একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণা বৃহষ্পতিবার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সিইসির এই ভাষণ প্রচারিত হবে। রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিবাদমান পরিবেশেই তফসিল ঘোষণার জন্য শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে সকালে সিইসির সভাপতিত্বে কমিশন সভায় মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের দিনক্ষণসহ তফসিলের বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনপূর্ব সময় শুরু হয়ে যাবেে সভা-সমাবেশসহ সব ধরণের নির্বাচনী প্রচারের বিষয়টি ইসির নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য শতভাগ প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর যদি কোনও দল বা কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সভায় ৮ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও মনোনয়নপত্র দাখিল ও ভোট গ্রহণের তারিখসহ বিস্তারিত সময়সূচি ৮ নভেম্বরে আরেকটি সভায় নির্ধারণ করা হবে। ও্ই দিন নির্বাচন কমিশনার কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী জানান, ৪ নভেম্বরইে তফসিল ঘোষণার ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপসহ সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমঝোতার আগে তফসিল না ঘোষনার জন্য ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে। ইসি অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট ও বিকল্প ধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও ইসির সঙ্গে বৈঠক করে তফসিল না পেছানোর দাবি জানান হয়েছে। এমনই পরিস্থিতি আজ তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি। গত ৬ নভেম্বর সিইসি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তফসিল পেছানোর দাবি সম্পর্কে বলেন, ‘একক দল নয়, বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক দল আছে সবাই যদি বলে তাহলে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। জানুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
# শতভাগ প্রস্তুত কমিশন, সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন সিইসি
# রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে
# মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হচ্ছে
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ২০ অথবা ২৩ ডিসেম্বর নির্ধারণের সম্ভাবনা বেশি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছে। এবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ থাকছে প্রার্থীদের জন্য। এবার তবে ভোটের দিন নির্ধারণে কমিশন সদস্যরা সবাই একমত নাও হতে পারেন বলে আভাষ মিলছে। ইসির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সীমিত পরিসরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যবহারের কথা জানান হয়েছে। যদিও এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র আপত্তি রয়েছে। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দলের পাশাপাশি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে এসব আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। তারা জানিয়েছে, শহর এলাকার অন্তত ১০ ভাগ ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করবেন তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। আর জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সাথে দেখা করে এই মর্মে লিখিত অনুরোধ জানায় যে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনটি যেন ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের খুব কাছাকাছি নির্ধারণ না করা হয়। সম্ভব হলে নির্বাচনের দিন ২০ ডিসেম্বরের আগে বা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারণ করারও প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। সেক্ষেত্র্ েবড়দিনের জন্য ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর এই তিন দিন বাদ রেখে এর আগেই ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধায় তৎকালীন সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমদও জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেন। সে সময় প্রধান বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার হুমকির মুখে নির্বাচনী তফসিল করা হয়। কাজী রকিবউদ্দীন ওই দিন তাঁর ভাষণের শুরতেই সকলের অংশ গ্রহণে একটা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর সে আহ্বানে সাড়া মেলেনি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচন কমিশন আশা করছে এবার সব দলের অংশ গ্রহণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় তফসিল ঘোষণা
একাদশ জাতীয় নংসদ নির্বাচনের তফসিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমেপ্র্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। সিইসির ভাষণ বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার সম্প্রচার করবে। অন্যান্য টেলিভিশন ও রেডিওকে সেখান থেকে ফিড নিতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। আজ সকাল ১১টার পর সিইসির ভাষণ রেকর্ডিং করা হবে। ভাষণে সব দলকে নির্বাচনে আসার জন্য আহবান জানাবেন সিইসি।
সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর আজ রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। জন চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন সড়কে জনসভা এমনকি পথ সভাও করা যাবে না। মাইকের ব্যবহারও সীমিত করা হবে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে নির্বাচন বিরোধী যে কোন ধরণের তৎপরতা। ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া কোন ধরণের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে। এখন সভা-সমাবেশ করার যে সুযোগ রয়েছে তা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আর থাকবে না। সরকারি দলের ক্ষেত্রেও এ নিয়ন্ত্রণ প্রযোজ্য হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাতে আছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তাঁহাদের নিজেদের বা অন্যদের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় সরকারি যান, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধাভোগ করতে পারবেন না। এছাড়া নিজেদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও ব্যবহার করতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী আইন অনুসারে যে কোন সভা-সমাবেশ, মিছিল-এসবের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে নির্বাচনী প্রাচারও শুরু করা যাবে না। তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্বাচনী জনসভা বা সমাবেশও করা যাবে না।
নির্বাচনী মালামাল পাঠানোর নির্দেশ
আজকের মধ্যে মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ব্যাপারে ইসির সহকারী সচিব সৈয়দ গোলাম রাশেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, মনোনয়ন ফরম, জামানত বই, রশিদ বই আচরণ বিধিমালা ৮ নভেম্বর তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে দেশের সব জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে। তারা নির্বাচনী মালামাল গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবকতা রয়েছে। সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০দিন পূর্বে নির্বাচন আয়োজন করার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে গত ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনী কাউন-ডাউন শুরু হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন