মেলায় সামাজিক বিনোদন প্রত্যাশা
এবার ‘উঠাও বাচ্ছা’ লটারি কলারোয়ায়, সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা আয়োজকদের পকেটে
এবার কলারোয়ায় শুরু হয়েছে ‘উঠাও বাচ্ছা’ লটারি খেলা। জেলা প্রশাসন এই লটারি খেলার অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন তারা জানেন না। কোন বাধা নিষেধ ছাড়াই কলারোয়ার চন্দনপুর হাইস্কুল ফুটবল মাঠে চলছে লটারির নামে জমজমাট জুয়া আর ‘প্রতিদিন’ সাধারণ মানুষের টাকা লুটে নেয়ার কৌশল।
জুয়ার আসরের নাম দেওয়া হয়েছে ঈদ আনন্দ মেলা। ঈদের ১৬ দিন পরে গত ১২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ঈদ আনন্দ মেলা। আর এই মেলার প্রধান আকর্ষণ দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র। র্যাফেল ড্র মঞ্চে নাচ পরিবেশন করছেন ঢাকা, খুলনা, যশোরের মেয়েরা।
তবে কিভাবে এই লটারির নামে জুয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে এর সদুত্তর দিতে পারেনি কেউ-ই। একেকজন দেখিয়ে দিচ্ছেন আরেকজনকে। ফলে সেখানেই অনুমেয় হয় ভুয়া অনুমোদনের এ লটারি খেলার বিষয়টি। কতিপয় প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করে ২০ টাকার বিনিময়ে টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণের অলংকার, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেয়ার কথা প্রচার করে প্রতিদিন শতাধিক ভ্যান, ইজিবাইক লটারির টিকিট নিয়ে সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। বিক্রি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার লটারি টিকিট। আর পুরস্কার দেয়া হয় মাত্র এক থেকে দুই লক্ষ টাকার। এভাবে ‘প্রতিদিন সুকৌশলে’ হাতিয়ে নিচ্ছে মেলা কমিটি ও র্যাফেল ড্র পরিচালকরা লক্ষ লক্ষ টাকা। টিকিটের মূল্য ২০টাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষের অনেকে সেটা হয়তো বুঝেও উঠতে পারছেন না। আর রাত ১০টার সময় শুরু হয় দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র। আর র্যাফেল ড্র শুরু হওয়ার আগে সেই মঞ্চে চলে গান, কৌতুক আর নৃত্য। কলারোয়ার একটি ডিশ ক্যাবল লাইন এই খেলা নিয়মিত দেখাচ্ছে।
কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি গ্রামের মিলন, মদনপুর গ্রামের সিরাজ, বুঝতলার গফুর জানান- ১২ তারিখে এই দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র শুরু হয়। আর প্রতিটি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। ইতোমধ্যে একজন সেলুন কর্মচারি একটি ফ্রিজ ও নৈশ্য প্রহরি একটি টেলিভিশন পুরস্কার পেয়েছেন। আর টিকিট বিক্রি করার সময় প্রচার মাইকে এই সব কথা বলে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
‘আজকের পুরুস্কার জামাই বাবুর উপহার, শ্বশুর বাড়ির হোন্ডা মোটর সাইকেল, বউয়ের স্বপ্ন স্বর্ণের অলংকারসহ একাধিক পুরস্কারের কথা বলে প্রতিদিন শতাধিক ভ্যান, ইজিবাইক শহরে, গ্রামে, হাট, বাজারে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করে। এভাবে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ লাখ টাকার টিকিটি। অথচ পুরস্কার দেয়া হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকার। বাকি টাকা প্রশাসন থেকে শুরু করে যার যার ভাগ ঠিকমত পৌছায়ে যাচ্ছে। পুরুষ্কারের আসায় সর্বস্ব হরাচ্ছে ভ্যান চালক, বউ, ঝি, সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা। আর সঠিক অনুমোদন না থাকায় সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বা ভ্যাট- এমনটাই জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার কয়েকজন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আহম্মদ আলী, কলারোয়ার গোয়ালচাতর গ্রামের আরশাদ, ফাইম জানান- একি শুরু হলো, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা হচ্ছে সেই টাকা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য না কিনে, কিনছে লটারির টিকিট। আর যখন পুরস্কার পাচ্ছে না তখন উঠছে মাথায় হাত। বউঝিরা হাঁস মুরগি বিক্রি করে আবার কেউ কেউ ঘরের চাল বিক্রি করে এই লটারির টিকিট কিনছে।
জানা জানি হয়ে যাওয়ায় সংসারে ঘটছে অশান্তি। স্কুল কলেজেরর ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন অজুহাতে পিতা মাতার নিকট থেকে টাকা নিয়ে লটারি টিকিট কিনছে।
এই তথ্য সংগ্রহকালে গয়ড়া বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান- জেলা প্রশাসক কিভাবে এই সব জুয়ার অনুমোদন দেয় তা কল্পনা করা যায় না। এক মাস যাবৎ এই মেলা চললে মানুষের কাছে আর টাকা থাকবে না। এলাকায় অপরাধ বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কলারোয়ার এলাকার মোশারাফ, সোনাবাড়িয়ার সামসুর, শহিদুল ডাক্তার জানান- শুনেছি জেলা প্রশাসক কলারোয়া উপজেলার মধ্যে দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র টিকিট বিক্রি করতে অনুমতি দিয়েছে। অথচ সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় শতাধিক ব্যারেলে টিকিট বিক্রি হচ্ছে নিয়মিত-প্রতিদিন।
এদিকে সার্কাস দেখতে আসা দর্শকরা জানায়- সার্কাস মানে কিছু জীবজন্তু থাকবে। সার্কাসের লোকজন কিছু খেলা দেখাবে। সব শ্রেণির লোকজন খেলা দেখতে পারবে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে চলমান দি লক্ষ্মি নারায়ন সার্কাসে হাতি ছাড়া আর কোন জন্তুর খেলা দেখানো হচ্ছে না। কিছুটা অশ্লীল পোশাক পরিহিত যুবতি ও মধ্য বয়সী মহিলারা শারীরিক কসলত, খেলা ও গান পরিবেশন করছেন।
এর পরেও সার্কাস, মিনি ট্রেন, শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ঘোড়া-প্লেনের রাউন্ড অনেককে আনন্দ দিচ্ছে। সেগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত মানুষের তেমন অভিযোগ-অনুযোগ না থাকলেও র্যাফেল ড্র নিয়ে ‘কৌশলী প্রতারণা’ অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে।
চন্দনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী জানান- রমজান মাসে ম্যানেজিং কমিটির লোকজন এসে আনন্দ মেলার নামে তার নিকট থেকে একটা ছাড়পত্র নেয়। কমিটির অন্যতম সদস্য স্থানীয় আ.লীগ নেতা শওকাত খাঁ ও অলিয়ার মেম্বর এই মেলার প্রধান। তবে মেলার কথা বলে মেলার নামে দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র বা অশ্লীলতার বিষয়টা জানতাম না। তবে পরে ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে স্কুলের কিছু জিনিসপত্র কিনে দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জানান- জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি অনুমতি দেয়ার পর তিনি অনুমতি দিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ আনন্দ মেলার অনুমতি না দিলে তো আর মেলা বসতো না। ওলিয়ার মেম্বর, শওকাত আলী খাঁ আর প্রধান শিক্ষক আনছার আলীর নেতৃত্বে চলছে এই মেলা। তিনি এর মধ্যে নেই।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান- অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র বৈধ কি না তিনি বলতে পারবেন না। তিনি আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ের প্রধান।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান- দৈনিক স্বপ্নের ঠিকানা র্যাফেল ড্র অনুমতি আছে কিনা বলতে পারবো না। তবে অশ্লীল নৃত্য হচ্ছে না। সার্কাস শুরু হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দীন জানান- তিনি বিষয়টি জানেন না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জিজ্ঞাসা করেন। তারা বলতে পারবে। তিনি বিষয়টি খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
র্যাফেল ড্র’র এ অনুমতির বিষয়টি একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দেয়ায় অনুমান করা যেতে-ই পারে যে সেটা ‘অবৈধ’।
আর অবৈধ, কৌশলী প্রতারণা র্যাফেল ড্র অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তবে তারা সামাজিক বিনোদন হিসেবে শালীনতা বজায়পূর্বক সার্কাস, মিনি ট্রেন, নাগরদোলা, প্লেন-ঘোড়ার রাউন্ডগুলো রেখে কিছুদিন মেলা চালানোরও প্রত্যাশা করছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন