কলারোয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী যশোর মণিরামপুরের মশ্বিমনগর ইউনিয়নের চাকলাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাল রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। অবশ্য এই চাষাবাদটা কলারোয়ার দেয়াড়ায় বেশী একটা দেখা যায় না তবে উপজেলার যুগীখালী ইউনিয়ন ও কামারালী এবং পার্শ্ববর্তী আংশিক কিছু এলাকায় মোটামুটি তালের রস সংগ্রহ করে বলে জানা যায়। তাছাড়া সবচাইতে বেশি লক্ষনীয় হচ্ছে খোরদো ব্রিজ পেরোলে বা কপোতাক্ষের এপাশ থেকে চোখ মেললে দেখা যায় প্রতিবেশী এলাকা হিসেবে চাকলাসহ অন্যান্য এলাকায় তাল রস সংগ্রহের দৃশ্য। যেটা প্রতি নিয়ত তাল গাছ চাষীরা কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো বাজার ও অন্যান্য এলাকায় তাল রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতি গেলাস তাল রস বিক্রি করে থাকেন ৫ টাকা দরে। গ্রীষ্মের গরমে মনকে সতেজ করতে তালের রস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
সরেজমিনে, কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নে তেমন একটা নজরে না আসলেও মনিরামপুরের চাকলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই সকল এলাকার গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে তালগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে। তালগাছে সহজে ঝুঁকিহীন ভাবে উঠার জন্য উপস্থিত বুদ্ধি খাটি ব্যবহার করেছেন বিশেষ উপকরন বাঁশের ঠেস যেটা গাছের গোড়ায় গেলেই লক্ষনীয়। তালের রস থেকে গুড় সংগ্রহ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর সেগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রয় করা হয়।

প্রতিদিন সকালে, দুপুরে ও বিকালে তিন ধাপে তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।এক ধাপে সংগৃহীত রস মুলত বেশীর ভাগ গ্লাস হিসেবে বিক্রি এবং অন্যান্যগুলো গুড় তৈরি করা হয় বলে জানান গাছিরা। এছাড়া তাল গাছ গুলিতে ছোট্ট ভাড় /গ্রাম্য ভাষায় বলে পুরুলী পেতে রাখার সময় তাল গাছের মৌচা বা খাদির ঝুলন্ত আগার মাথা সামান্য অংশ কেটে ফেলতে হয়। যে তাল গাছে তাল ধরে না তাকে জটা তালগাছ বলে। সাধারণত জটা গাছ বা তাল ধরা গাছ উভয় প্রকার তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।
এই বিষয়ে উপজেলা দেয়াড়ার পার্শ্ববর্তী চাকলা গ্রামের গাছি ফজলুর রহমান এবং আনিছউদ্দিনের সাথে কথা হলে বলেন, গরম যত বেশি হবে তাল গাছের রস তত বেশি হবে।
আরও জানান, প্রতিদিন উপজেলার দেয়াড়া ও পার্শ্ববর্তী মশ্বিমনগর ইউনিয়নের কাঁঠালতলা, পারখাজুরা, চাকলা, খোরদো বাজার এবং বিভিন্ন্য সড়কের মোড়ে ও খোরদো ব্রিজে তালের রস বিক্রয় করেন। যার প্রতি গ্লাস ৫টাকা বিক্রয় করা হয়। ঐ গাছির সাথে কথা বলার প্রক্কালে কয়েকজন যুবক উপজেলার খোরদো চাকলা ব্রিজের উপর বিক্রয়ের সময় মটরসাইকেল থামিয়ে সেখান থেকে তালের রস পান করেন। তাদের অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তারা জানান এখানকার তাল রস ভেজাল মুক্ত, টাটকা এবং অত্যান্ত মিষ্টি ও সু-স্বাদু। এই বিষয়ে আরও কথা হয় একই গ্রামের আরও কয়েক জন তালগাছীর সাথে তারা জানান, গরমের শুরুতে তালগাছ পরিষ্কার করে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করি।
একেকজন গননানুসারে তালগাছের কথা বলেন যে, ১৫,২৫,৩০টি করে তালগাছ চাষ করেছেন বলে জানান তাঁরা। বর্তমানে গড় মিলিয়ে ১৫-২০ টি গাছ থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি তাল গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ লিটার রস পাওয়া যায়। প্রতিদিন বিকেলে ও সন্ধ্যাকালিন সময়ে খোরদো বাজারসহ অন্যান্য বাজারে প্রতি গ্লাস রস ৫ টাকা করে বিক্রয় হয়। প্রতিদিন সব মিলে প্রায় আনুমানিক দেড় দুই হাজার টাকার রস বিক্রয় করে তারা।

উপজেলার খোরদো বাজার স্থানীয় লোকজন ও বয়োজোষ্ঠ অনেকেই জানান, এই এলাকায় এক সময় তালের রসের খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালের রস ও গুড়। কয়েক বছর আগেও এলাকার বিভিন্ন ক্ষেতের আইলের পাশে, রাস্তার দুই ধারে ছিল অসংখ্য তালগাছ। তাল গাছ সারা বছর অযন্তে অবহেলায় পড়ে থাকলেও গ্রীষ্মের মৌসুমে কদর বেড়ে যায়। অনেকাংশ তালের রস সু-স্বাধু ও মানব দেহের উপকারি এবং বেশি খেলে ঘুম ঘুম ভাব আসে রাতে এবং এই গ্রীষ্ম মৌসুমে একবার পাওয়া যায় তার কারণে মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই তালের রস।

Kalaroa News

---

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

---