাব জানায়, আল রাজীর একমাত্র ছেলেকে উত্তরার লাইফ স্কুলে ভর্তি করায় সে। তার ছেলে প্লে, নার্সারি ও কেজি-১-এ লাইফ স্কুলে পড়ে। তার মামাত ভাই লাইফ স্কুলের শিক্ষক আব্দুর রহমানের মাধ্যমে লাইফ স্কুলে ২০১৫ সালের অক্টোবর/নভেম্বর মাসে মেজর (অব.) জাহিদের সঙ্গে পরিচয় হয়। জাহিদের মেয়ে ও রাজীর ছেলে লাইফ স্কুলের একই ক্লাসে পড়তো। রাজী প্রায়ই জাহিদের বাসায় দাওয়াদ খেতে যেত। তারা একসঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতো। সে লাইফ স্কুলের ‘হালাকা’তে অংশগ্রহণ করতো।
র্যাব জানায়, রাজী জবানবন্দিতে বলেছে, জাহিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। তার মোবাইল ফোনে জাহিদের নম্বরও ছিল। জাহিদের মৃত্যুর পর তার নম্বর ডিলেট করে দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উনু মং বলেন, ‘তারা যে নব্য জেএমবির সদস্য, তা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে তারা সহজে মুখ খুলতে চায় না। বিভিন্নভাবে তাদের কাছ থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে লাইফ স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন