একান্ত সাক্ষাতকারে সাতক্ষীরার প্রথম মহিলা আম্পায়ার
‘কানাঘুষাতে মনোবল হারাইনি’
গতানুগতি ও প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় সাধারণত ক্রিকেট আম্পায়ারিং-এর ক্ষেত্রে পুরুষদের-ই দেখা যায়। সেখানে যখন একজন মহিলাকে দেখা যাবে অবশ্যই সেটা একটু হলেও ব্যতিক্রম ও অনন্য। তেমনি একজন সাতক্ষীরা জেলার প্রথম মহিলা আম্পায়ার মিনতী রাণী।
ক্রীড়াক্ষেত্রে সাতক্ষীরা জেলা তরতর করে এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে। শুধু ছেলেরা নয়, এগিয়ে এসেছে এই জেলার মেয়েরাও। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ‘সাবিনা’ এই জেলার-ই মেয়ে। গোলমেশিনখ্যাত এবং বাংলাদেশের একমাত্র প্রমিলা ফুটবলার যিনি বিদেশি লীগেও খেলছেন। সেই সাবিনা ‘জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টূর্ণামেন্টে-১৭’ তে সাতক্ষীরা পৌরসভা দলের কোচের দায়িত্বও পালন করছেন। যা সাতক্ষীরার ইতিহাসে ‘প্রথম কোন নারী’ পুরুষ ফুটবল দলের কোচ হয়েছেন।
এছাড়াও খোজঁ পাওয়া গেছে এই জেলার আর এক প্রতিভাবান প্রমিলাকে। যিনি জেলা দলের হয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেছেন। ‘সাতক্ষীরা জেলা ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগ’-এ আম্পায়ারিং করে ইতিহাস রচনা করেছেন তিনি। যা কিনা শুধু সাতক্ষীরা জেলার-ই নয় যতদুর জানা যায় খুলনা বিভাগের মধ্যেও প্রথম কোনো নারী, যিনি ক্রিকেট আম্পায়ারিং করছেন। ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তাঁর সাক্ষাৎকারও প্রচারিত হয়েছে এবং ম্যাচ পরিচালনার লাইভও দেখিয়েছে।
গত ০৩/১২/১৭ ইং তারিখে পুলিশ সুপারের উইমেন্স সেন্টারে বসে ‘কলারোয়া নিউজ’কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জেলার প্রথম মহিলা ক্রিকেট আম্পায়ার মিনতি রাণী তাঁর পথচলার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
সাক্ষাতকার নেন ‘কলারোয়া নিউজ’র বার্তা সম্পাদক ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শিক্ষক শেখ শাহাজাহান আলী শাহীন।
‘কলারোয়া নিউজ’কে দেয়া সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো :
কলারোয়া নিউজ : ‘কলারোয়া নিউজ’এর পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ। আপনার পূর্ণনাম একটু বলবেন?
মিনতী রাণী: আপনাদের ও কলারোয়া নিউজ কে ধন্যবাদ। আমার পূর্ণ নাম মিনতী রাণী।
কলারোয়া নিউজ : আপনার স্বামীর নাম?
মিনতী রাণী: সুফল মন্ডল।
কলারোয়া নিউজ : আপনার সন্তান কয়টি?
মিনতী রাণী: এক ছেলে, এক মেয়ে।
কলারোয়া নিউজ : ছেলে মেয়েরা কোথায় পড়ালেখা করছে?
মিনতী রাণী: আমার ছেলে এ বছর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে এবং মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
কলারোয়া নিউজ : আপনার লেখাপড়া কোথায়?
মিনতী রাণী: রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স, বি.এল কলেজ, খুলনা।
কলারোয়া নিউজ : কোথাও চাকরি করেন?
মিনতী রাণী: বর্তমানে ‘একটি বাড়ী, একটি খামার এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ দেবহাটা শাখার ‘মাঠ সহকারী’ হিসাবে কর্মরত আছি। এর পূর্বে আমি অন্য আর একটি এনজিও (আইডিয়াল) তে কর্মরত ছিলাম।
কলারোয়া নিউজ : আপনার স্বামী কি করেন?
মিনতী রাণী: তিনি মাছের খামার এর ব্যবসা করেন।
কলারোয়া নিউজ : ও, আপনার বাড়ী কোথায়?
মিনতী রাণী: গ্রাম- বড় শান্তা, পারুলিয়া, দেবহাটা।
কলারোয়া নিউজ : কিভাবে খেলার জগতে আসলেন?
মিনতী রাণী: ছোট বেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। প্রাইমারী স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করা শুরু করলাম এবং সাফল্য পেতে থাকলাম। এতে করে দিনে দিনে আগ্রহ আরও বাড়তে লাগল।
কলারোয়া নিউজ : তারপর কিভাবে এগিয়ে চলা?
মিনতী রাণী: স্কুল পর্যায় জেলায় খেলতে আসতে থাকলাম এবং শাহ্ আলম (শানু) ও ডেবিট স্যারের নজরে পড়ে গেলাম। উনাদের উৎসাহে ক্রিকেট ভালবাসা এবং শেখা।
কলারোয়া নিউজ : জেলায় ক্রিকেট খেলেছেন?
মিনতী রাণী: হ্যাঁ, জেলা দলের হয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট আমি ঢাকাতে জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রতিনিধিত্ব করেছি।
কলারোয়া নিউজ ঃ কেমন অনুভুতি ছিল সেই সময়?
মিনতী রাণী: বলার মত না, কারণ এখনও অনুভব করি এই অজ পাড়াগাঁয়ের এক মেয়ে আমি জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এখনও মনে হয় যদি আজও খেলাটা চালিয়ে যেতে পারতাম কিন্ত বয়সের কাছে সবাই বাধা।
কলারোয়া নিউজ : কার অনুপ্রেরণা আপনাকে বেশি উৎসাহ পেয়েছেন?
মিনতী রাণী: অবশ্যই শানু ও ডেবিট স্যারের অনুপ্রেরণা খেলার ক্ষেত্রে। এবং আম্পায়ারিং কোর্স করেছি এই দুজনের প্রেরণায়। আর বর্তমানে আমি যে ক্রিকেট আম্পায়ারিং করছি তা মুকুল স্যারের অবদান।
কলারোয়া নিউজ : আম্পায়ারিং জগতে কিভাবে আসা?
মিনতী রাণী: বিবাহের পর শানু ও ডেবিট স্যারের কথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর অধীনে ক্রিকেট আম্পায়ারিং কোর্স সম্পন্ন করি ২০০৯ সালে। এবং সফলতার সাথে কোয়ালিফাইড আম্পায়ার হিসাবে সাতক্ষীরা জেলা আম্পায়ার এবং স্কোরার এ্যাসোসিয়েশনে এ অন্তর্ভূক্ত হই।
কলারোয়া নিউজ : তাহলে কেন এতদিন ম্যাচ পরিচালনা করেন নি?
মিনতী রাণী: আসলে জেলা থেকে আমাকে কোন ম্যাচের বিষয়ে কিছু বলা হয় নি। কিন্তু বর্তমান সাধাররণ সম্পাদক মো. আকতারুজ্জামান মুকুল ভাই আমাকে এই লীগে ম্যাচ পরিচালনার জন্য ডাক দেন এবং বলেন ম্যাচ পরিচালনা করতে পারব কি না? আমি মুকুল ভাইয়ের কথায় উৎসাহ পেলাম এবং ম্যাচে আম্পায়ারিং করতে দাড়ালাম।
কলারোয়া নিউজ : কেমন অনুভুতি ছিল?
মিনতী রাণী: অবশ্যই প্রথমে মুকুল ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারপর বলব, একজন মেয়ে হিসাবে সাতক্ষীরা কলেজ মাঠে আম্পায়ারিং করব তা উত্তেজনায় ও আনন্দে আমার কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
কলারোয়া নিউজ : ভাবিষ্যতে কতদূর যেতে চান?
মিনতী রাণী: অবশ্যই সুযোগ পেলে ইচ্ছা আছে। জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করার প্রবল ইচ্ছা আছে আমার। আমার মনোাবল দৃঢ়। আমি যখন যে কাজ করি তা আন্তরিকভাবে ও সৎভাবে করার চেষ্টা করি, যে জন্য একজন মেয়ে হিসাবে ক্রীড়াঙ্গনে আজও আছি, ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
কলারোয়া নিউজ : গ্রামাঞ্চলের একজন মেয়ে হিসাবে খেলাধুলায় সরাসরি থাকার ফলে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কী?
মিনতী রাণী: ভাই, কিছু গ্রাম্য লোকের কানাঘুষা, সমালাচনা আর অনুৎসাহ ছাড়া আর তেমন কোন কিছু প্রতিবন্ধকতা সামনে আসেনি। তবে দূ:খজনক হলেও সত্য যে, সামাজিকভাবে বেশিরভাগ মানুষ উৎসাহ দিতেও আসেনি।
কলারোয়া নিউজ : এ ক্ষেত্রে আপনার পরিবার বা পিতা-মাতার সমর্থন কেমন ছিল?
মিনতী রাণী: অবশ্যই আমার বাাবা, মা’র অকুন্ঠ সমর্থন ছিল বলেই আমি ক্রীড়াজগতে এখনও টিকে আছি। ছোট বেলা থেকেই আমার বাবা-মা আমাকে উৎসাহ দিতো এবং কখনও বিরূপ আচরণ করেননি। তারা কোনভাবেই ক্রীড়া সম্পর্কিত বিষয়ে বাঁধা দিত না বলেই আমি ছোটবেলা থেকেই আজ পর্যন্ত এই জগতে থাকতে পেরেছি। আমি কৃতজ্ঞ পিতা-মাতার প্রতি।
কলারোয়া নিউজ : বিবাহের পর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ীর দিক থেকে কোন বাঁধা আসেনি?
মিনতী রাণী: না, আমার স্বামী আমাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলার জন্য গেলে নিয়ে যেত। এখনও মটরসাইকেল করে নিয়ে যায়।
কলারোয়া নিউজ : আপনার সন্তানরা কেমন ফিল করে?
মিনতী রাণী: এই দেখেন আজ এই অনুষ্ঠানে আমার ছেলে মটরসাইকেল করে নিয়ে এসেছে। আর আমার সন্তানরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে।
কলারোয়া নিউজ : খেলার জন্য আপনার অফিস কেমন সমর্থন করে?
মিনতী রাণী: আমি যখনই খেলার বিষয়ে কোথাও যেতে চাই বা খেলার কোনো প্রোগ্রামের জন্য অফিস আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করে থাকে। যে জন্য আমি চাকরির সাথে সাথে মাঠের সাথে সর্ম্পক রাখতে পেরেছি।
কলারোয়া নিউজ : ইতোমধ্যে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘যমুনা টিভি’ তে আপনার সাক্ষাৎকার লাইভ প্রচার করেছে আর ‘কলারোয়া নিউজ’এটি প্রকাশ করবে- এ বিষয়ে আপনার অনুভুতি কেমন?
মিনতী রাণী: আমি মনে করি, আপনি সৎ ও আন্তরিকভাবে কাজ করলেই একদিন না একদিন তার মূল্যায়ন পাবেন। সেজন্য মনে করি আমি কিছু কাজ করেছি বিধায় আজ এগুলো হচ্ছে। আর টিভি, পত্রিকা বা অন-লাইন পত্রিকায় আমাকে নিয়ে লেখালেখির কারণে আমি আরো উৎসাহবোধ করছি।
কলারোয়া নিউজ : আমাকে এত সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর সময় পেলে কলারোয়াতে বেড়াতে আসেবেন।
মিনতী রাণী: ধন্যবাদ আমাকে নয়, শাহিন ভাই ও ‘কলারোয়া নিউজ’ কে ধন্যবাদ। আমাকে নিয়ে লিখবেন জেনে তো আমি বেশ আনন্দিত হচ্ছি। আর অবশ্যই কলারোয়াতে আমার যাওয়ার ইচ্ছা আছে, সময় পেলে আসব।
যমুনা টিভির সাক্ষাতকারটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) :
https://web.facebook.com/ripon.shadhin/videos/1459208524194556/
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
কলারোয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইম একাদশ, গদখালি ও পাথরঘাটা সেমিতে
কলারোয়ায় ৮দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১ম, ২য় ও ৩য় খেলায় ফাইমবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মাধবকাটিকে হারালো স্বাগতিকরা
কলারোয়ার কেঁড়াগাছিতে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে সাতক্ষীরা সদরের মাধবকাটি ফুটবলবিস্তারিত পড়ুন
সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
সাতক্ষীরায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখবিস্তারিত পড়ুন