কলারোয়ার শিক্ষার্থীকে চেক দিলেন প্রধানমন্ত্রী, হজম করলেন প্রধান শিক্ষক!!
২০১৮সালের আন্ত:প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ১০০মিটার দৌড়ে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকারের পর জাতীয় পর্যায়ে সারা দেশের মধ্যে ৩য় স্থান অধিকার করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার উত্তর সোনাবাড়িয়া গ্রামের আনছার আলীর পুত্র আব্দুল মোমিন (১২)। তখন সে বাড়ির পাশের ১২০নং কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। খেলার কারণে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে বর্তমানেও সে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।
গতবছরের ওই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলতি বছরের ১৩মার্চ রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে কলারোয়ার শিশু শিক্ষার্থী মোমিনকে মেডেল, সনদপত্র ও আর্থিক প্রনোদনার চেক তুলে দেন।
ওই অনুষ্ঠানে মোমিনের সাথে উপস্থিত ছিলেন কোমরপুর প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএম শহীদুল ইসলাম। চেক পাওয়ার পরপরই অনুষ্ঠানেই চেকটির উল্টো পিঠে মোমিনের দু’টি স্বাক্ষর করিয়ে চেকটি প্রধান শিক্ষক নিজের কাছে রেখে দেন।
কলারোয়ায় ফিরে আসার পর চেকটি নেয়ার জন্য কৃতি শিক্ষার্থী মোমিন ও তার পরিবার কয়েকদিন প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি টালবাহানা করতে থাকেন। এমনকি উত্তেজিত হয়ে তিনি (প্রধান শিক্ষক) ও স্কুলটির সভাপতি মুনছুর আলী শিক্ষার্থী মোমিন ও তার অভিভাবককে মারতে উদ্যত হন ও হুমকি-ধামকি দেন।
বিষয়টি নিয়ে গত ১৮এপ্রিল শিক্ষার্থী মোমিন ও তার পরিবার কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজকে জানালে তিনি বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাফফার উদ্দীনকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাফফার উদ্দীন উভয়পক্ষকে আপোষ মিমাংসা করে নেয়ার জন্য বলেন।
এতে সংক্ষুব্ধ ও বিব্রত হয়ে ২৩এপ্রিল মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চেকটি ফেরত পেতে এবং দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করে লিখিত অভিযোগ দেন।
জাতীয় পর্যায়ে সাতক্ষীরার মুখ উজ্জ্বল করা কলারোয়ার কৃতি শিশু শিক্ষার্থী মোমিন জানান- ‘আামি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পাওয়া চেকটি ফিরে পেতে চাই।’
মোমিনের পিতা আনছার আলী জানান- ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম ও স্কুলের সভাপতি মুনছুর আলী আমার ছেলের চেকের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। আমি গত ১৮এপ্রিল কলারোয়ার ইউএনও’কে বিষয়টি লিখিত অবগত করলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে ডেকে বিষয়টি গোপনে মিমাংসা করে নেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু আমি এটি গোপনে মিমাংসা করতে চাইনি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কত টাকার চেক দিয়েছেন তাও আমার ছেলেকে দেখানো হয়নি বিধায় আমি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই চেকটি দেখতে চাই।’
তিনি আরো বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চেকের পাশাপাশি এর আগে একই ভাবে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরষ্কার পাওয়া আরো ১৫হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক নিয়ে নেন। এবং আমার ছেলেকে বলেন, স্কুলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব টাকা ও সার্টিফিকেট তোমার হাতে তুলে দেয়া হবে। কিন্তু আজো তা দেয়া হয়নি। গত ১৫এপ্রিল আমি স্কুলে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে যান। এসময় তিনি ও স্কুলের সভাপতি মুনছুর আলী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, তোমার ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে তোমার ছেলের আরো ক্ষতি হবে।’
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- ‘মোমিনকে জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে কোন টাকা দেয়া হয়নি। জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অধিকার করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোমিনকে ১০হাজার টাকার চেক দেন। মোমিনের পিতা আনছার আলী চেকটি ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলে আনতে বলেছিলেন। আমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে মোমিনের পিতার কাছে দিয়েছি। মোমিন প্রতিযোগিতার জন্য সাতক্ষীরা, খুলনা, ঢাকা যাওয়া-আসার কোন খরচ আমাকে দেয়নি, সব খরচ আমি বহন করেছি। আমি খরচের টাকা চেয়েছি বলে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করছেন।’
চেকটি কবে ও কোন ব্যাংক থেকে ভাঙ্গিয়েছেন জিজ্ঞাসা করলে প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন- ‘এটা আপনার জানার দরকার নেই।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান- ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। আজ (২৩এপ্রিল) সকালে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি যথাযথ তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি।’
কলারোয়ার ইউএনও আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান- ‘এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত (২৩এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত) জেলা প্রশাসক দপ্তর থেকে কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে এর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন