চুক্তির পরও আসছে রোহিঙ্গারা
এবার মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনারা
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পরও থামছে না রোহিঙ্গা ঢল। গত সপ্তাহেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা জানান, কৌশল পরিবর্তন করে মিয়ানমার সেনারা এখন মানসিক নির্যাতন শুরু করছে। এ কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ নিউজ সেন্টারের এক খবরে বলা হয়, সহিংসতার কারণে রাখাইন থেকে এখনও পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা। গত সপ্তাহে প্রায় ১৮০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংগঠন (আইওএম) জানায়, সোমবার পাঁচ সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে আসেন ত্রিশ বছরের এক নারী। তিনি আইওএমকে জানান, সাত দিন আগে রাখাইন ছাড়েন তিনি। সেখানে তাদের গ্রাম পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে সেনারা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তবে এখনও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা এপারে ঢুকছে। যারা আসছে তাদের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে আরও হাজার খানেক রোহিঙ্গা এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ’ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে এ দেশে এসেছে ১১৭ জন। এ ছাড়া রাতের আঁধারে ট্রুলার বা ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আসছে রোহিঙ্গারা।
২৬ নভেম্বর মিয়ানমারের মংডুর বুচিডং থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া কামাল উদ্দিন নামের রোহিঙ্গা যুবক জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতনের ধরন পাল্টিয়েছে। তারা বর্তমানে শারীরিক নির্যাতন বাদ দিয়ে মানসিক নির্যাতন শুরু করেছে।
২৭ নভেম্বর অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ জাবের জানান, সমঝোতা নিয়ে মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা বিশ্বাসী নয়। এখনও মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে।
রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মিয়ানমারে এখনও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছে সেই দেশের মগ ও সেনারা। ঘরবাড়ি থেকেও বের হতে দিচ্ছে না তারা। তাই এখনও রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে আসছে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এবং তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নিজ দেশে ফিরতে আগ্রহী হলেও বড় অংশই বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার পক্ষে। বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী আয়েশা নুর বলেন, ‘জান হাতে নিয়ে মিয়ানমার থেকে অনেক কষ্টে এ দেশে এসেছি। মরতে আবার ওই দেশে যাব কেন?’ আবার অনেক রোহিঙ্গা দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজ হোক, কাল হোক স্বদেশে ফিরে যেতে চাই আমরা।’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যাতে ইন্ধন দেয়ার পাশাপাশি বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন। টেকনাফ ২ বিজিবির মেজর আরিফুল ইসলাম বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। গত কয়েকদিনে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে বলে জানান তিনি।
উখিয়া-টেকনাফে চলছে মিয়ানমারের অবৈধ মোটরসাইকেল : রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার সময় নিজেদের মূল্যবান মালামালের সঙ্গে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও নিয়ে আসছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় অবৈধ এসব মোটরসাইকেল চলাচল করলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে এসব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় উখিয়ায় ৩ আরোহী নিহত হয়েছেন। সচেতন মহলের মতে, মোটরসাইকেলগুলো জব্দ না করলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, এসব অবৈধ মোটরসাইকেল জব্দ করতে অভিযান চালানো হবে।
বিলুপ্ত বন, খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণীরা : উখিয়া-টেকনাফের বনভূমিতে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ও ঝুপড়ি ঘর গড়ে ওঠায় সংকটে পড়েছে বন্যপ্রাণীরা। তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে অনেক প্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। আবার অনেক প্রাণী তাদের স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, এক স্থানে এত মানুষের বসবাসের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, সেটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে পাহাড়-জঙ্গল যেভাবে কাটা পড়ছে তাতে বন্যপ্রাণীর খাবার সংকটসহ সব সমস্যাই হবে।
৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন : উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে মিয়ানমার নাগরিকদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজ এগিয়ে চলছে। পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকের হোসেন জানান, বুধবার পর্যন্ত ৭ লাখ ২ হাজার ১০৭ জন রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন