কলারোয়ায় গরুর খামারটি যেন ডেঙ্গুর খামার! সংবাদ প্রকাশের পর পরিষ্কারের তোড়জোড়
কলারোয়া হাসপাতাল সংলগ্ন গরুর খামারটি যেন ডেঙ্গুর খামার! শীরোনামটির চেয়ে আতকে উঠার মতো ভয়ংকর অবস্থা সেখানকার বাস্তব দৃশ্য দেখলে। দেখলে মনে হবে- গরুর খামারে ডেঙ্গুর চাষাবাস। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে এরূপ চিত্র দেখে রাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘কলারোয়া নিউজ’ এ ভিডিও ফুটেজসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদের জের ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে ‘কিছুটা’ পরিষ্কারের তোড়জোড় শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
লোমহর্ষক সিনেমাটিক দৃশ্যটি কলারোয়া সরকারি হাসপাতালের গাঁ ঘেষেই ‘ডলফিন ফিস প্রজেক্ট এন্ড রিংকী ডেইরী ফার্ম’ নামের একটি গরুর খামারে। খামারটির পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ। সামনে, ডানে, বামে রয়েছে অন্তত ১০/১২টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গন্সটিক সেন্টার। সামনের পাশে রয়েছে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই খামারের অব্যবহৃত ২৫/৩০টি নান্দায় দীর্ঘদিনের জমানো পানির রং রীতিমত ভিন্ন রং-এ রূপ নিয়েছে। ফেলে রাখা ট্রাকের টায়ারের মধ্যে জমে থাকা পানির একই চিত্র। খামারের ড্রেনের মধ্যে আটকে আছে সেখানে থাকা কয়েকটি গরুর মল-মূত্র, যেটা অপ্রবাহিত হয়ে ড্রেনের মধ্যেই আটকা পড়ে আছে। এরূপ আরো অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন দৃশ্য সোমবার বিকেলে ক্যামেরাবন্দি হওয়ার পর রাতে সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়। খবরটি প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। শুরু হয় তোড়জোড়। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে নান্দা ও টায়ারের পানি পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকদফা খামারটির পরিচ্ছন্নতার পরিবেশ দেখতে সেখানে গেলে দেখা যায়- বাইরের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ রেখে ভিতরে পরিষ্কারের চেষ্টা চলছে। পাচিলঘেরা খামারের ভিতরে যাওয়ার জন্য উপস্থিত কেয়ারটেকারকে অনুরোধ করলে তিনি জানান- ‘মালিকের অনুমতি নেই।’ ‘মালিকের নির্দেশে’ সকাল থেকেই মেইন গেটে তালা লাগিয়ে টায়ার ও নান্দার পানি পরিষ্কার করছেন বলে স্বীকার করেন লোহাকুড়া গ্রামের নাজমুল হোসেন নামের খামারটির কেয়ারটেকার। ‘আমি নান্দার পানি ও টায়ারের পানি ফেলে দিয়েছি’- যোগ করেন তিনি।
এর আগে সোমবার (২৬আগস্ট) সরেজমিনে গা শিউরে উঠা এমন চিত্র চোখে পড়ে। উপজেলা সদরের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বৃহৎ একটি গরুর খামারে এইডিস মশা প্রজননের অবাধ জন্মস্থান তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গু তৈরীর মতো সব ধরনের আলামতও সেখানে দৃশ্যমান। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লেও ব্যক্তি মালিকানাধীন কঠোর নজরদারির এই চার দেয়ালের মধ্যে প্রবেশের সুযোগ না থাকলেও অতিকৌশলে সেখানে প্রবেশ করেন এ সাংবাদিক। খামার তো নয় যেনো ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিন। ফার্মটির ক্লপসিবল গেট খুলে ঢুকতেই বাম হাতে একটি পরিত্যাক্ত নোংরা গোডাউন। ডানের একটি ঘরে মিলের যন্ত্রপাতি বসানো। সামনের ফাঁকা জায়গায় দু‘সারিতে গরুর খাদ্য খাবারের জন্য বসানো আছে ২৫/৩০টি পাঁকা নান্দা। যার মধ্যে অব্যবহৃত ও দীর্ঘ দিনের জমানো পানির দৃশ্য স্পষ্ট। পাশে বায়োগ্যাস তৈরীর নামে বড় সড় আন্ডারগ্রাউন্ড ময়লার হাউস রয়েছে, যার অবস্থাও বেহাল। এরই গাঁ ঘেষে মহিলা কলেজে ও হাসপাতালের বাউন্ডারি প্রাচীর। প্রাচীরের গাঁ ঘেষেই বড় একটি অপ্রবাহিত ড্রেনের মধ্যেই আটকা পড়ে আছে খামারের গরুর মল-মূত্র। এই মল-মূত্র সেখান থেকে অন্যত্র বের করার মত কোন ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা স্থায়ী অবস্থান করছে। বাউন্ডারির এক পাশে রাখা টায়ারের মধ্যেও অনেক দিনের পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে গোটা গরুর খামারটি যেনো এইডিস মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। গরমের দিনে খামারের অতি দূর্গন্ধে এলাকার লোকজন যেমন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন ঠিক তেমনি স্কুল, কলেজ হাসপাতালসহ সকল চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিরাজ করে। এই ফার্মের মালিক আলী মনসুর কলারোয়া সরকারি হাসপাতালে ক্যাশিয়ার পদে চাকুরী করতেন, বর্তমানে অবসরে আছেন। ঐ রোডের সাথেই তার বড় অট্টালিকা আছে। তিনি নিজে ফার্মে খুব একটা যাতায়াত করেন না। একজন কেয়ারটেকার তার এই ফার্ম দেখাশুনা করেন।
বিষয়টা নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে এলাকাবাসী জানিয়েছিলেন- ‘এই অবস্থা বেশী দিন চললে খুব তাড়াতাড়ি এলাকায় ডেগুর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’
তবে প্রশাসনের নজরে না আসলেও সংবাদটি প্রকাশের পর মালিকপক্ষই উদ্যোগি হয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করে।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাতে সেলফোনে খামারটির মালিক আলী মুনসুর জানান- ‘আমার খামারটি পরিষ্কার রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তারপরেও বর্ষাকালে একটু সমস্যা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের শিক্ষক-ছাত্রীদের কোন সমস্যা হলে আমাকে বললেই তো আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দিতে পারি। তাছাড়া আমার বড় অংকের টাকার খামারটি বললেই এখান থেকে সরাতে পারি না।’
সচেতন এলাকাবাসী খামারটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মালিকপক্ষের প্রতি যেমন অনুরোধ জানিয়েছেন তেমনি বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন