সাতক্ষীরায় সংবাদ সম্মেলন করার অপরাধে প্রতিবন্ধী ভ্যান চালককে লাঞ্চিত : অপমান সইতে না পেরে স্ট্রোকে আক্রান্ত
‘তুই সাংবাদিক সম্মেলন করেছিস, তোর গুরু কিডা, তুই খুব বাড়াইছিস না? তোর এক পা নষ্ট, তোর আর একখান পা ভেঙ্গি দোবো, দেখি তোর কিডা বাঁচায়। এভাবেই চরম হুমকি-ধামকি, গালাগালি ও অপমানজনক কথা-বার্তা বলা হয়েছে প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মোঃ মুনছুর আলীকে। শুধু তাই নয় তাকে গলাধাক্কা ও বার বার মারপিট করতে তেড়ে আসে নেতাদের কথায় জড়ো হওয়া তাদের অনুসারীরা। এসব অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে লোক-লজ্জার চিন্তা-ভাবনায় বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ অসূস্থ হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধী মুনছুর আলী। অবস্থার অবনতি হলে তাকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার সকালে সদর হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথাগুলো বলছিলেন প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মোঃ মুনছুর আলীর প্রতিবন্ধী পুত্র মোঃ সোলায়মান হোসেন।
শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর বাজারের ডিবি ফ্রেন্ডস স্পোর্টিং ক্লাবে পরিকল্পিত এক বৈঠকে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত ৩০ জুন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বড়খামার গ্রামের মোঃ কেরামত আলীর প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মোঃ মুনছুর আলী। মুনছুর আলীর জমির সীমানার ৩টি শিশু চটকা গাছ বড়খামার গ্রামের মৃত ইমান আলীর পুত্র আব্দুল জব্বার, গফ্ফার, জব্বারের পুত্র শহীদুল, এবাদুল, মৃত সোবহান আলীর পুত্র রুহুল আমিন ও রুহুল কুদ্দুস শালিসের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জোরপূর্বক কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের হাইব্রীড নেতা মাহামুদ হোসেন লিটন, সদ্য জামায়াত থেতে আওয়ামী লীগে যোগদানকৃত পাতি নেতা লুৎফর রহমান ও আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে গাছ কাটতে প্রকাশ্যে মদদ দেয়। এসব ঘটনা নিয়েই মূলত প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মোঃ মুনছুর আলী সাংবাদিক সম্মেলন করে। সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই গাছ কাটা বন্ধ হয়ে যায়। ঐদিনই এ নিয়ে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে এক শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিসে সিন্ধান্ত হয়, তারা গাছ কেটে নেবে ও প্রতিবন্ধী মুনছুর আলীকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করবে। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনের এসব সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষিপ্ত ও চটে যায় ওই সমস্ত হাইব্রীড ও পাতি নেতারা। যার ফলে তারা সরাসরি মুনছুর আলীকে টাকা দিতে নিষেধ করে।
এরপরেও অসহায় মুনছুর আলী টাকা নিতে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সহ শালিসদারদের কাছে একাধিকবার টাকা চেয়েও বিমুখ হয়। টাকা দিতে তারা নানান তালবাহানা ও ছলচাতুরী করতে থাকে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম দফাদারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মুনছুর আলীকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে পাঠায় ডিবি ফ্রেন্ডস স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন তাদের অনুসারী ও ব্যাপক লোকজনের উপস্থিতি। এ সময় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক শেখ আব্দুর রশিদ ওরফে মুচি রশিদের নেতৃত্বে পরিকল্পিত বৈঠকে কঠোরভাবে শুনা-বুঝা শুরু হয়। একপর্যায়ে তারই নির্দেশে তার চামচা হাইব্রীড যুবলীগ নেতা লিটন, পাতি নেতা লুৎফর, জব্বারের ভাইপো রুহুল কুদ্দুস, চেয়ারম্যানের ভাইপো বাবু সরদার সহ তাদের অনুসারীরা প্রতিবন্ধী মুনছুর আলী সহ তার সাথে উপস্থিত ভাই শামসুর রহমান ও প্রতিবন্ধী পুত্র সোলায়মান হোসেনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারপিট করতে উদ্যত হয়। প্রতিবন্ধী মুনছুর আলীকে গলাধাক্কা দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। বার বার তারা কথায় কথায় তাদের দিকে হাত উচু করে তেড়ে যায়। টাকা তো দেয়নি বরং তারা তাদের মাধ্যমে চরম অপমান, লাঞ্চনা-গঞ্জনা ও হেনস্তার শিকার হয়। এখান থেকেই বাড়ি ফিরে গিয়ে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়ে অসূস্থ হলে প্রতিবন্ধী মুনছুর আলীকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার স্বজনরা জানায়, সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে। পরিক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
সদর হাসপাতালের ২নং পুরুষ ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে মেঝেতে ফেলে তার চিকিৎসা চলছে। প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মুনছুর আলীর প্রতিবন্ধী পুত্র সোলায়মান জানায়, আমরা অসহায় ও গরীব মানুষ। আমরা কোনো জায়গায় ন্যয় বিচার পাবো না। প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করার অপরাধেই পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে এসব কিছু করা হচ্ছে। সে করুন কন্ঠে আরও জানায়, কে করবে তাদের বিচার? আল্লাই তাদের বিচার করবে। টাকা দেবে না বলেই যত তাল-বাহানা।
মুঠোফোনে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুর রশিদ জানায়, তাকে ডেকে শুনা-বুঝা করা হয়েছে। লিটন, লুৎফর সহ অন্যরা মিলে তাকে ছোট-বড় কথা বলেছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন বিষয়টি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল সাহেবের সামনে বসে মিটানো হবে।
মুঠোফোনে ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনিও একই সুরে কথা বলেন।
সাতক্ষীরার একজন সাংবাদিক জানান, একজন মানুষ যখন কোন উপায় না পায়, তখন সে শেষ ভরসা ও আশ্রয়স্থল হিসাবে সাংবাদিকদের কাছে দারস্থ হয়। তার মানে এই নয় যে সাংবাদিক সম্মেলন করার অপরাধে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী ভ্যানচালক মুনছুর আলীকে লাঞ্চিত করা হবে। তিনি এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ, নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানান। একই সাথে তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যও প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
বর্ণিল সাজে সেজেছে সাতক্ষীরার ৫৮৪টি দুর্গাপূজা মন্ডপ
সনাতন ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব (দূর্গাপূজা) কে কেন্দ্রবিস্তারিত পড়ুন
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন