বাবার কোলে চড়ে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ধুনটের নাইছ
প্রতিবন্ধকতা হাসি মুখেই জয় করেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার নাইছ খাতুন। বাঁ হাতের শক্তি ও মনোবল নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
নাইছ খাতুন রাতদিন পরিশ্রম করে শারীবিক প্রতিবন্ধকতা পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল ঠিক থাকলে স্বপ্নগুলো এক সময় বাস্তবে পরিণত হয়। এমনটাই করে দেখিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুন। প্রতিবন্ধকতা জয় করে সে এবার বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয় থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
নাইছ খাতুনের দুটো পা থাকলেও সেগুলোতে বল পায় না। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাঁ হাত। এনিয়েই চলছে তার নিরন্তন লড়াই। শারীরিক প্রতিন্ধকতার কাছে হার না মানা নাইচ খাতুন বাবার কোলে চড়ে সোমবার ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এসেছিল এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে। সে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
নাইছ খাতুনের বাড়ী বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরগাছা গ্রামে। তার বাবা নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক ও মা আকতার জাহান গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইচ ছেট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা ফসলি জমির ওপর চলে লেখাপড়া ও সংসার।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নজরুল ইসলাম তাকে কোলে তুলে নিয়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজর ১২১ নং কক্ষের একটি ব্রেঞ্চে বসে দিয়েছেন। সেখানে বসে বাঁ হাত দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই লিখছে খাতায়। প্রতিবন্ধী হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট পর পরীক্ষা শেষে আবার একইভাবে তাকে বাড়ি ফিরে নিয়ে গেলেন তার বাবা।
নাইচের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও একটি হাত অচল। একারণে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। তারপরও সে লেখাপড়া করতে চায়। তাই কোলে তুলে নিয়ে বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়েছেন। এভাবেই সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫৫ পেয়েছে। এবার সে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। নাইচের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কছে গিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি।
নাইচ খাতুন বলেন, আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল নিয়েই এক হাত দিয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেছি। এবার এইচএসসি পাস করতে পারলে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তবে আমার দরিদ্র পিতার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হবে। তারপরও কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, তার চেষ্টা আছে শিক্ষার প্রতি। প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা তাকে নিয়মের মধ্যে থেকে সহযোগিতা করেছি। সে সময় মত পরীক্ষা কেন্দ্রের হলে আসে। তার বাবা কোলে করে হলে রেখে চলে যায়। পরীক্ষা শেষে তার বাবা আবার কোলে করে বাড়ি নিয়ে যায়।
বগুড়ার ধুনট সরকারি ডিগ্রী কলেজের কেন্দ্র সচিব সহকারী অধ্যাপক ফজলুল হক রঞ্জু জানান, প্রতিবন্ধী হওয়ায় নাইছ খাতুনকে নির্ধারিত সময়ের থেকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তার একটি হাত কাজ করে। এক হাতে পরীক্ষা দেয়া কাষ্টসাধ্য। সে কিছু বাড়তি সময় যেন পায় সে বিষয়ে মৌখিক ভাবে বলেছিল।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
একই রকম সংবাদ সমূহ
‘ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করা হবে’ : নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্ত গঠিতবিস্তারিত পড়ুন
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী
টিকাদানের সাফল্যে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি একটিবিস্তারিত পড়ুন
সর্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার আহ্বান
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে এসেবিস্তারিত পড়ুন