সংবাদ সম্মেলনে সিইসি : সরকারের চাপ আসলে তা সরাসরি প্রত্যাখান করবো
নির্বাচনে আগামীতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ আসলে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবো বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, আমাদের কাছে সরকার বা কোনো মন্ত্রী, এমপির কোনো চাপ আসেনি। তবে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে চাপ এসেছে, যা সবসময় আসে। কখনও রাজনৈতিক দল পুলিশ বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিষয়ে ফোন করেছি। তখন ভেরিফাই করে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু কখনও সরকারের দপ্তর পক্ষ থেকে আলাদা করে চাপ আসেনি। আগামীতে চাপ আসলে সরাসরি প্রত্যাখান করবো।
বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে ধারাবাহিক সংলাপ শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
গত ১৫ অক্টোবর বিএনপির সাথে সংলাপে সিইসি বিএনপি ও এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ব্যাপক প্রশংসা করেন। জিয়াউর রহমানের ছয় বছরের রাষ্ট্রপরিচালনার কধা স্মরণ করে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিএনপিতে দেশের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যোগদান করেন। তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।’ সিইসির এ বক্তব্য ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়। এরপর গত ১৮ অক্টোবর সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের ব্যখ্যা পেয়েছি। তবে সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না।
# জিয়া গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাতা-এ বক্তব্য ধারণ ও বিশ্বাস করি
# বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নিক তা আন্তরিকভাবে চাই
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্টা করেছেন-এমন বক্তব্য এখনও ওউন (ধারণ) করেন কী না- এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, হ্যাঁ। এখনও ওউন করি। আমি বিশ্বাস করি। এটা তথ্য ভিত্তিক বলেছি। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে, জিয়াউর রহমান সাহেব ১৯৭৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নতুন দল গঠন করেছিলেন। তার আগে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র ছিল না। তার আগে (১৯৭৫ সালের আগে) গণতন্ত্র ছিল।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমি বলেছিলাম, গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেছেন, প্রতিষ্ঠা নয়। তার আগে বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল। (জিয়াউর রহমানের সময়ে) গণতন্ত্র আবার ফিরে এসেছে। সেই ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ বহুদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। বহুদল সংসদে যোগ দিয়েছিল। বহু দল সংসদ পরিচালনা করেছিল। কাউকে খুশি করার জন্য, তথ্য ভিত্তিক বলেছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংলাপে আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা চায়নি। তবে আমরা যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমাদের অবস্থান কী। এমন হতে পারে।
সুশীল সমাজের সঙ্গে গত ৩১ জুলাই সংলাপে বসে ইসি। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে দুই দিন, ৪০টি রাজনৈতিক দল, পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করে। প্রায় তিনমাস ব্যাপী সংলাপ গত মঙ্গলবার শেষ হয়। ওই সংলাপের পর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করলো ইসি। এ সময় চার কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আইনে কোনো পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করবেন কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, আইনে পরিবর্তন আনার দরকার নেই। আশা করি বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আমরা আন্তরিকভাবে চাই বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসুক। কারণ বিএনপি একটি বড় দল। আমরা বিশ্বাস করি, আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি প্রস্তাবিত সহায়ক সরকার প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধান পরিবর্তন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এটা রাজনৈতিক বিষয়। এদেশেতো বহুমুখী নির্বাচন হয়েছে। যখন যে সরকার এসে যে নির্বাচন করার দায়িত্ব কমিশনকে দিয়েছে, সেভাবে নির্বাচন করেছে। যেমন বলা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নির্বাচন হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের সময়ে হ্যাঁ, না ভোট হয়েছে। বেসিক ডেমোক্রেসি হয়েছিল। অর্থাৎ যেই সময়ে সরকার যে আইন তৈরি করে দেয়, ইসি সেভাবে নির্বাচন করেছে। সেই আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবিধান মেনে ইসিকে চলতে হয়। এখন পর্যন্ত সংবিধানে যেভাবে আছে, সেভাবে নির্বাচন হবে।
সংলাপে সেনা মোতায়েন, সংসদ ভেঙ্গে দেয়াসহ অনেক প্রস্তাব এসেছে। এমন অবস্থায় সংলাপের পর ইসি ভারমুক্ত হলেন নাকি চাপে আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন শেষ না করা পর্যন্ত আমরা ভারমুক্ত হই না। ভারতো আমাদের উপর থাকবে, চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেগুলো সমাধান করতে হবে।
তফসিলের পর নির্বাচনী পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ মাঠ প্রশাসনের হাতে চলে যায়, তখন প্রশাসনের এসব লোক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মাঠ প্রশাসনের হাতে যাবে না। নিয়ন্ত্রণ যাবে এমন কথার দ্বিমত করি। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির হাতে। তারা আমাদের সহায়ক শক্তি মাত্র। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান বলে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাও নির্বাচনে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য এবং তারা তা করে আসছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের সহযোগিতা নেয় ইসি।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত ২-৩ মাস সময় লাগে। ওই সময়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ জনবল দরকার হয়। এত জনবল স্থায়ীভাবে ইসির নেই। নির্বাচন কমিশনের এত জনবল সারাবছর পোষা সম্ভব নয়, দরকারও নেই। তাই নির্বাচনের সময়ে রিকুজিশন দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি, সেনা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়। তারা নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা করে। তাদের উপর ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকে ও থাকবে। আরপিওতে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেখাকে আইনের ব্যতয় হবে সেখানে আইন অনুযায়ি শাস্তির বিধান কার্যকর করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সংলাপে নারীদের ভূমিকার বিরুদ্ধে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সংলাপে এসেছে রাজনৈতিক দল হিসেবে, সরকার হিসেবে নয়। সীমানা নির্ধারণের আইন প্রণয়নের কাজ করছে। তার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন