দাপুটে জয়ে টাইগারদের দুর্দান্ত শুরু
এই জিম্বাবুয়ে দল শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে লঙ্কানদের ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে এসেছিল গত বছরের মাঝামাঝিতে! ওই দলে সাতটি পরিবর্তন থাকলেও নতুন দুই অভিজ্ঞের অন্তর্ভুক্তিও তো আছে। সেই দলটাকে কিভাবেই না ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্রেফ উড়িয়ে দিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। টুর্নামেন্টটা তাই ৮ উইকেটের বড় জয়ে দুর্দান্তভাবেই শুরু হল স্বাগতিকদের।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবারের খেলাটা ছিল দুই দলের। কিন্তু খেলল আক্ষরিক অর্থেই একটা দল। বাংলাদেশ। আগে গোছানো বোলিং আর পরিকল্পনায় ৪৯ ওভারেই ১৭০ রানে গুটিয়ে দেওয়া প্রতিপক্ষকে। আর তারপর নির্ভার ব্যাটিংয়ে ২৮.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে করে ফেলা ১৭১ রান। গল্পটা তো শুধু এক দলেরই।
তবে এই গল্পের মাঝে আরো গল্প আছে। যে গল্পে বাংলাদেশের টেস্ট এবং টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খুবই উজ্জ্বল। ম্যাচের নায়কও বটে। ওয়ানডে অল রাউন্ড র্যাঙ্কিংয়ে রবীন্দ্র জাদেজার সাথে পয়েন্টের ব্যবধানটা যে এই সিরিজ থেকে আরো বেশ বাড়িয়ে নেবেন সেটা প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব। বল হাতে ম্যাচের প্রথম ওভারেই তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট। ওখান থেকেই প্রতিপক্ষকে পঙ্গু করে দেওয়ার শুরু। ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩ উইকেট।
এরপর আসে ব্যাটিংয়ের গল্প। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডেতে ফিরে দারুণ শুরুর পরও ১৯ রানে এনামুল হক বিজয়ের বিদায়। তাতে লক্ষ্য ছোটো হলেও তিন নম্বর জায়গাটাতে ফিরে ওটা স্থায়ী করার জন্য সময়টা বেশি মিলল সাকিবের। উইকেটে পা রাখতে না রাখতেই টানা তিন বলে তিন বাউন্ডারি। এক সময়ে বন্ধু-পার্টনার তামিম ইকবালকেও ছাড়িয়ে যান। দ্রুত ছুটেছে রানের চাকা। তামিমের সাথে জুটিটা ৭৮ রানের। তামিম অপরাজিত থেকেছেন ৯৩ বলে ৮৪ রান করে। মেরেছেন ৮টি চার ও একটি ছক্কা। ১৬ রানের আক্ষেপ তো থাকতেই পারে তার! মুশফিকুর রহীম তার সাথে জয় নিয়ে বেরিয়েছেন ১৪ রান করে।
তবে সাকিবকে বিদায় নিতে হয় এলবিডাব্লিউর শিকার হয়ে। নামের পাশে ৪৬ বলে ৫ চারে ৩৭ রান। তামিমের গল্পে কি নিজের দশম সেঞ্চুরিটা না পাওয়ার আক্ষেপ মিশে থাকবে? ঘরের প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে নিজেকে পরখ করে দেখেছিলেন। এবার ইনফর্ম ব্যাটসম্যান চাপহীন এই ম্যাচে শুরু থেকে আগ্রাসী হতে চাইলে অনেকটা লো স্কোরিং এই ম্যাচেও একটা সেঞ্চুরির গল্প লেখা থাকতে পারতো।
কিন্তু এই ম্যাচের মূল গল্পটা আসলে বোলারদেরই। তারাই না ব্যাটসম্যানদের সহজ একটা জয় তুলে আনার সুযোগটা করে দিয়ে গেছেন আগে। টস হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। আর ব্যাট করতে নেমে তারা প্রথমেই সামনে পেল দুই বাঁহাতি স্পিনারকে। সাকিব দুই উইকেট প্রথম ওভারটাতে তুলে নিয়ে শুরুতেই চাপের মুখে ফেলে দিলেন জিম্বাবুইয়ানদের। সানজামুলও অন্য প্রান্ত থেকে যেভাবে বল করছিলেন তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবীন মনে হচ্ছিল না। আগের দিন মাশরাফি বলেছিলেন, স্পিন তাদের মূল শক্তি। কিন্তু গত কয়েক বছরের সাফল্যে বড় ভূমিকা পেসারদের। হালে সেই পেসারদের সময়টা ভালো না গেলেও তাদের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক।
তিন পেসার তাই ছিল মাঠে। মাশরাফি বরাবর পথ দেখাতে ভালোবাসেন। দলের ৩০ রানের সময় তাই এই মাটিতে বরাবর ভালো খেলা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (১৫) নেই। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে ছিল পুরোনো নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার দারুণ চেষ্টা। চতুর্থ আঘাতটি তারই। কলপ্যাক চুক্তি থেকে জিম্বাবুয়ে দলে ফিরে প্রথম ওয়ানডেতে তাই ব্রেন্ডন টেইলর ২৪ রানে বিদায় নেন।
৫১ রানে নেই ৪ উইকেট। সিকান্দার রাজা এশিয়ার মাটিতে সাফল্য পান। এবার ৩০ রানের একটা জুটি গড়েছেন দুটি জীবন পাওয়া ম্যালকম ওয়ালারের (১৩) সাথে। ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা সানজামুলের একমাত্র শিকার। রাজা তবু টিকে থাকতে চান। রানের গতি বাড়ে না। এর মাঝে পিটার মুরকে (৩৩) নিয়ে ৫০ রানের একটি জুটি ষষ্ঠ উইকেটে। ৯৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কা তার ইনিংসে। তাতেই প্রমাণ, বাংলাদেশি বোলারদের এই বিপদেও খুব ভালোভাবে সামলেছেন একমাত্র রাজাই। দলীয় সর্বোচ্চ তারই।
এসবের মাঝে আরেকটা গল্প ফুটে ওঠে ম্যাচের ৪৮তম ওভারে। ৪ ওভার বল করেও তখনো কোনো উইকেট নেই রুবেল হোসেনের। পেসার শেষটায় গিয়ে টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করলেন। তাতে উইকেট শিকারের সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। এই মাইলফলকে রুবেলের আগে মাত্র ৪ জন বোলার পৌঁছাতে পেরেছেন। রুবেলের ওই আঘাতের পর শেষ উইকেটটা মোস্তাফিজের। ৫০ ওভার খেলা হয় না জিম্বাবুয়ের।
শুরুর মতো ম্যাচের শেষটাও বাংলাদেশের দারুণ। শেষেও কথা সেই একটা। খেলেছে তো শুধু বাংলাদেশই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ৪৯ ওভারে ১৭০ (মাসাকাদজা, মিরে ০, আরভিন ০, টেইলর ২৪, রাজা ৫২, ওয়ালার ১৩, মুর ৩৩, ক্রেমার ১২, জার্ভিস ৪*, চাতারা ০, মুজারাবানি ১; সাকিব ৩/৪৩, সানজামুল ১/২৯, মাশরাফি ১/২৫, মোস্তাফিজ ২/২৯, রুবেল ২/২৪, নাসির ০/১৫)।
বাংলাদেশ : ২৮.৩ ওভারে ১৭১/২ (তামিম ৮৪, এনামুল ১৯, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১৪*; জার্ভিস ০/১৫, চাতারা ০/২৬, রাজা ২/৫৩, মুজারাবানি ০/৩১, ক্রেমার ০/৪৬)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইম একাদশ, গদখালি ও পাথরঘাটা সেমিতে
কলারোয়ায় ৮দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় খেলায় ফাইমবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মাধবকাটিকে হারালো স্বাগতিকরা
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সাতক্ষীরা সদরের মাধবকাটি ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
সাতক্ষীরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখবিস্তারিত পড়ুন