কলম থেকে কলাম...
‘ভূয়া’ সংবাদিকদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে
সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। এই আয়নায় সমাজের চালচিত্র তুলে ধরতে ভূমিকা পালন করেন সাংবাদিকরা। এজন্য সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে সহায়তা করাসহ সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করাই হচ্ছে সাংবাদিকদের কাজ।
সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন অনেক কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। আবার অন্য পেশার পাশাপাশি অবসরে শখের বসে সাংবাদিকতা করছেন অনেকেই। অর্থ উপার্জন উদ্দেশ্য নয়, তাদের লক্ষ্য থাকে সমাজসেবা। কিন্তু এই মহান পেশাটিকে কলঙ্কিত করছে কিছু দুর্বৃত্ত।
সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম, অসঙ্গতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার কথা যে পেশার মানুষদের, সেই পেশার নাম ভাঙ্গিয়েই কিছু দুর্বৃত্ত অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর চাঁদাবাজি, ফাঁকিবাজী, চিটিংবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
এই অপকর্মের সাথে জড়িত কারা, তাদের পরিচয় কী, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু, কী নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে এই পেশায় এসেছেন তা সচেতন মানুষমাত্রই অবহিত। নিজের নাম ঠিকানা শুদ্ধ বানানে লেখার মতো যোগ্যতা না থাকলেও অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য মূলত: সাংবাদিক পরিচয়ই হয় তাদের মূল পুঁজি। সাংবাদিক নামধারী এসব দুর্বৃত্তের মূল উদ্দেশ্য অবৈধ পন্থায় রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা এবং প্রভাব খাটিয়ে আখের গোছানো। আর একশ্রেণির নামসর্বস্ব পত্রিকার সম্পাদক বা অনলাইন মিডিয়ার কর্ণধার সাংবাদিক নামধারী দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কারখানা হিসেবে করেছেন। সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হোক তাতে তাদের কিছু এসে যায় না। কারণ তাদের মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে কোন সাংবাদিককে একটি টাকাও বেতন-ভাতা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, উল্টো কার্ডবাণিজ্য করে কিছু অর্থ হাতিয়ে নেয়া যায়।
অপরদিকে, কিছু টাকা যোগাড় করতে পারলেই সাংবাদিকতা পেশায় নাম লেখানো যায়, এটা বুঝে গেছে ধান্ধাবাজ শ্রেণি। তাই অনেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খ্যাত-অখ্যাত একাধিক গণমাধ্যমের আইডি কার্ড ম্যানেজ করে বুকে পিঠে ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। যারা পেশাদার সাংবাদিক তাদের কারো না কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে সাইনবোর্ড হিসেবেও মাঝে মাঝে ব্যবহার করেন তারা। সম্ভব হলে সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনে নিজের নামটা লিখিয়ে নেন। তা না হলে নিজেরাই কোন না কোনো ক্লাব, সমিতি, সংস্থা বা ইউনিটি নাম দিয়ে ভূইফোঁড় সংগঠন খুলে বসে যান। বর্তমানে পেশাজীবী সংগঠন গড়তে বা বৈধতা পেতে আলাদা কোনো নিয়ম কানুনের দরকার পড়ে না, সরকারি কোনো অনুমোদনেরও প্রয়োজন পড়ে না। আর সেই সুযোগ টা কাজে লাগাচ্ছে ওই মহলটি।
পরিচয় খুঁজতে গেলে তারা যেসব সংগঠনের নাম উচ্চারণ করেন বা যেসব নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার নাম বলেন তার উপরে প্রশ্ন করার আর কোন জায়গা থাকে না। কোন সংবাদ লেখার যোগ্যতা নেই বা প্রয়োজন নেই। কারও কারও সংবাদ প্রেরণের প্রয়োজন থাকলেও অন্যের পত্রিকা থেকে কপি করে চালিয়ে দেন। তাই তো চা-পানের দোকানী, ভ্যানচালক, ট্রাকের হেলপার, তরকারি বিক্রেতা কিংবা পাড়া মহল্লায় ফেরি করে বেড়ানো ব্যবসায়ীরাও তথাকথিত সাংবাদিক সেজে সাধারণ নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে টুপাইস ইনকামের ধান্ধায় নেমেছে। সমাজের ক্ষতিগ্রস্থ, বিপদগ্রস্থ ও দিকভ্রান্ত মানুষগুলোর নিকট থেকে দিবানিশি অর্থ হাতিয়ে নেয়াই এই নামধারী সাংবাদিকদের মূল উদ্দেশ্য। এরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য নয়, শিকার সংগ্রহণের জন্য মুখিয়ে থাকে সর্বদা। এজন্য এদের অবস্থান হয় থানার সামনে চা-পানের দোকানে, উপজেলার কিছু চিহিৃত অফিস কিংবা হাসপাতালের মূল গেটের সামনে। সর্বদা অপেক্ষা করে কখন মিলবে কাঙ্খিত কাস্টমার। আবার কোথায় সরকারি রাস্তার পাশে গাছ কাটা হচ্ছে, কোথায় অনিয়ম করে রাস্তা নির্মাণ করছে ঠিকাদার, কোথায় বেকারীর সামগ্রীতে ভেজাল মিশানো হচ্ছে, কার বাড়িতে চিংড়িতে পুশ হচ্ছে, কোথায় কাঠ পুড়িয়ে পাজায় ইট পোড়াচ্ছে এসব অনুসন্ধানের জন্য তাদের লাগানো রয়েছে সোর্স। এসব খুঁজে বের করা মন্দ কিছু নয়। তবে এসব অনিয়মের তথ্য তো খবরের কাগজের পাতায় ছাপিয়ে বা স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে তাদের দেখা যায় না। বরং ভয়ভীতি দেখিয়ে পকেট ভরানোই তাদের আসল উদ্দেশ্য। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা যত বেশী হবে, ওই তথাকথিত সাংবাদিকদের পকেট তত বেশী গরম হবে। বেশীর ভাগ সময় শোনা যায়, টার্গেট ঠিক করে অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের পাশে চলে যাবেন ৩/৪ জনের সাংবাদিক টীম। পোশাক পরিচ্ছদে মোটামুটি ফিটফাট। কলম নোট প্যাডতো থাকে, আরও থাকে ক্যামেরা, চ্যানেলের ব্যুম বা মাইক্রোফোনসহ প্রয়োজনীয় নানা উপাদান। কিছু বুঝে উঠার আগেই অপরাধকর্মের ভিডিও চিত্র ধারণ শুরু করেন তারা। সেই সাথে শুরু করেন বক্তব্য ধারণ। কিন্তু ক্যামেরায় ধারণকৃত এসব চিত্র বা বক্তব্য যে কখনও কোন পত্রিকার পাতায় বা স্যাটেলাইট চ্যানেলে কোনদিন কেউ দেখার বা শোনার অবকাশ পাবে না সেকথা তো অপরাধী ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারে না।
এক্ষেত্রে গরম সাংবাদিক বা ক্লাইম রিপোর্টার পরিচয় দানকারী অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করবেন। আর পরিবেশ সৃষ্টি করে অপরাধীকে রক্ষাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দর কষাকাষি করে অপরাধ থেকে শুদ্ধতার সার্টিফিকেট প্রদান করবেন চাঁদাবাজ ধান্ধাবাজ গ্রæপের মধ্যে থাকা নরম মেজাজের কেউ কেউ। শেষমেষ যা হবার তাই। সাংবাদিকবৃন্দ কত হাতিয়ে নিতে পারেন, আর অনিয়মকারী যত কমে রফা করে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন, চলে সেই প্রতিযোগিতা। অনেক সময় ছিনতাই বা চাঁজাবাজি করতে যেয়ে এই জাতীয় সাংবাদিকদের হাতেনাতে ধরা পড়তেও দেখা গেছে। হাজতবাস শেষে তারা আবারও জড়িয়ে পড়ে একই অপকর্মে।
এদিকে, এসব ভড়ং সাংবাদিকদের সাথে অসাধু কিছু পুলিশের সখ্যতা গড়ে উঠতে দেখা যায়। খাতিরটা সৃষ্টি হয় মূলত: তদ্বিরবাণিজ্য এবং পরস্পরের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আর সেটা সংবাদ সংগ্রহের জন্য নয়, বরং নামধারী অনেক সাংবাদিককে তাদের বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনদের ব্যক্তিস্বার্র্থে।
সূত্র : বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
১৪ জুলাই: যবিপ্রবির ল্যাবে সাতক্ষীরা জেলার ৩০ জন করোনা পজিটিভ!
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে ১৪ জুলাই,২০২০বিস্তারিত পড়ুন
‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে’: লুৎফুল্লাহ এমপি
সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেছেন- ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও উন্নয়নবিস্তারিত পড়ুন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন
কলারোয়ার দমদম বাজার মার্কেটের বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন