ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা
কলারোয়ার ‘সোনার গ্রাম’ ‘সোনাগাছি’তে বেপোরোয়া সোনা চোরাকারবারীরা
কেঁড়াগাছি, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি জনপদ। ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের কেঁড়াগাছি গ্রামটিকে ‘সোনার গ্রাম’ নামে অনেকে অবহিত করে থাকেন। আবার অনেকে এ গ্রামকে ‘কেঁড়াগাছি’ না বলে ‘সোনাগাছি’ও বলে থাকেন। ‘সোনার গ্রাম’ কিংবা ‘সোনাগাছি’ বলার একমাত্র কারণ আর কিছু-ই নয়, সেটা হলো- এই সীমান্ত দিয়ে অহরহ সোনা পাচার হয় ভারতে। আর সোনা পাচারের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংশ্লিষ্টরা কয়েক বছরেই হয়েছেন আঙুল ফুলে কলা গাছ। শুধু তাই নয় তাদের অনেকেই এখন ‘নির্বাচিত (!)’ জনপ্রতিনিধি কিংবা এলাকার ‘বাঘা’ নেতা। এমনটাই জানা গেলো ওই এলাকার সাধারণ মানুষের ভাষ্য থেকে।
সাতক্ষীরার সোনার গ্রাম কেড়াগাছি। এই গ্রামের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদার পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছেন সোনা চোরাচালান ব্যবসায়। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তি সোনাসহ গ্রেফতার হলেও মূল মালিকরা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাহিরে। সোনা বহন করে ও সোনা চোরাকারবারির সাথে যুক্ত হয়ে রাতারাতি কোটি প্রতিবনে গেছে অনেকে। আর এই সোনাসহ চোরাকারবারিদের আটকে বিজিবি কিছুটা তৎপর। সীমান্তে অন্যান্য চোরাচালান কড়াকড়ি হওয়ায় চোরাকারবারিরা সোনা পাচারকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে এই সীমান্তে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়- সম্প্রতি (গত বৃহস্পতিবার) কেঁড়াগাছি সীমান্তের সোনাই নদীর তীর থেকে ৫ পিচ স্বর্ণের বারসহ আটক হয় কেড়াগাছি গ্রামের ইসমাইলের ছেলে উজ্জল হোসেন। এঘটনায় সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির হাবিলদার কবির বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় উজ্জলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় বিজিবির গোয়েন্দা সূত্র জানায়- এই সোনা ব্যবসারর সাথে উজ্জলের প্রতিবেশি জনৈক ব্যক্তিরা জড়িত। তাদেরকে সোনা চোরাকারবারি বলে এলাকার সবাই জানে। তবে তাদের সোনাসহ আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে উজ্জলকে মারপিট না করা ও রিমান্ড বন্ধের জন্য স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পর্যায়ের যুবলীগ নেতা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়- কিছুদিন আগে ১৪০ পিচ সোনার বারসহ তলুইগাছা ৩৮ বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আকরাম কেড়াগাছি গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে চায়ের দোকানদার আলিউজ্জামানকে আটক করে। আলিউজ্জামানের স্বীকারউক্তি মোতাবেক বিজিবি এই মামলায় আসামি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল, সোনা চোরাকাবারি করে রাতারাতি কোটি প্রতিবনে যাওয়া রস্তম হাজরা, ফিরোজ হাজরা, আলিউজ্জামানের কাছে থাকা মোটরসাইকেলের মালিক রবিনকে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্যা দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারি আমিনুর, শফি ও মুনসুরসহ অনেকে জানায়, রস্তম হাজরা এক সময় অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালাতো। বর্তমানে ব্যবহার করেন দুটি মোটরসাইকেল। মাঠে করেছেন ২০/৩০ বিঘা জমি। ব্যাংকে রয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা। সে এলাকার ডন হিসেবে পরিচিত।
এদিকে রবিন বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশেই করেছে গাড়ি-বাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্স। আর মহিদুল ভারতীয় শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। পৈত্রিক সূত্রে ভিটা বাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না। এখন চালান পালসার মোটরসাইকেল, কেড়াগাছি রাস্তার ধারে করেছেন বিলাশ বহুল বাড়ি। মাঠে করেছেন জমাজমি। ইতিমধ্যে তার নামে আরও আনেক মামলা হলেও সে সব মামলা থেকে টাকার জোরে ফাইনাল রিপোর্ট নিয়েছে অসাধু পুলিশের নিকট থেকে। হয়েছেন কেঁড়াগাছি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।
ইউপি সদস্য মহিদুল জানায়- তিনি চোরাকারবারি করেছেন ঠিক তবে সোনা পাচার করেননি। স্থানীয় চোরাই ঘাটমালিক আজাহারুল ও ইউপি নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ মুনসুর কৌশলে এসব মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছেন।
সম্প্রতি এই সীমান্ত থেকে সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির হাবিলদার বাসারাত সোনাই নদীর পাড় থেকে কেঁড়াগাছি গ্রামের আফতাবুরকে ৬ পিচ সোনাসহ আটক করে। সে আজও জেল খানায় আটক আছে।
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবির সুবেদার ফয়েজ উদ্দীন কেঁড়াগাছি বলফিল্ড এলাকা থেকে ৬ টি স্বর্ণের বারসহ একই গ্রামের আলিমকে আটক করে। আলিম এই মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
যশোর শহর থেকে পুলিশ ১৮ কেজি সোনসহ ৩ চোরাকারবারীকে আটক করে। এই তিন জনের মধ্যে একজন ছিল কেঁড়াগাছি গ্রামের আরশাফুল গাজীর ছেলে শাহিন। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কেঁড়াগাছি গ্রামের কয়েকজন জানান- এই পর্যন্ত সোনাসহ যারা গ্রেফতার হয়েছে এরা প্রত্যেকে গরিব মানুষের ছেলে। এদের পরিবারের সদস্যরা দিনে আনে দিনে খায়। গ্রেফতার হওয়ায় এসব পরিবারে এখন চরম দুরদশা বিরাজ করছে। অথচ যারা এদের কাছে সোনা পাচারের জন্য দেয় বা যারা এই সোনার মালিক তাদের আটক করতে পারছে না বিজিবি কিংবা পুলিশ। ফলে তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
সোনার বারসহ আটক হওয়া আসামিদের কথা মত দুই এক জন মালিকের নামে মামলা হলেও টাকার জোর ফাইনাল রিপোর্ট নিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি যিনি সোনা কিংবা যেকোন চোরাচালানীর অন্যতম প্রধান হোতা ও হত্যা মামলার আসামি, সেও যখন টাকার জোরে ধোয়া তুলশীরপাতা হয়ে যান তখন সাধারণ জনগণের-ই কী করার থাকে?
এদিকে- সোনা উদ্ধার কিংবা চোরাকারবারি আটকে পুলিশের তেমন কোন অভিযান নেই।
বিজিবি সূত্রে আরও জানা যায়- সম্প্রতি বিজিবি ভোমরা সীমান্ত থেকে ৬ পিচ সোনারবার ও মোটর সাইকেলসহ এক চোরাকারবারিকে আটক করে।
এছাড়া সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যকে সোনারবারসহ আটক করে বিজিবি। এছাড়া কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের গাড়াখালি এলাকার জহুরুল এর বাড়ি তল্লাসি করে ৬০টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি।
এর আগেই বিজিবি সোনাসহ জহুরুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এছাড়া কলারোয়া থানার পুলিশ একপিচ সোনার বারসহ গাড়াখালি গ্রামের শরিফুলকে গ্রেফতার করে।
কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল জানান- কেঁড়াগাছি গ্রামে সোনার খনি পাওয়া গেছে। প্রায় সময় এই সীমান্তে সোনা আটক হয়। সীমান্ত এলাকার মানুষ অনেকে চোরাকারবারি করে। তারা পুলিশ বিজিবির হাতে আটকও হয়। ইউপি সদস্য মহিদুল এখন আর কোন চোরাকারবারি করে বলে তার জানা নেই।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার জানান- কেড়াগাছি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ চোরাকারবারির সাথে জড়িত। চোরাচালানের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্নেল মো. আরমান হোসেন পিএসসি জানান- সীমান্তে চোরাচালান এখন শুন্যের কোটায় চলে এসেছে। সোনা চোরাকারবারিরা একটু বেপোরোয়া। সব সীমান্তে বিজিবির বিশেষ টহল রয়েছে। আর কেঁড়াগাছি সীমান্তে সোনা চোরাচালান বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন