একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত হতে বলেছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকী থাকলেও আগেভাগে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুত হতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ম্যানুয়াল প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয় থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আইন-কানুন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যদিও কমিশন এটি ভোটার সংশোধনী কর্তৃপক্ষের জন্য একদিনের প্রশিক্ষণ বলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে মুলত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্ভূল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে বৈঠকে বিগত সংসদ নির্বাচনের একটি করে ম্যানুয়াল সংশ্লিষ্টদের প্রদান করা হয়। বলা যেতে পারে এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির বর্তমান দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সাংবিধানিকভাবে বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবকতা রয়েছে। সেই হিসাবে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্য নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণা করে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের ম্যানুয়াল প্রদান
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলেন, রবিবার সকালে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ৬৪ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদে সংশোধনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মাঠ প্রশাসনকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আমরা ইচ্ছে করলে সকল নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে রিভাইজিং অথরিটি করতে পারতাম। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আমরা নিয়েছি যাতে মানুষ ভালোভাবে বিষয়টি গ্রহণ করতে পারে, এ সম্পর্কে তারা জানতে পারেন। এছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেহেতু নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সাথেও সম্পৃক্ত থাকেন, তাই তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রশাসনের নতুনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সারা বছর আমরা নির্বাচন নিয়ে কাজ করে থাকি। আমাদের সামনে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে। এই চ্যালেঞ্জের সাথে কিন্তু সবসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমাদেরকে সহযোগীতা করে থাকেন। আমাদের নির্বাচনটা সুষ্ঠ, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য আপনাদের যথেষ্ট অবদান আছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের যেসমস্ত আইনকানুন গুলো আছে, আমাদের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রশাসক একাডেমি যাতে সেই সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করেন সেজন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। বিশেষ করে প্রশাসন একাডেমিতে আমাদের নবীন কর্মকর্তা প্রথম থেকেই যাতে আমাদের নির্বাচনী আইন কানুন সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের তিন শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ভোটার তালিকা সংশোধন উপলক্ষ্যে ইসির কার্যপত্র ছাড়াও জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ম্যানুয়াল উপস্থিত কর্মকর্তাদেরকে সরবরাহ করা হয়। যাতে আগে থেকেই এগুলো পড়ে ইসির নির্বাচনী আইনকানুনগুলো তারা জানতে পারেন।
বৈঠক শেষে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে আমরা একদিনের একটি ব্রিফিং দিয়েছি, এই খসড়া ভোটার তালিকাটি সঠিকভাবে চূড়ান্তভাবে যাতে রুপ পায়। এই ভোটার তালিকার উপরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং আমরা চাই সামনে যে ভোটার তালিকাটি হবে সেটি যাতে নির্ভুল হয়। সে জন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে বাজেট ৬শ কোটি টাকা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেটের আকার বাড়ছে। প্রতি পাঁচবছরে এই বৃদ্ধির হার ১০০ কোটি টাকা করে। গত নির্বাচনে ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হলেও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের খাত ধরা হয়েছে ২৯টি। তবে নির্বাচন পরিচালনা খাতের খতিয়ান বড় হলেও সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় আইনশৃঙ্খলায়। খাতওয়ারী অর্থ বরাদ্দের হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ বা অনেক ক্ষেত্রে তিনগুণ ও চার গুণ করা হয়েছে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের বাজেট ছিল ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। নবম জাতীয়সংসদ নির্বাচনে ওই বাজেট ৯২ কোটি ২৯ লাখটাকা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। তবে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ১৪৭ আসনে, বাকিগুলো অর্থাৎ ১৫৩ আসনের জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এই নির্বাচনের ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৩০০ কোটি, যার মধ্যে ব্যয় হয় ২৯২ কোটি টাকা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন