৭ দফায় খালেদার মুক্তির দাবি
বি চৌধুরী বাদ, বিএনপিকে নিয়ে কামালের নতুন জোট
এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠিত হয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনে কয়েক মাসের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে দিনভর টানাপড়েনের পর শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে এই জোটের ঘোষণা আসে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ঘোষণা পড়ে শোনান মান্না, যিনি বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টেরও সদস্য সচিব।
যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে, যিনি গত কয়েক মাস ধরে কামালের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকালে কামালের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে বি চৌধুরীর বাড়িতে আলাদা সংবাদ সম্মেলন থেকে ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্টের জন্য দায়ী করা হয় প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনকারীদের।
বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি জামায়াত ছাড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে শুধু তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য তাদের সঙ্গে ঐক্য গড়বে না বি চৌধুরীর দল।
বাড়ির ফটকে থেকে ফেরার সময় বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।”
বি চৌধুরীসহ বিকল্প ধারার নেতারা যখন বেইলি রোডে কামালের বাড়ির ফটকে ছিলেন, তখন মতিঝিলে নিজের পেশাগত চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে বৈঠকে ছিলেন কামাল।
সেখানে বৈঠকের পর এক সঙ্গে প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কামাল বলেন, বি চৌধুরী অনুপস্থিত থাকলেও তার আশা ছাড়ছেন তারা।
“আজকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি, যুক্তফ্রন্টের আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না আছেন। আমরা আশা করি বি চৌধুরী ও মান্নান (এম এ মান্নান) সাহেব এর সাথে যুক্ত হবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে কামাল, রব, মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন।
কামাল হোসেনরা যেমন বি চৌধুরীর জন্য তাদের দরজা বন্ধ করেননি; তেমনি বি চৌধুরীরাও ঐক্য প্রক্রিয়া একেবারে বাদ না দেওয়ার কথাই বলেছেন।
তবে জোট শরিক অন্য দুই দলের নেতা রব, মান্নার প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাহি বলেন, “তারা তারা সেখানে পরকীয়া করতে গেছেন।”
গত বছরের এপ্রিল মাসে বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা, রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। বি চৌধুরী হন জোটের চেয়ারম্যান, মান্না হন সদস্য সচিব। শুরুতে আবদুল কাদের সিদ্দিকী এই জোটে থাকলেও পরে সরে যান।
অন্যদিকে গণফোরাম সভাপতি কামাল কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন, যার সদস্য সচিব হন মোস্তফা আমিন।
দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জনের পর বি চৌধুরী যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের কামালও ওই নির্বাচনে অংশ নেননি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ইসি পুনর্গঠনের ৫ দফা দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন চালাতে একমত হন বি চৌধুরী ও কামাল।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর একযোগে আন্দোলনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক এই দুই নেতা। এরপর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকটি কর্মসূচিও একসঙ্গে পালন করেন তারা। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি তোলা বিএনপির নেতারাও তাদের একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এরপর বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি আসে আলোচনায়। তখন এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে আসার শর্ত বিএনপিকে দেয় বি চৌধুরীর দল বিকল্প ধারা।
জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যেই ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চূড়ান্ত করতে শনিবার বিকালে কামাল হোসেনের বাড়িতে বৈঠকের সময় ঠিক হয়। এই বৈঠকে বসার কথা ছিল যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি নেতাদের।
বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি চৌধুরী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান ছেলে মাহি বি চৌধুরীকে নিয়ে। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ দেখে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে থেকে ফিরে যান তারা।
মাহি সাংবাদিকদের বলেন, “বাসায় দাওয়াও দিয়ে গেইট খোলার কেউ নেই! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডেকে এক রকম ব্যবহার কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।”
এদিকে তখন মতিঝিলে নিজের চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে কামালের বৈঠকের পর তারা জানান, সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এই ‘জগাখিচুড়ি ঐক্য’ টিকবে না।
প্রক্রিয়া শুরুর মাস না গড়াতেই বি চৌধুরী ও কামালের সম্পর্কের এই ফাটল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্য করল।
৭ দফায় এল খালেদার মুক্তির দাবি
বি চৌধুরীর সঙ্গে মিলে কামাল হোসেন যে ৫ দফা দিয়েছিলেন, তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরাসরি না থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার শুরুতেই এসেছে তা।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ দফার দেওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৭ দফা দেওয়া হয়েছিল, তার প্রথমেই তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদার মুক্তির দাবিটি ছিল।
নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা
# অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
# গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
# বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
# কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।
# নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্য্ন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
# নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর ওপর কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
# তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
সেই সঙ্গে সংসদ ও সরকারে এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ ১১ দফা লক্ষ্যের কথাও ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ফ্রন্টের ঘোষণা দিয়ে কামাল বলেন, “আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, কোনো দলের স্বার্থে নয়, জাতির স্বার্থে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। জনগণের অধিকার, জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আজকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আশা করছি এটা সফল হবে।”
এই জোটে অন্যদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সংগঠন, পেশাজীবী, মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক ব্যক্তিগণ সকলে এই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হবেন বলে আমি আশা করছি।”
নতুন জোটের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ঘোষণা করে মান্না বলেন, “দেশে এক দুঃসহ যাতনে পিষ্ট সিন্দাবাদের দ্বৈত ঘাড়ের ওপরে বসে আছে। এই স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই আজ থেকে শুরু হল। আমরা ধীরে কর্মসূচি দেব।”
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ সারাদেশে একযোগে সফর শুরু করবেন বলে জানান জেএসডির সভাপতি রব।
তিনি বলেন, “আমরা শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করব। কূটনীতিকদের সাথে আমরা মতবিনিময় করব, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করব, সকল পেশার মানুষের সাথে আমরা আলোচনা করব।”
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন