এমপি হিসেবে শপথ নিলেন ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মনসুর
দলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে নির্বাচিত সুলতান মো.মনসুর।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কামাল হোসেনের গণফোরামে নাম লিখিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী হন সুলতান মনসুর।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা জাতীয় সংসদ ভবনে তার দপ্তরে সুলতান মনসুরকে শপথবাক্য পাঠ করান।
জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। শপথ শেষে তার জন্য চা নাস্তার আয়োজন করে সংসদ সচিবালয়।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর এক সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে দলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়াপর পর তিনি কামাল হোসেনের সঙ্গে ভেড়েন।
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠনকারী কামাল হোসেন কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি ফোরাম গড়ে তোলেন।
এবার নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার সময় গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দুটোই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।
গত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন।
নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে তারা। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
গণফোরামের প্রার্থীদের মধ্যে সুলতান মনসুর ছাড়াও সিলেট-২ আসন থেকে দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে বিজয়ী মোকাব্বির খান।
সুলতান মনসুরের সঙ্গে মোকাব্বিরও শপথ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে বুধবার তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তিনি শপথ নিচ্ছেন না, দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (শপথ নিতে) গেলে অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। দলীয় সিদ্ধান্ত ও আইনগত সিদ্ধান্ত যা নেওয়া দরকার, সেগুলো আমরা নেব।”
মন্টুর ভাষায়, “যারা যাচ্ছে তাদের মাথা খারাপ না হলে …. যেখানে মূল দল বলছে, না যাওয়ার কথা। সেখানে দলের পরিপন্থি হয়ে এই কাজ করবে, এটা গ্রহণযোগ্য না।”
অন্যদিকে শপথ নেওয়ার বিষয়ে সুলতান মনসুরের ভাষ্য, যারা ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করেছে, তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতেই তিনি সংসদে যাচ্ছেন।
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে নাম লিখিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে ভোট করে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। আর দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন প্রবাসী মোকাব্বির খান গণফোরামের দলীয় প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে জয়ী হন। ওই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী না থাকায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরাম একাদশ নির্বাচনের ফল বর্জন করে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত অপর ৫ সদস্য শপথ না নিলেও একাদশ সংসদে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির।পরে অবশ্য শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।
মোকাব্বির শপথ না নিলেও শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন সুলতান মনসুর। আজ তিনি শপথ নিয়েই নিলেন।
এদিকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নিলেই তার বিরুদ্ধে দলীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল গণফোরাম। দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্পিকারকেও অবহিত করা হবে।
জানা গেছে, বুধবার বিকালে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে বৈঠক করেন গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। এই বৈঠকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ শপথ নিলে তার বিরুদ্ধে দলীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বিষয়টি স্পিকারকে লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত হয়। দলের এই সিদ্ধান্তের পরপরই সুর বদলান মোকাব্বির খান। আপাতত শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মোকাব্বির খান বুধবার বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আসছি। দল শপথের বিষয়ে ইতিবাচক থাকায় আমি ৭ মার্চ শপথ নিতে চিঠি দিয়েছিলাম। এখন আমাদের দল গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসিন মন্টুর নির্দেশে আমি শপথ নেয়া থেকে বিরত থাকছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘শপথ নেয়ার এখনও অনেক সময় বাকি আছে। পরে আবার বসে আমার শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে’।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বুধবার বলেন, ‘মোকাব্বির খান শপথ নিচ্ছেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ শপথ নিলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দলীয় সিদ্ধান্ত এবং আইনগত সিদ্ধান্ত যা নেয়া দরকার, সেগুলো আমরা নেব’।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন