১৭ কোটি টাকার ১২কোটিই লোপাট সাতক্ষীরা মেডিকেলে!!
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সদর হাসপাতালের জন্য ১৭ কোটি টাকার কেনাকাটায় প্রায় ১২ কোটিই লোপাট হয়েছে। পণ্য সরবরাহ ছাড়াই জাল স্বাক্ষরে বিল তুলে নিয়েছে এর সঙ্গে জড়িত চক্রটি। জড়িতদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান দুটির জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৭ কোটি টাকা দামের একটি সফটওয়্যার এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। কাগজে-কলমে এসব কেনা হলেও বাস্তবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতির কোনো হদিস নেই। ৭ কোটি টাকার সফটওয়্যারের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার পণ্যের মধ্যে সন্ধান মেলেনি প্রায় ৫ কোটি টাকার পণ্যের। সব মিলিয়ে ১২ কোটি টাকাই লোপাট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট একটি অসাধু চক্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই এ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ কোটি টাকা মূল্যমানের ‘পিকচার আর্কাইভিং কমিউনিকেশন সিস্টেম (পিএসিএস) নামের একটি সফটওয়্যার কেনা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে বিল জমা দিলে ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তত্ত্বাবধায়ক স্বাক্ষর করেন।
গত এপ্রিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের একটি পরিদর্শন কমিটি সেখানে পরিদর্শনে গেলে এই সফটওয়্যারের কোনো অস্তিত্ব পায়নি।
একজন উপ-সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি সফটওয়্যার দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী। এমনকি এটি কেন কেনা হয়েছে, কীভাবে ব্যবহার করা হবে- সে বিষয়েও বিস্তারিত বলতে পারেননি তিনি।
জানা গেছে, পিকচার আর্কাইভিং কমিউনিকেশন সিস্টেম (পিএসিএস) নামের এ সফটওয়্যারটি সাধারণত যে কোনো ধরনের ডিজিটাল ইমেজিং মেশিনে ছবি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি মেশিনে এটি ব্যবহার করলে দেশে বা দেশের বাইরে চিকিৎসার্থে গেলে নির্দিষ্ট রোগীর রিপোর্ট ও ইমেজ সেখানে পাওয়া যাবে। তবে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি।
এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির সিটিস্ক্যান বা এমআরআই মেশিনে এ ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে। তাই আলাদা করে কেনার প্রয়োজন নেই।
এ ধরনের মেশিন আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসিএস সফটওয়্যারের বাজারমূল্য এক লাখ থেকে দেড় লাখ ডলারের মধ্যে। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য এক থেকে সোয়া কোটি টাকা।
তারা জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে দামে এই সফটওয়্যার কিনেছে সেই দামে একটি সাধারণ এমআরআই মেশিন এবং এর সঙ্গে দুই থেকে তিন কোটি যোগ করলে একটি আধুনিক প্রযুক্তির এমআরআই মেশিন কেনা সম্ভব।
এত দামে এ ধরনের সফটওয়্যার কেনার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহজাহান আলী বলেন, এটি আধুনিক প্রযুক্তির সফটওয়্যার। এটি সংযুক্ত হলে হাসপাতালের সব ডিজিটাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচারের ছবি সংরক্ষিত থাকবে।
রাজধানী ঢাকার কোনো সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ব্যবস্থা না থাকলেও সাতক্ষীরায় তিনি কেন এ সফটওয়্যার কিনলেন- জানতে চাইলে ডা. শাহজাহান বলেন, এটা ওপরের নির্দেশে কেনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের জন্য কেনা হবে। এটা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনা হল কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই ওপর থেকে হয়েছে।
স্বা
স্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আমিনুল হাসান বলেন, অধিদফতর থেকে কোনো কিছুই কেনা হয় না। সবসময়ই স্থানীয় পর্যায়ে অর্থাৎ হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক বা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে যে ক্রয় প্রস্তাব আসে তার পরিপ্রেক্ষিতেই মালামাল কেনা হয়ে থাকে।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় দশ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। দুটি আলাদা বিলে এ টাকা পরিশোধ করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান। একটি বিলে ১৬ আইটেমের ৩৬টি যন্ত্রপাতির বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫০ টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৩টি আইটেমের ২০টি যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যার দাম এক কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। বাকি যন্ত্রপাতির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে অপর বিলে ৩টি আইটেমের ৯টি যন্ত্রপাতির বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে রয়েছে ৪টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। এর প্রত্যেকটির দাম ধরা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকা।
কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, সর্বাধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের দাম ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
প্রতিটি মেশিন কিনতে অতিরিক্ত ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ চারটি মেশিনে সরকারের গচ্চা গেছে ২ কোটি টাকা।
এ ছাড়া কালার ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড ৪ডি মেশিনের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ১২ লাখ টাকা; অথচ ১ কোটি টাকায় আধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের মেশিন কেনা সম্ভব। সেদিক থেকে এখানে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা।
একইভাবে এনেসথেশিয়া মেশিনের দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা; যার প্রকৃত মূল্য ২২ লাখ টাকা, দুটি মেশিনের দাম পড়ে ৪৪ লাখ টাকা। এখানে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
১৮টি নেবুলাইজার মেশিনের দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অথচ ভালো মানের নেবুলাইজার মেশিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দামে কেনা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি মেশিন সাড়ে ৫ হাজার টাকা হলেও এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৯০ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় বিলে সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রায় ৫ কোটি টাকাই বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দামের এ পার্থক্য খুঁজে পেয়েছে।
তথ্যসূত্র সংগ্রহে : গোপাল ঘোষ বাবু, স্টাফ রিপোর্টার
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন