সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদে তরমুজ চাষে কৃষকদের বিপ্লব
আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ ও গত বছর দাম ভাল পাওয়ায় এবার পাইকগাছায় লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ২শ’ হেক্টর বেশি ৪১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রথম দিকে পানির অভাবে তরমুজ আবাদ মাজ পথে বিঘিœত হলেও ফলন ভাল হওয়ায় চলতি মৌসুমে ৫০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে উপজেলায় তরমুজের আবাদ আরো বাড়তে পারে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী জানায়,পাইকগাছার ২২ নং পোল্ডার ও গড়–ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া ও কুমখালীতে দীর্ঘ দিন যাবৎ তরমুজ চাষ করছেন সেখানকার কৃষকরা। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ ও সেখানকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ঐ এলাকা উপজেলার তরমুজ চাষের জন্য সমৃদ্ধ। এখানকার তরমুজের ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাই এর চাহিদা ও দামও অপেক্ষাকৃত বেশী। সুন্দরবন উপকূলীয় ও চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত জনপদে যখন পরিবেশ বিধ্বংসি চিংড়ি চাষ দিন দিন প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে,সেখানে তরমুজের আশা জাগানিয়া সম্ভাবনা স্থানীয় কৃষকদের পথ দেখাচ্ছে নতুন আলোর।
স্থানীয়রা জানান,তরমুজ চাষে শুধু চাষীরাই নয়,উৎপাদন মৌসুমে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যায় কর্মসংস্থান হয় এলাকার শ্রমজীবিদের।
কৃষি অফিস জানায়, চাষাবাদে গত কয়েক বছরে কৃষকদের সাফল্য ও উৎসাহের উপর নির্ভর করে এবছর পাইকগাছা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কৃষকরা লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ৪১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড পাকিজা ও ড্রাগণ জাতের তরমুজের আবাদ করেন। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে আবাদ হয়েছে পাকিজা ও ৩০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন জাতের তরমুজ। কৃষি অফিস আরো জানায়,উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারে চাষ হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৮০ হেক্টর ও গড়–ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া কুমখালী এলাকায় বাকি ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস ও সংশ্লিষ্ট চাষীরা জানান,মৌসুমের শুরুতে সেচের জন্য পানির সংকট না থাকলেও এবছর বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় শেষ দিকে পানির চরম সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে ২২ নং পোল্ডার এলাকার চাষীরা রীতিমত বিপাকে পড়েন। মূলত ঐসময় স্থানীয় খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পানির এ সংকট বলে জানান তারা।
এব্যাপারে উপজেলার কালিনগর গ্রামের মিন্টু বালা জানান, তিনি এবছর ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তবে শেষের দিকে খালে পানি না থাকায় পাইপ দিয়ে কয়েক শ’ মিটার দূর থেকে পানি এনে ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। তবে এবার গতবারের চেয়ে আবাদ ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যে তরমুজ মওশুম শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার ক্ষেতের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। তার ধারণা,বিঘা প্রতি এবছর প্রায় ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে তার। সেখানকার অপর চাষী পার্বতী সানা জানান,তাদের এলাকা তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হলেও সেচ ব্যবস্থা না থাকায় শুরুতেই নানা মুখী সংকট তৈরী হয়েছে। বিশেষ করে অনেক দূর থেকে পাইপযোগে পানি এনে চাহিদা মেটাতে হয় তাদের।
এব্যাপারে চাষী ও শ্রমিক লতিকা ও কামনা বালা জানান,তরমুজ উৎপাদন মৌসুমে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যা করে ঘন্টা প্রতি ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন তারা। চাষী মেঘনা বালা জানান,তাদের উৎপাদিত তরমুজ পর্যায়ক্রমে ২/৩ বারে তরমুজ উঠাতে হয়। এরপর তা পাঠানো হয় ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান,তার এলাকার ২২ নং পোল্ডার তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। গত বছর ঐ এলাকা থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। দ্বিগুণ আবাদ ও ফলন ভাল হওয়ায় এবছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে তরমুজ চাষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানির জন্য আগ্র হারিয়ে ফেলছেন সেখানকার অনেক কৃষক। বিশেষ করে ২২ নং পোল্ডরের ৫ টি ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে প্রায় ৭ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যরে একটি খাল রয়েছে। জনপদের কৃষকরা বিভিন্ন ফসল আবাদে এই খালের পানি দিয়েই চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। তবে দীর্ঘ দিন সংষ্কারের অভাবে হ্রাস পেয়েছে খালটির পানি ধারণ ক্ষমতা। তাই মৌসুমের শেষের দিকে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষেতের সেচ করাতে অনেক দূর থেকে পাইপ যোগে পানি এনে চাহিদা পূরণ করতে হয় তাদের। এতে খরচের পাশাপাশি ভোগান্তিতে অনেকেই তরমুজ চাষের আগ্রহ হারাচ্ছেন। তার দাবি খালটি খননপূর্বক মিঠা পানির নিশ্চিত উৎস্য তৈরী হলে তরমুজের পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদেও তাদের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রাণ কৃষকরা ঘটাতে পারে এক ভিন্ন মাত্রার বিপ্লব।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএইচ এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন,উপজেলা ঐ অংশে দীর্ঘ দিন যাবৎ তরমুজের আবাদ ভাল হওয়ায় সেখানকার কৃষকরা এখন তিল চাষের পরিবর্তে তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। যে কারণে এবার সেখানে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কৃষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। তার বিশ্বাস,উপযুক্ত পরিবেশ ও দাম ভাল পাওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের কৃষকরা আশা জাগানিয়া তরমুজ চাষে ঘটাতে পারেন এক নতুন বিপ্লব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন