ভোটের দিন স্যোসাল মিডিয়া বন্ধ রাখার প্রস্তাব
খবর প্রচারে ১০ দফা বিধিনিষেধ চায় ইসি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের ভোট বুথে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ সংবাদ প্রচার ও প্রকাশে ১০ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির ১০ দফা এই প্রস্তাবনার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী, পোলিং এজেন্ট বা দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার না নেয়া এবং প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ না করার কথাও বলা আছে।
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ এসব নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত জানতে চান। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা এসব প্রস্তাবনার তীব্র বিরোধিতা করেন। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত ইসি তথা নির্বাচন সংবাদ পরিবেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।
গত ২৬ এপ্রিল খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমলার প্রস্তাব আসে পুলিশের পক্ষ থেকে। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসির সংলাপে গণমাধ্যমের কাজের পরিধি নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল বড় একটি রাজনৈতিক দল। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নির্বাচনে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ, প্রচার, প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহ, প্রকাশ-প্রচার বিষয়ক একটি নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত শীর্ষক এ মত বিনিময় সভা হয়।
ইসির ১০ দফার বিধিনিষেধে বলা হয়েছে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না।
অনুমতিসাপেক্ষে অল্প সময়ের জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই ভোটদানের গোপন কক্ষ বা বুথে প্রবেশ করা এবং ভেতরের কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করা যাবে না। একইসাথে একাধিক সাংবাদিকের একই ভোট কক্ষে প্রবেশ এবং ভোট কক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সংবাদ সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে ইসি। ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের ছবি বা ভিডিও ধারণেও নিষেধাজ্ঞা চায় ইসি।
ইসির প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না; কোনো ধরনের নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা যাবে না; নির্বাচনে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে; নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য সংবিধান, নির্বাচনি আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভোটকক্ষের ভেতরে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনরত কোনো কর্মকর্তা/ কর্মচারী, পোলিং এজেন্ট বা দায়িত্বরত কর্মকর্তার কোনো সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে না এবং ভোটগণনা কার্যক্রমের ছবি সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।
ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ মতবিনিময় সভায় বলেন, সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং নির্বাচন চলাকালে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমরা কিছু নীতিমালা করতে চাচ্ছি। তবে সাংবাদিকদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই এই নীতিমালা করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার যেহেতু কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা। ফলে তার অনুমতি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করলে সাংবাদিকদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে সাংবাদিকরা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ভোটে সিল মারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। ফলে এ ধরণের নীতিমালা করা হলেও তারা আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে।
গণমাধ্যমকর্মীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে জানান, ভোটকে সামনে রেখে আকস্মিকভাবে নীতিমালা প্রণয়নের তৎপরতায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। গণমাধ্যকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে বেশ সচেতনভাবেই কাজ করছেন। বিদ্যমান আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ হলে নীতিমালার প্রয়োজন পড়বে না। পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মেনে ও সাংবাদিক পরিচয়পত্রের মধ্যে থাকা নির্দেশনা অনুসরণ করেই কাজ করছে গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা না করে অবাধ, সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করার বিষয়ে কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের পরামর্শ দেন তারা।
এসময় ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান, যুগ্মসচিব মিজানুর রহমান খন্দকার, এস এম আসাদুজ্জামান, ফরহাদ আহাম্মদ খান, উপ সচিব ফরহাদ হোসেন ও তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন মোস্তফা ফিরোজ দিপু, আশিস সৈকত, জ ই মামুন, সৈয়দ আশিক রহমান, জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েল, মনজুরুল হক প্রমুখ।
বিটিআরসিরি সঙ্গে বৈঠক : সিদ্ধান্ত হয়নি
এদিকে ভোটের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে ইসি। ভোটের দিন স্যোসাল মিডিয়া বন্ধ রাখার প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
তবে বৈঠক প্রসঙ্গে ইসির যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের সময় ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবগুলো তাদের দেয়া হয়েছে। ফেসবুক বন্ধ করা যাবে কি যাবেনা সে বিষয়ে ইসি মতামত চায়।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ফেসবুকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি নেই। ইসি যদি নির্দিষ্ট করে অভিযোগ করে তাহলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে বিটিআরসি বলেছে, ভোটের সময় তথ্য আদান প্রদান করতে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া টেলিভিশনগুলো লাইভ সম্প্রচার করে। ফলে ওই সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা সম্ভব না। আমরা প্রাথমিক আলোচনা করেছি। কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এই আলোচনা থেকে।
বৈঠকে বিটিআরসি, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৬ এপ্রিল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর আশংকার কথা জানায় ইসি। এ আশংকার ভিত্তিতে ইসি সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন