আরো খবর
গ্রেপ্তার-রদবদল নিয়ে সিইসির আশ্বাস পেয়েছেন বিএনপি নেতারা
বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ এবং পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদলের দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আশ্বাস পেয়েছেন দলটির নেতারা।
শনিবার বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও তিন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, “আমরা দুটি বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি।দেশব্যাপী পুলিশি অভিযান, গ্রেপ্তার চলছে। বর্তমান জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরকারি লোক।
“সরকারের সাজানো প্রশাসন, মন্ত্রী-এমপি বহাল রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ভাবাই যায় না। এজন্যে ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গ্রেপ্তার বন্ধ এবং প্রশাসন-পুলিশে রদবদল করতে হবে।”
যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে’ তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“নির্বাচন কমিশন দাবিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন,” বলেন মওদুদ আহমদ।
দিন দিন পরিস্থিতি আরও ‘খারাপের দিকে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “সরকারের নীল নকশা যেভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে ইসি কিছু করতে পারছে না। জামিন পাওয়া মুশকিল এখন, বিএনপির সাত সম্ভাব্য প্রার্থীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের সাজানো প্রশাসনে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও নেই।
“এমন পরিবেশে বিএনপির নির্বাচন করা দুরূহ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তা প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হতে পারে। আমরা প্রহসনের নির্বাচন চাই না। জাতির জন্যে এটা একেবারের শেষ সুযোগ। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে যাবে।”
মির্জা ফখরুলের চার চিঠি
গণগ্রেপ্তার বন্ধ, গ্রেপ্তারদের মুক্তি, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে প্রত্যাহার এবং রদবদলের মাধ্যমে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল থেকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাতিল, ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যদের নাম, পদবী ও র্যাংক ব্যাজ পরে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরণ এবং জানিপপকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত রাখার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
এ সব দাবি সম্বলিত বিএনপি মহাসচিবের চারটি চিঠি নির্বাচন কমিশনারদের কাছে পৌঁছে দেন দলটির নেতারা।
গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কয়েক দফা অভিযোগ জানানো হয় নির্বাচন কমিশনে। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের এসপিকে সরানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের প্রধান দাবিগুলোর দিকে নজর না দিয়ে সরকারের ‘নির্দেশ মতোই’ কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন, যাতে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।
ড.কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন
বিএনপি এতদিন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে এলেও নির্বাচনকালীন এই সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন কামাল হোসেন।
নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধের দাবি নিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন কামাল, যিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখছেন।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হবে কি না।
জবাবে কামাল হোসেন বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কেন হল? যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয় না। ১৯৯৬ সালে আমরা দাবি তুলেছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় ছিলেন, তারা আমাদের সাথে বসে সংবিধান সংশোধন করল। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে প্রথম উপকার পেল যে, আওয়ামী লীগ ২১ বছর পরে ক্ষমতায় ফিরে আসল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
“২০০৭ সালে আপনারা দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী থেকে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্যগুলো আসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এটা কোনো বিতর্কিত বিষয় না। কোর্ট থেকে একটা রায় দিয়েছে যে, এটা সংবিধান সম্মত নয়। সেই রায়েও প্রথম লেখা ছিল, আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে।
“এখন বলছি যে, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হওয়া- এটা সংবিধানের একটা বিধান। এটা খেয়াল খুশির ব্যাপার না। ’৯৬ সালে সংবিধান সংশোধনীর কারণে বিশেষ করে ২০০৮ সালে পুরো উপকার মহাজোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল নির্বাচনে যে ফলাফল পেল তাতে অবশ্যই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। এটা কোনো বিরোধের ব্যাপার নয়, এটা সংবিধানের ব্যাখ্যার ব্যাপার।”
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ হয়। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হয়।
দুটি নির্বাচন এভাবে হওয়ার পর ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০১১ সালের ১০ মে এক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরের মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে সরকার।
শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিরোধিতা করে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি তা ঠেকানোর আন্দোলনে নামে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের ওই আন্দোলন এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে তাদের তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় অন্তত দুইশ মানুষের প্রাণহানি হয়।
এবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রতিনিয়ত নানা অভিযোগ তুলছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির বদলে ‘সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ’ পালন করছে বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
এই প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল নিয়ে ওই প্রশ্ন করা হয় কামাল হোসেনকে।
‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ ক্ষমতার মালিক। যা কিছু হবে তাদের মতামত নিয়ে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে।”
কামাল হোসেন বলছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে তারা সরকার গঠন করতে পারলে সংবিধানের মৌলিক নীতি অনুসরণ করা হবে।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনীতি হচ্ছে হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। কয়েক দশক ধরে এই হিংসা-প্রতিহিংসা চলে আসছে। যদি ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে তাহলে কি আপনারা ধারাবাহিক রাজনীতি অনুসরণ করবেন না কি নতুন কোনো রাজনীতি উপহার দেবেন।
জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের নতুন রাজনীতি না। সংবিধানে যেটা লেখা আছে, যে রাজনীতি আমরা তখন সংবিধানে যে নীতিগুলো লিখেছি। মৌলিক অধিকার সেখানে সংরক্ষিত হবে লেখা আছে, রাষ্ট্র হবে গণতন্ত্র, শাসন ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। এগুলো আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো, যার মধ্যে আমরা রাজনীতি করতে চাই।”
বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন কামাল হোসেন।
সংবিধান সম্মতভাবে দেশ পরিচালনার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জনগণ ক্ষমতার মালিক হিসেবে ভোটের অধিকার থাকবে তাদের। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচিত করবেন তাদের প্রতিনিধি, সেটা সংসদ ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে। অর্থাৎ নতুন রাজনীতি আমাদের কিছু করা লাগবে না। সংবিধানে যেটা লেখা আছে সেটা যদি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি সংবিধানের নীতিটা পালন করে আমরা রাজনীতি করব।”
ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে, সেগুলো শতভাগ পালন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন।
“নির্বাচনী ইশতেহার লেখা হচ্ছে, সেটাও কয়েকদিন মধ্যে আপনারা পাবেন। সেটাও সংবিধানের আলোকে করা হয়েছে।”
ড. কামাল হোসেন বলছেন, তার নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনকার নয়, এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন ২০০৮ সালে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার বয়স হলো ৮০। আমার সমবয়সী বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন তাদের মধ্যে আর একজনই মাত্র বেঁচে আছেন। এই অবস্থায় আছেন যে, উনি না থাকার মতো। ওই মন্ত্রিসভার শেষ আমি এখনো বেঁচে আছি। এটা আল্লাহর রহমত, আমার কোনো কৃতিত্ব নাই।
“আমি রাজনীতি করে আসছি ৫৫ বছর ধরে। এখন এতোগুলো যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনীতি করে বেরিয়ে এসেছেন আমি তো মনে করি যে, এটা ভুল ধারণা যে নেতৃত্বের কোনো ঘাটতি আছে। অতীতে দেখেছি যে, বয়স হয়ে গেলে সরে যেতে চান না। আমি ওই অর্থে সরে যাচ্ছি না, আমি কাজ-কর্ম থেকে সরে যাচ্ছি না। ২০০৮ সালে আমাকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন করুন। আমার এই ‘না’ করাটা আজকের সিদ্ধান্ত না , ২০০৮ সালে আমি নির্বাচন করি নাই।”
প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোট কেন্দ্রের বুথে প্রবেশ, ছবি তোলা ও ভিডিও করার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার সমালোচনা করেন কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “এটা নৈতিক একটা ব্যাপার। যদি আইনের শাসন থাকে যে ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এটা অপ্রাসঙ্গিক। এটার ব্যাপারে আমরা দেখছি। কোর্টে যেতেও পারি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মনটু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালাম, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এসএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন