কলারোয়ায় কর্মসৃজনের হরিলুট বিষয়ে জানতে চাওয়ায় সাংবাদিককে শাসালেন পিআইও!!
কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান-কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আবারও হরিলুট হওয়ার পথে! ওই প্রকল্পে চলতি অর্থ বছরের প্রথম দফায় জয়নগর ইউনিয়নে দুই লক্ষাধিক টাকারও বেশী হরিলুট হয়েছে। আর চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পে দ্বিতীয দফায় প্রায় সাত লাখ টাকা হরিলুট হতে যাচ্ছে ! প্রকল্পটির কাজ আদৌ তদারকি হয় না। তদারকির অভাবে প্রকল্পের টাকা হরিলুট হয়। প্রকল্প সভাপতি, স্থানীয় চেয়ারম্যান, ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যোগসাজস করে প্রকল্পের টাকা হরিলুট করে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
জানা গেছে, উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কর্মসংস্থান-কর্মসৃজন প্রকল্পে ১৮৪ জন শ্রমিক বরাদ্ধ আছে। বরাদ্ধকৃত শ্রমিকরা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে কাজ করে। চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ জয়নগর ইউনিয়নে প্রথম দফায় গত বছরের ৩রা নভেম্বর শুরু হয়ে কাজ শেষ হয় ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, কর্মসংস্থান -কর্মসৃজন প্রকল্পে প্রতি দফায় জয়নগর ইউনিয়নের প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৬নং ওয়ার্ড বাদে কোন ওয়ার্ডে ৪জন কোন ওয়ার্ডে ৩জন কোন ওয়ার্ডে ২জন করে সর্বোমোট ইউনিয়নে ২৭ শ্রমিক কৌশলে শতভাগ অনুপস্থিত রাখা হয়। প্রতি শ্রমিক দিন প্রতি দুইশত টাকা হিসেবে চল্লিশ দিনের মুজুরী বাবদ আট হাজার টাকা পায়। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকলেও নিয়মিত অনুপস্থিত শ্রমিকরা জানেনা তারা ওই প্রকল্পের শ্রমিক। প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও জয়নগর ইউনিয়নে কোন ওয়ার্ডেই তা মানা হয়না। শ্রমিকদের তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে পারিশ্রমিকের টাকা চেকের মাধ্যমে নেওয়ার কথা থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে শ্রমিকদের চেক তাদের হাতে না দিয়ে চেকে প্রত্যেক শ্রমিকের স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিজের লোক দিয়ে ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে। উত্তোলনকৃত টাকা কখনও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে আবার কখনও সংশিলিষ্ট ইউপি মেম্বরদের কাছ থেকে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের টাকা নিতে হয়। ফলে অনুপস্থিত শ্রমিকদের টাকা অতি সহজে চেয়ারম্যানের হাতে চলে যায়। নিয়মিত অনুপস্থিত শ্রমিকদের এক জনের টাকা প্রকল্প সভাপতি আর এক শ্রমিকের টাকা চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসার এবং বাকি এক শ্রমিকের টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হরিলুট করেছেন বলে অভিযোগ ছিল। সে হিসেবে প্রথম ধাপে নিয়মিত শ্রমিকদের মধ্যে অনুপস্থিত আনুঃ ৫০জন শ্রমিকের দশ হাজার টাকা এবং নিয়মিত অনুপস্থিত ্২৭ শ্রমিকের দুই লাখ ষোল হাজার টাকাসহ মোট দুই লাখ ছাব্বিশ হাজার সরকারি টাকা হরিলুট হয়েছে। প্রকল্পের এ কাজের চলতি অর্থ বছরের প্রথম ধাপে অনুপস্থিত ২৭ শ্রমিকের টাকা যাতে ব্যাংক থেকে না ওঠে এবং প্রত্যেক শ্রমিক যাতে নিজ দায়িত্বে তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে চেকের মাধ্যেমে টাকা উত্তোলন করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মৌখিক ভাবে উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অনেক গণমাধ্যম কর্মীরা অনুরোধ করেও কোন ফল হয়নি।
চলতি অর্থ বছরে দ্বিতীয় ধাপেও ১৮৪ জন শ্রমিক জয়নগর ইউনিয়নে বরাদ্দ আছে। গত ১৮মে তারিখ থেকে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। এধাপেও এ ইউনিয়নে ২৭ জন শ্রমিককে অনুপস্থিত রাখা হয়েছে। বাকী ১৫৭ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় অর্ধেক শ্রমিক ইরি ধান কাটা মৌসুমে ও রোজার জন্য কাজে অনুপিস্থিত ছিল এবং তা এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া নিয়মিত শ্রমিকদের মধ্যে চল্লিশ দিনের কাজের মধ্যে অনেকেই অনুপস্থি থাকলেও প্রথম ধাপের মতো কাগজে কলমে শ্রমিক উপস্থিত দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করার পরিকল্পনা গ্রহন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সভাপতি ও চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে।
অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান-কর্মসৃজন প্রকল্পের এধরনের অভিযোগ বরাবর হলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রতিকার হয়নি। প্রকল্পের সাথে সংশিল্ষ্টি কর্মকর্তাগণ প্রকল্পের কাজ তদারকি না করে প্রকল্প সভাপতি ও চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজস করে সরকারি টাকা লোপট করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় বলে অভিযোগ দিনদিন জোরালো হচ্ছে। নামে প্রকাশে অনুচ্ছিক অনেক ইউপি সদস্য এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে।
এ বিষয় জয়নগর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার সজ্ঞয় কুমারের সাথে তার ০১৭১২-০৬০২৫৬ নং মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, এধরনের অভিযোগ ওই এলাকা থেকে অনেকেই বলে, তাদের বলেছি ইউএনও স্যারের কাছে দরখাস্ত দিতে কিন্তু কেউ দেয় না। আপনি জানেন তো,আমার নিজের অফিসে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজের চাপ থাকে। তারপর তো ফিল্ডে শ্রমিক থাকে না। শ্রমিকরা দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে।
এবিষয় জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন আল-মাসুদ বলেন, এবার বিল কিভাবে হবে তা ঠিক হয়নি। মেহেদীকে বলেছি পিআইও’র সাথে আলোচনা করতে। মেহেদী কে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সে প্রকল্পের একজন শ্রমিক। সে প্রকল্পের সকল শ্রমিকদের উপস্থিত অনুপস্থিতের হিসাব রাখে।
তিনি প্রকল্পের শ্রমিকদের কাজে অনুপস্থিতের বিষয় স্বীকার করে বলেন, ইরিধান কাটা মৌসুম ও রোজার জন্য শ্রমিকের একটি বড় অংশ কাজে অনুপস্থিত ছিল।
এ ব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রীতিমতো রেগে ও শাসিয়ে বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে কোন আভিযোগ নেব না। আপনি যে অভিযোগটা দিয়েছেন আজকে ডিসি অফিসে যেটা পার্সু করেছেন আমার মানে আপনি যদি সত্য অভিযোগটা দিয়ে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে কোন কথা নেই। আর আপনার মতো বিএনপি জামায়াতি ইসলামী করা সাংবাদিক এই সময় এসে এই সমস্ত নোংরামি করা, অফিস আদালতে যেয়ে আর খালি হুমকি দেন টুকটাক, বারবার জয়নগর ইউনিয়ন থেকে ভুয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন, পিআইওকে হুমকি দেন এগুলো বিধি ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আপনার অভিযোগ আপনার কাছে রাখেন- বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন