কোটা সংস্কার আন্দোলন: এক পক্ষের স্থগিত, অপর পক্ষের চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা
এক মাসের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলন স্থগিত করেছে আন্দোলন কারীরা।
সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এরপর তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিকেলে বলেছেন, কোটা সংস্কার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্দোলনে এ পর্যন্ত যারা যেভাবে আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
সরকারের দেওয়া আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে কোটা সংস্কারের দাবিতে ডাকা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে এ ঘোষণা দেন তারা। তাদের এই ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব।
এর আগে সোমবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারী প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ শেষে আন্দোলন এক মাস স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে।
তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে এই আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান থেকে মাইকে বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। এ কারণে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোটা সংস্কারের তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত না আসছে বা প্রজ্ঞাপন জারি না হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এদিকে আন্দোলনকারীরা এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি মোড়, দোয়েল চত্বর ও নীলক্ষেতের রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন।
কোটার নামে অরাজকতায় সংসদে তীব্র ক্ষোভ
চাকরির কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসায় হামলায় ও দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। সংসদের ২০তম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সোমবার তারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানী কেন্দ্রিক একটি এলিট শ্রেণী তাদের ছেলে মেয়েদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ হিসেবে এই আন্দোলনের সৃষ্টি করেছে। তারা মুক্তি মুক্তিযোদ্ধা কোটা চায় না। যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ (মুক্তিযুদ্ধ) করেছে তাদের সন্তানরা সুযোগ পাবে না, তাদের বাদ রেখে রাজাকারের বাচ্চাদের সুযোগ দিতে হবে? সে জন্য পরিষ্কার বলতে চাই, তারা যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি, চলছে চলবে। এই রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেব। আর ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নাই। কিন্তু স্টেটাস যারা দিয়েছে তারা তো ছাত্র না, তারা তো জামাত শিবিরের এজেন্ট। এদের প্রতি সামান্যতম শৈথিল্য দেশবাসী আর দেখতে চায় না। হয় ওরা থাকবে, নয় আমরা থাকবো। হামলাকারীদের কোনো ক্ষমা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলবো এদের প্রতি কোনো শৈথিল্য নয়, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন, যুদ্ধ ঘোষণা করুন, হয় এরা থাকবে নয় আমরা থাকবো, এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা।
অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার সূত্রপাত করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। আলোচনায় আরও অংশ নেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আবুল কালাম আজাদ, ইয়াসীন আলী ও সাবিনা আকতার তুহিন।
একপর্যায়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় কঠিন আন্দোলন করেছি। কিন্তু মুখোস পরতে হবে কেন। কেন গভীর রাতে আন্দোলনের নামে উপাচার্যের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করতে হবে। কেন মেয়েদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে হবে। সাহস থাকলে মুখটা দেখা, লজ্জা করে না। ইতর হওয়ার একটা সীমা আছে।
গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বাবায়ক ড. ইমরান এইচ চৌধুরীর নাম উল্লেখ না করে মতিয়া বলেন, ফেসবুক ব্যবহার করে যে মারা যায়নি তাকে মেরে ফেলবেন? তিনি বলেন, আসল সমস্যা মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারনা হালিম বলেন, দাবি সকলের থাকতে পারে। দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায় সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেটার জন্য রাতের আধারে উপাচার্যের বাড়িতে ঢোকা, তার আলমারী ভাঙচুর, স্ত্রীর ভ্যানেটি ব্যাগ ভাঙচুর, জাতির জনকের প্রতিকৃতি ভাঙাএটাকে কোনোভাবেই আমরা দাবি আদায়ের পথ বলতে পারি না। আন্দোলন বহু দেখা গেছে। কিন্তু কোনো দিন এই ধরনের নৈরাজ্যজনক আন্দোলন দেখি না। তারা ঘরে ঢুকে স্ত্রী সন্তানদের খোঁজ করছে। আর স্ত্রী সন্তান বাড়ির কোণে বাগানে লুকিয়ে ছিল।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোটা নিয়ে যে আন্দোলন, সেটা এখন আর আন্দোলনের মধ্যে নেই। এটি বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ করে আমাদের পুলিশ বাহিনী এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। এটি সঠিক হয়নি। এই বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্কভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনিও এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি গঠন করে সমস্যা সমাধানের পক্ষে মত দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন