দুইমাস আগেই বাড়িটিতে ওঠে ভাড়াটিয়ারা
দুই আস্তানায় রয়েছে ১৫ জনের মতো জঙ্গি
মৌলভীবাজারের দুই জঙ্গি আস্তানার একটিতে আট থেকে ১০ জঙ্গি এবং আরেকটিতে চার থেকে পাঁচ জঙ্গি রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ডিসি মহিবুল ইসলাম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মহিবুল বলেন, আমরা (সিটিটিসির সদস্যরা) পুলিশের সহায়তায় রাত থেকে বাড়ি দুটি ঘেরাও করে রেখেছি। জঙ্গিরা আমাদের ওপর গ্রেনেড ছুড়েছে, আমরাও গুলি চালিয়েছি। সোয়াট (কাউন্টার টেরোরিজমের বিশেষ ইউনিট) আসলে অভিযান চালানো হবে। ঢাকা থেকে সোয়াট টিম রওনা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। ঘটনাস্থলে বিপুল পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে আরও একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও সিটিটিসি। দুটি আস্তানাতেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, জঙ্গিদের প্রতিহত করতে এরই মধ্যে সব প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সিটিটিসির এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। এই জঙ্গিরা নব্য জেএমবি’র সঙ্গে যুক্ত বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
দুইমাস আগেই বাড়িটিতে ওঠে ভাড়াটিয়ারা
মৌলভীবাজার জেলার সদর এলাকার বরহাট এবং শহর থেকে কিছুটা দূরে ফতেহপুর গ্রামে দুটো বাড়িকে এখন ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোঃ: শাহ জালাল বলেন, দুটো বাড়ির মালিক একই ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডন প্রবাসী। দুটো বাড়িতে যারা অবস্থান করছে তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারনা করছেন। দুটো বাড়ি মিলিয়ে কতজন বাসিন্দা রয়েছেন তা নিশ্চিত না হলেও, দশ-এগারোজন বলে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, অপারেশনাল টিম সোয়াত, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর অভিযান চালানো হবে। বিভিন্ন জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে এই বাড়িটিকে ঘিরে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হয় বলে জানানা স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা।
মৌলভীবাজার মূল শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে খলিলপুর ইউনিয়নে ফতেহপুর গ্রামের একতলা টিনের চালা দেয়া বাড়িটি চারদিকে ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা।
খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অরবিন্দ পোদ্দার বাচ্চু জানান, এই বাড়িটিতে দুইমাস ধরে ভাড়াটিয়ারা এসেছে।
ফতেহপুর গ্রামের ওই বাড়িটির দুটো বাড়ি পরেই রাজু আহমেদ চৌধুরীর বাসা। ভোরবেলা তাদের ঘুম ভাঙে গ্রেনেড আর গুলির শব্দে। তিনিও জানান, দুমাস ধরে নতুন ভাড়াটিয়ারা বাড়িটিতে দুজন পুরুষ, একজন মহিলা এবং একটি শিশুও তিনি দেখেছেন।
সব মিলিয়ে ছয়-সাতজন থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন প্রতিবেশী চৌধুরী। তবে তাদের খুব একটা বাড়ি থেকে বের হতে দেখেননি। ওই বাড়ির খুব কাছাকাছি কোন বাড়ি নেই।
বাড়িটির তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি তাদের জানিয়েছেন, কোনও কিছু প্রয়োজন হলে পুরুষ সদস্য মাঝে-মধ্যে বের হয়ে বাজার করে আনতেন। অন্যদিকে মৌলভীবাজার শহরে বরহাট নামের এলাকায় ঘিরে রাখা বাড়িটি একটি নির্মাণাধীন ভবন। তৃতীয় তলার কাজ চলছে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, বাড়ির মালিক বহুবছর ধরে পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। সর্বশেষ তিনি জেলায় কবে এসেছিলেন সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই তাদের।
যে পরিচয়ে নাসিরপুরে বাড়িটি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা
প্রাণ-আরএফএলের কর্মী পরিচয়ে এক ব্যক্তি মৌলভীবাজারের খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আজ বুধবার ভোররাত থেকে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়ির কেয়ারটেকার ও বাড়ির মালিকের স্বজন জুয়েল এই তথ্য জানান। লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমানের ফুফাতো ভাই আতিক মিয়া জানান, দুই মাস আগে প্রাণ-আরএফএল এর কর্মী পরিচয় মাসিক সাত হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নেন। বাগান বাড়ির ভেতরে থাকা একতলা বাড়িতে দুই পুরুষ, একজন নারী ও দগুটি বাচ্চা থাকত। বাড়ির কেয়ারটেকার ও বাড়ির মালিকের স্বজন জুয়েল বলেন, মাসে সাত হাজার টাকা ভাড়ায় গত জানুয়ারিতে জঙ্গিরা এই বাড়িটি ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার সময় তিনি (সন্দেহভাজন জঙ্গি) নিজের নাম কামরুল তালুকদার ওরফে মাহফুজ বলে জানান। বাড়ি টাঙ্গাইল বলে জানান। বাড়িতে তিনি ছাড়াও তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালিকা ও তিন-চারটি শিশু ছিল।
বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় কামরুল তালুকদার ওরফে মাহফুজ যে ন্যাশনাল আইডি দিয়েছিল তা ভুয়া বলেও জানান জুয়েল। তিনি আরও জানান, আজ বুধবার ভোরে পুলিশকে নিয়ে ওই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার পর তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি জঙ্গি। এ সময় বাড়ির বাসিন্দারা দ্রুত দরজা বন্ধ করে বাইরে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। ঘটনাস্থল পরির্দশন করে সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ভেতরে ১১-১২ জনের মতো জঙ্গি থাকতে পারে। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, জঙ্গিদের প্রতিহত করতে এরই মধ্যে সব প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় একটি বাড়ি এবং খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামের একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা। দুটি আস্তানাতেই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাসিরপুর গ্রামের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পুলিশ মাইকিং করছে। এরই মধ্যেই ওই বাড়ির এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন