রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস-ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গত মে মাস পর্যন্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। এসব রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে অবাধ চলাফেরা করায় এইডস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শুধু কক্সবাজার নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অবস্থানের ফলে স্থানীয় এলাকার ক্ষয়ক্ষতি ও তার প্রভাবসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। গত ২২ মে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এইডসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁদের মতে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর চেয়েও বেশি এইডস রোগী আছে।
জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এইডস ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম মিয়ানমার। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাজারে আটজনই এইডস রোগে আক্রান্ত। এদের পরিবারের সবার মধ্যেই রোগ সংক্রমিত হয়েছে। এর আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগী পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এর মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে ৪ হাজার ৭২১ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে তারা এইডসে সংক্রমিত এ পর্যন্ত ২৪০ জন রোগীকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়ে তাদের জানা নেই। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইডস রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিজেদের এইডস রোগ আছে জানার পরও তারা কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে না। এইডস পরীক্ষার সুযোগ তিনটি সরকারি হাসপাতালে থাকলেও স্বেচ্ছায় কয়েকজন রোহিঙ্গা এসেছে। তারা মোটেও স্বাস্থ্যসচেতন নন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা ২৪০ জনকে শনাক্ত করেছি, যারা চিকিৎসা নিচ্ছে। এ সংখ্যা যেন বাড়ে, সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের এইচআইভি বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে।’
তবে এর আগে সদ্য অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেছেন, জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে সে সময় বলেন, এখন বড় চ্যালেঞ্জ এইচআইভি-সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা নিয়ে।
জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মিয়ানমারে জনসংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে এইচআইভি নিয়ে বসবাসকারী মানুষ ২ লাখ ৩০ হাজার। আর দেশটির এইচআইভি বহনকারীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ৷ সেই হিসাবেও ছয় হাজার রোহিঙ্গা এইচআইভিতে আক্রান্ত, তা বলা যায়৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখনো কক্সবাজারে রয়েছি। এইডস যেন আরও না ছড়ায়, আমরা সে জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে কোনো এইডসে আক্রান্ত কেউ যৌনকর্মী হিসেবে ওই পেশায় ঢুকে গেলে বিষয়টি আরও ভয়াবহ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এইডস রোগীরা কেউ যেন অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
এদিকে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অবস্থানের ফলে স্থানীয় এলাকার ক্ষয়ক্ষতি ও তার প্রভাবসংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্য ২ হাজার ৬৪৫ জন যৌনবাহিত, ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৬৬ জন ম্যালেরিয়া, ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮২ জন ডায়রিয়া রোগাক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৭৬ ও এইচআইভি পজিটিভ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১১২।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন