কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলা মামলার আসামি রোমেলের জামিন নামঞ্জুর
সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি খালিদ মঞ্জুর রোমেলের জামিনের আবেদন নাকচ করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
৩১ জুলাই সোমবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দ্দার মো. আমিরুল ইসলামের আদালতে আসামি খালিদ মঞ্জুর রোমেল জামিনের আবেদন করলে আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানী শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করেন।
ফলে আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে আসামি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ভাগ্নে খালিদ মঞ্জুর রোমেলকে।
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করছেন পিপি এড. ওসমান গনি।
জানা যায়- দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা অবস্থায় কলারোয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ মঞ্জুর রোমেলকে গত ৯ জুন ২০১৭ তারিখ শুক্রবার ভোরে সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক সংলগ্ন সলঙ্গা থানার পাঁচলিয়া বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. ওসমান গনির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ জুন ২০১৭ তারিখে বিজ্ঞ বিচারক প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। এরপর তাকে এ মামলায় ৬ জুলাই ২০১৭ তারিখে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়।
গ্রেপ্তার খালিদ মঞ্জুর রোমেল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কাদাই বাদলা গ্রামের মৃত এমএ গোফরানের ছেলে। সে সাতক্ষীরা-০১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপন ভাগ্নে। আদি বাড়ি সিরাজগঞ্জ হলেও পিতার চাকরির সুবাদে ছোট থেকেই কলারোয়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতো রোমেলের পরিবার।
মামলা সূত্রে জানা যায়- ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরায় আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরে যাবার পথে কলারোয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গাড়ি বহরে হামলা চালায় বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় কলারোয়া যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দীন বাদি হয়ে আদালতে মামলা করেন। এরপর ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাবেক এমপি ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০জন বিএনপি’র নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ সফিকুর রহমান।
দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত শেষে কলারোয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ সফিকুর রহমান আদালতে এ চার্জশীট দাখিল করেন।
চাজর্শীটভুক্ত আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির’র সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া পৌরসভার মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব, যুগিখালির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পদক আব্দুস ছাত্তার, জেলা বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচচু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব শেখ তামিম আজাদ মেরিন, পৌর যুবদলের সভাপতি জাভিদ রায়হান লাকি, তুলশীডাঙ্গা গ্রামের ট্রলি শহিদুল, মনিরুল ইসলাম, ইয়াচিন আলি, শেলি, আলতাফ হোসেন, নাজমুল হোসেন, কনক, ক্ষেত্রপাড়া টাইগার খোকন, রিপন, আব্দুল মজিদ, আব্দুস ছামাদ, একই গ্রামের খালেদুজ্মান রোমেল, কলারোয়া বাজরের ব্যবসায়ি কামরুল ইসলাম, রামকৃষ্টপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের বিদার হোসেন, গাজনা গ্রামের সোহাগ, ওফাপুর গ্রামের মাহফুজ মোল্ল্যা, একই গ্রামের মাফুজুর রহমান, ঝিকরা গ্রামের সনজু, একই গ্রামের কামরুজ্মান ও গোলাম রসুল, সিংহনাল গ্রামের সাইফুদ্দিন, কয়লা গ্রামের শাহেব আলি, বৈদ্যপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম পুটুনি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, একই গ্রামের আব্দুস ছামাদ, গদখালি গ্রামের মফিজুল ইসলাম, হুলহুলিয়া গ্রামের হাছান আলি, রায়টা গ্রামের ময়না, দরবাসা গ্রামের জহিরুল ইসলাম, কেঁড়াগছি গ্রামের আব্দুল মালেক, শুভংকরকাঠি গ্রামের মাজাহারুল হক, কাজিরহাট নজরুল ইসলাম ও ইলিশপুর গ্রামের আলাউদ্দিন।
আসামিদের মধ্যে এজহার নামীয় ৪জন মুত্যু বরণ করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়- ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট কলারোয়া উপজেলার এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখতে আসেন তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতাল থেকে তাকে দেখে গাড়ির বহর নিয়ে তিনি যশোরে যাচ্ছিছিলেন। গাড়ি বহরটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পথিমধ্যে সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের কলারোয়া উপজেলা সদরের বিএনপি’র অফিসের সামনে পৌছালে গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদি হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট মামলাটি নিন্ম আদালতে প্রেরণ করেন।
দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়- আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন বিষ্ফোরনসহ কয়েক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জর্শীটে ১৪৭/১৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৪৪০/৫০০/৫০৬(২)১৪৯/অস্ত্রআইনের ১৯(ক) বিস্ফোরক আইনের ধারা।
মামলায় ৩০ জনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। মামলা তদন্ত চলাকালে এজাহারভুক্ত ৪জন আসামির মৃত্যু হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এখনো ১৩ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। ৩৫ জন জামিনে আছেন। দুই জন কারাগারে রয়েছেন।
পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াসিন, মাজাহারুল, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সনজু, নাজমুল, লাকি, কনক, মাহফুজুর রহমানসহ ১৩ জন।
এদিকে, গত ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে মামলার সাক্ষ্য প্রদানকালে বাদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের করোনারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন